Breaking News
Loading...
Saturday, January 1, 2011

যে শিশুটি জন্মের সময় ছিল দুর্বল, শীর্ণকায় ও ক্ষুদ্র আকৃতির; যার মাতা তার সন্তানের জীবনের আশা সম্পূর্ণ ত্যাগ করেছিল, অথচ সেদিনের সেই শিশুটিই সবাইকে তাক লাগিয়ে বিজ্ঞান চর্চায় রাখে অনন্য অসাধারণ অবদান। বিজ্ঞানরাজ্যের বিস্ময় জাগানো এই জ্যোতিষ্কটি হচ্ছে স্যার আইজাক নিউটন। তিনি ছিলেন একজন সফল পদার্থ বিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও প্রাকৃতিক দার্শনিক। বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখায় তিনি অবাধ বিচরণ করেছেন।

নিউটন ১৬৪৩ সালের ৪ জানুয়ারিতে (আধুনিক বর্ষপঞ্জি মোতাবেক) ইংল্যান্ডের লিঙ্কনশায়ারের উল্সথর্প নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নামও আইজাক নিউটন ছিল। জন্মের পূর্বেই তার পিতা মারা যায়। তাই তার মা স্বামীর স্মৃতি হিসেবে পুত্রেরও নাম রাখেন আইজাক নিউটন।

গ্রামের পাঠশালাতেই নিউটনের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় এবং বার বছর পর্যন্ত তিনি গ্রামের স্কুলেই লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি প্যানথাম শহরের একটি স্কুলে ভর্তি হন।

ছোটবেলা থেকে তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র তৈরির প্রতি তার ঝোঁক ছিল সবচেয়ে বেশি। ছোটবেলাতেই তিনি উইন্ডমিল, জল-ঘড়ি, সান ডায়াল ইত্যাদি তৈরি করেছিলেন।

এরপর তিনি ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন। ট্রিনিটি কলেজ থেকে ১৬৬১ সালে তিনি মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি কেপলারের আলোক বিজ্ঞান বিষয়ক সূত্রের উপর অধ্যয়ন করেন। এবং পরবর্তীতে তিনি ইউক্লিডের জ্যামিতির প্রতি মনোনিবেশ করেন।

স্নাতক শিক্ষাগ্রহণকালে তিনি বেশকিছু বিষয় নিয়ে নিবন্ধ লেখেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কৌণিক বিভাজন, বক্রসমূহের বর্গকরণ, ভিয়েটা ও ভ্যান স্কুটেনের জ্যামিতিক সমস্যা, গোলীয় আলোক গস্নাসের ঘর্ষণের ফলাফল, লেন্সের ত্রুটি ও সকল ধরনের মূল বের করার সূত্র। ১৬৬৫ সালে নিউটন স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক ডিগ্রি লাভের প্রাক্কালে তিনি দ্বিপদী উপপাদ্য বিষয়ক সূত্র প্রমাণ করেন এবং ফ্লাকসিয়নের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এ ছাড়া কঠিন পদার্থের ঘনত্ব নির্ণয়ের পদ্ধতিও তিনি আবিষ্কার করেন। ১৬৬৬ সালে মাত্র চবি্বশ বছর বয়সে তিনি মাধ্যাকর্ষণের শক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।

১৬৬৭ সালে তিনি চাঁদ ও অন্য গ্রহ-নক্ষত্রের গতি নির্ণয় করেন। এসব অবদানের জন্য ট্রিনিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ নিউটনকে ফেলো হিসেবে নির্বাচিত করে।

এরপর তিনি আলোর প্রকৃতি ও তার গতিপথ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। আর এ কাজের প্রয়োজনে তিনি তৈরি করেন প্রতিফলক টেলিস্কোপ। ইতিমধ্যে তিনি ট্রিনিটি কলেজের গণিতের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। এ সময় তিনি আলোর বর্ণচ্ছটা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি রয়েল সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হন।

