জেসিকা অ্যানে জর্ডন বার্টন মডেলিং থেকে সোজা রাজনীতিতে অংশ গ্রহন করেন ২৬ বছর বয়সে।জন্মগ্রহন করেন ৬ মে ১৯৮৪ সনে।
জেসিকা জন্মসূত্রে অবশ্য বলিভিয়ান নন। ইংল্যান্ডের বাথে তার জন্ম। বাবা-মার বিবাহবিচ্ছেদ জেসিকার জীবনে নতুন মোড় এনে দেয়। বিবাহবিচ্ছেদের পর জেসিকাকে নিয়ে তার মা লাতিন আমেরিকায় চলে যান। বলিভিয়ায় স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন তারা। ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে জেসিকাকে নিয়ে হিমশিম খেতেন তার মা। একটা সময় জেসিকাকে মডেলিংয়ের স্কুলে ভর্তি করে দেন তার মা। সে-ই পথচলা শুরু। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জেসিকাকে। ২০০৬ সালে বলিভিয়ার শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর শিরোপা ছিনিয়ে নেন জেসিকা অ্যান্নে। তখন বয়স মাত্র ২২। মিস বলিভিয়া হওয়ার পর থেকেই জেসিকার জীবনে আমূল পরিবর্তন এসে যায়। ওই সময় বলিভিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বেনি প্রদেশে থাকতেন জেসিকা। বেনির পিছিয়ে পড়া অর্থনীতি জেসিকার মনে আলোড়ন তোলে। কিছু একটা করার তাগিদ তাড়িয়ে বেড়াতে থাকে জেসিকাকে। বেনি অঞ্চলের মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে নিঃশঙ্কচিত্তে রুখে দাঁড়ান তিনি। তৈরি করতে থাকেন জনমত। অল্পদিনের মধ্যেই সেজিকা নজরে চলে আসেন বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের। বেনি প্রদেশের উন্নয়নে জেসিকাকে সর্বতোভাবে সাহায্যের আশ্বাস দেন মোরালেস। শুধু তাই নয়, 'মুভিমিয়েন্তো এল সোশ্যালিজম' দলের হয়ে বেনির গভর্নর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুরোধ করেন জেসিকাকে। বামপন্থি প্রেসিডেন্ট মোরালেসের অনুরোধ ফেরাতে পারেননি জেসিকা অ্যান্নে। নির্বাচনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। প্রথমবার রাজনীতির মহারণে জয়ের মুখ অবশ্য দেখতে পাননি। কিন্তু তাতে দমানো যায়নি বিদ্রোহী নারী সত্তাকে। বিরোধীদের সমালোচনার মুখে জল ঢেলে দিয়ে প্রথমবারই ৪০ শতাংশ ভোট ঝুলিতে ভরে ফেলেন। মাত্র ২৯০০ ভোটে বেনির গভর্নর পদে হেরে যান জেসিকা। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেননি। ২০১০-এ ফের বেনির গভর্নর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেসিকা অ্যান্নে। গতবারের জয়ী প্রার্থী আর্নেস্তো সুয়ারেজের বিরুদ্ধেই এবারো প্রার্থী জেসিকা। আর যথারীতি তার পাশে রয়েছেন বলিভিয়ার প্রথম রেড ইন্ডিয়ান প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস।
এবার জয়ের ব্যাপারে অনেক আশাবাদী জেসিকা। তবে, মডেল থেকে রাজনীতিবিদে উত্তীর্ণ সুন্দরীর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পোড়খাওয়া দক্ষিণপন্থি গভর্নর আর্নেস্তো সুয়ারেজ স্বয়ং।
জেসিকার জনপ্রিয়তাকে সমীহ করছে বিরোধীরা। তাই তার বিরুদ্ধে চলছে নানা অপপ্রচার। জেসিকার বয়স অল্প। তার ওপর সে মডেলকন্যা। সুতরাং দেশের শাসনভার চালানোর মতো অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা কোনোটিই নেই তার। এমনই অভিযোগ বিরোধী শিবিরের। সমালোচকদের আরো বক্তব্য, জেসিকাকে সামনে রেখে আসল বেনির ক্ষমতা দখল করতে চান কিউবাপন্থি মোরালেস।
