বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায় ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাদের আদিনিবাস ময়মনসিংহ জেলার মসুয়ায়। সুকুমার রায়ের পিতা উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ ও যন্ত্রকুশলী। অস্কারপ্রাপ্ত সত্যজিৎ রায় হলেন সুকুমার রায়ের পুত্র।
সুকুমার রায় প্রবেশিকা পাশ করেন সিটি স্কুল থেকে এবং ১৯১১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অনার্সসহ বিএসসি পাস করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'গুরুপ্রসন্ন ঘোষ স্কলারশিপ' নিয়ে ফটোগ্রাফি ও প্রিন্টিং টেকনোলজিতে উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেতে যান। বিলেতে তিনি প্রথমে লন্ডনে ও পরে ম্যানচেস্টারে স্কুল অব টেকনোলজিতে লেখাপড়া করেন। ম্যানচেস্টারে স্কুল অব টেকনোলজিতে ভর্তি হয়ে তিনি তার পিতার উদ্ভাবিত হাফটোন পদ্ধতি প্রদর্শন করে তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেন। বিলেতে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন বিষয়ে সুকুমার রায় খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট সোসাইটিতে 'স্পিরিট অব রবীন্দ্রনাথ' শীর্ষক একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। যা কোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর বিলেতে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানে বিভিন্ন সভায় বক্তৃতা করার আমন্ত্রণ পান। সুকুমার রায় দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে রয়্যাল ফটোগ্রাফিক্স সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯১৩ সালে দেশে ফিরে তিনি পিতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান 'ইউ রায় অ্যান্ড সন্স'-এ যোগ দেন।
একাধিক গুণের অধিকারী সুকুমার রায় অল্প বয়স থেকেই পিতার অনুপ্রেরণায় মুখে মুখে ছড়া রচনা ও ছবি আঁকার সঙ্গে ফটোগ্রাফিরও চর্চা করতেন। কলেজজীবনে তিনি ছোটদের হাসির নাটক রচনা ও তাতে অভিনয় করতেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের সাথে 'গোড়ায় গলদ' নাটকে অভিনয় করেছিলেন। স্বদেশি আন্দোলনের সময় তিনি বেশ কিছু গান রচনা করেন এবং সেগুলো নিজেও গেয়েছেন। পিতার মৃতু্যর পর তিনি পিতৃপ্রতিষ্ঠিত 'সন্দেশ' পত্রিকা পরিচালনা ও সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন।
প্রেসিডেন্সি কলেজে থাকাকালীন সময়ে সুকুমার রায় 'ননসেন্স ক্লাব' নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এছাড়া বিলেত থেকে ফিরে এসে তিনি 'মালঞ্চ ক্লাব' গঠন করেন। ক্লাবটিতে আলোচনা ও পাঠের সঙ্গে ভুরিভোজের ব্যবস্থা ছিল, তাই অনেকে একে ব্যাঙ্গ করে 'মন্ডা ক্লাব' বলতো। সুকুমার রায়ের প্রধান অবদান শিশু-কিশোর উপযোগী বিচিত্র সাহিত্যকর্ম। তিনি কবিতা, নাটক, গল্প, ছবি_সবকিছুতেই সূক্ষ্ম ব্যঙ্গ ও কৌতুক রস সঞ্চার করতে পারতেন। তার কাজে হাস্যরসের সাথে সমাজসচেতনতাও প্রতিফলিত হয়েছে। সুকুমার রায়ের উলেস্নখযোগ্য রচনাগুলো হচ্ছে_আবোল-তাবোল, হ-য-ব-র-ল, পাগলা দসু্য, বহুরূপী, খাই খাই, অবাক জলপান, শব্দকল্প দ্রুম, ঝালাপালা। এছাড়া হেসোরামের ডাইরি নামে তাঁর একটি অপ্রকাশিত রম্যরচনা রয়েছে। ১৯২৩ সালে সুকুমার রায় মৃতু্যবরণ করেন।
সুকুমার রায়
Info Post
0 comments:
Post a Comment