মোরালেস যে তার অনুপ্রেরণা, সে কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন বলিভিয়ান সুন্দরী। জেসিকা বলেন, 'বলিভিয়ার খেটে খাওয়া গবির পরিবার থেকে উঠে এসেছেন মোরালেস। রাজনীতিতে বহু ঝড়-ঝাপটা সহ্য করে বলিভিয়ার ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা করেছেন এই মোরালেসই। ১৮২৫ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই বলিভিয়া শাসন করে এসেছেন দক্ষিণপন্থি সাদা চামড়ার বাবুরা। মোরালেসই প্রথম রেড ইন্ডিয়ান জনগোষ্ঠীর মানুষ, যিনি বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছেন। মোরালেসই প্রথম ব্যক্তি, যিনি বলিভিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইকে সামনের সারিতে নিয়ে এসেছেন। মোরালেসই প্রথম ব্যক্তি, যিনি দেশের বিপুল গ্যাস ভাণ্ডারকে রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ ঘোষণার সাহস দেখিয়েছেন। মোরালেস আমার আদর্শ।
রাজনীতিতে নেমে বেশকিছু শত্রু জোগাড় করে ফেলেছেন জেসিকা। মাদকবিরোধী অভিযানে শামিল হয়ে মাদক কারবারিদের চক্ষুশূল হয়েছেন। প্রাণে মেরে ফেলার বহু হুমকিও পেয়েছেন ইতোমধ্যে। কিন্তু তাতে দমার পাত্র নন জেসিকা। বললেন, 'আমার বড় বড় শত্রু তৈরি হয়েছে। প্রাণে মারার হুমকিও পাচ্ছি। কিন্তু আমি থামব না। কোনোমতেই থামব না। বেনি প্রদেশকে মাদকমুক্ত করবই।' জেসিকার ধনুকভাঙা পণকে ভয় করছেন তার দাদী। জেসিকার কথা থেকেই তা জানা গেল। বললেন, 'আমি যাতে রাজনীতিতে না আসি, সেটাই সব সময় প্রার্থনা করতেন দাদী। কিন্তু ভোটে দাঁড়ানোয় আশঙ্কায় ভুগছিলেন তিনি। হেরে যাওয়ার পর তিনি আমাকে বলেছিলেন, তুই হারায় আমি খুশি। কিন্তু এবার ফের ভোটে লড়ছি শুনে বেশ ভয়ে ভয়ে আছেন দাদী। আমার নিরাপত্তার কথা একটু বেশিই ভাবেন তিনি।'
বর্তমানে জেসিকা অ্যানে বেনির উন্নয়ন অধিকর্তা পদে কর্মরত। মোরালেসই জেসিকাকে ওই পদে বসিয়েছেন। উন্নয়ন অধিকর্তার পদে জেসিকার বসা নিয়েও বিস্তর জল ঘোলা হয়েছে। বিরোধী শিবিরের অভিযোগ_ অনৈতিকভাবে জেসিকাকে ওই পদে বসানো হয়েছে। মোরালেস ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। যদিও মোরালেসপন্থিদের বক্তব্য, আইন মেনেই কাজ হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীকেই প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাবলে বেনির উন্নয়ন অধিকর্তা করা হয়েছে। উন্নয়ন অধিকর্তার পদে বসার আগ থেকেই বেনির উন্নয়নে ঘাম ঝরিয়েছেন জেসিকা। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বারবার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনায় বসেছেন জেসিকা। বেনির উন্নয়নে ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্প জেসিকার উদ্যোগেই অনুমোদন করে বলিভিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার। জেসিকা অ্যান্নে বলিভিয়ার সংবাদ শিরোনামে। নির্বাচনে জয় বা পরাজয় জেসিকার সামনে বড় কথা নয়। উন্নয়নের জন্য কাজ করাই তার প্রধান লক্ষ্য।
জেসিকা জর্ডন
Info Post
0 comments:
Post a Comment