বর্ণতত্ত্ব আবিষ্কার

একদিন এক লোক নিউটনের নিকট এসে ত্রিকোণাকৃতির একটি কাচ দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করল এর দাম কত হতে পারে? কাচটির গুরুত্ব বিবেচনা করে নিউটন বললেন, এর মূল্য নির্ধারণ করা আমার সাধ্যের বাইরে। লোকটি নিউটনের কথা শুনে অস্বাভাবিক চড়া দামে কাচটি বিক্রয় করতে চাইল। কোনো দরদাম না করে নিউটন কাচটি কিনে নিলেন। নিউটনের বাড়িওয়ালা সব কথা শুনে নিউটনকে বোকা বলে আখ্যায়িত করেন। অবশ্য, পরবর্তীতে এই কাচ থেকে তিনি বর্ণতত্ত্ব বা থিওরি অব কালার উদ্ভাবন করেন।

প্রিন্সিপিয়া প্রকাশ

১৬৮৪-১৬৮৬ সালের মধ্যে তার লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের তিনটি খণ্ড রয়েছে।

প্রথম খণ্ড :প্রথম খণ্ডে গতি সূত্র নিয়ে আলোচনা করা হয়। গতি সূত্র তিনটি হলো_

প্রত্যেকটি বস্তু চিরকাল সরলরেখা অবলম্বন করে সমবেগে চলতে থাকে

বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করবে ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে হবে।

প্রত্যেকটি ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

দ্বিতীয় খণ্ড :এ খণ্ডে গ্যাস ও ফ্লুয়িড বস্তুর গতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গ্যাসকে কতকগুলো স্থিতিস্থাপক অণুর সমষ্টি ধরে নিয়ে তিনি বয়েলের সূত্র প্রমাণ করেন। গ্যাসের উপর চাপের প্রভাব বিশেস্নষণ করতে গিয়ে পরোক্ষভাবে শব্দ তরঙ্গের গতিবেগও নির্ণয় করেন।

তৃতীয় খণ্ড :এ খণ্ডে তিনি মাধ্যাকর্ষণের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিষদ আলোচনা করেন। তিনি আবিষ্কার করেছিলেন, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবেই সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহগুলো ঘুরছে। এ ছাড়া তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদ ঘুরছে। দুটি বস্তুর মধ্যে মহাকর্ষীয় বল তাদের ভরের সমানুপাতিক এবং দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব পৃথিবীর ব্যাসার্ধের ষাট গুণ। এই দূরত্ব থেকে চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। এ ছাড়া তিনি লক্ষ করেছিলেন, সূর্য ও গ্রহগুলির মধ্যে প্রত্যেকটি গ্রহ ও তাদের উপগ্রহগুলোর মধ্যে পৃথিবী, সমুদ্র ও চাঁদ এবং সূর্যের মধ্যে এমনকি জোয়ার-ভাটা ও সাধারণভাবে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যে একই মহাকর্ষ তত্ত্ব কার্যকর।

শেষ জীবন

১৭২৫ সালের পর নিউটনের শরীরের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। ১৭২৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি শেষবারের মতো রয়েল সোসাইটির সভাপতি হিসেবে কার্য পরিচালনা করেন। অবশেষে ১৭২৭ সালের ২০ মার্চে ৮৫ বছর বয়সে তিনি মৃতু্যবরণ করেন। এর সাতদিন পর তাকে ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেতে সমাধিস্থ করা হয়। মহাজ্ঞানী নিউটন মৃতু্যর কিছুকাল পূর্বে লিখেছিলেন_'আমি জানি না বিশ্বের কাছে আমি কিভাবে উপস্থাপিত হয়েছি, কিন্তু আমার কাছে আমার নিজেকে মনে হয় এক ছোট বালক, যে কেবল সমুদ্র উপত্যকায় খেলা করছে এবং একটি ক্ষুদ্র নুড়ি বা ক্ষুদ্রতর এবং খুব সাধারণ পাথর সন্ধান করছে, অথচ সত্যের মহাসমুদ্র তার সম্মুখে পড়ে রয়েছে।'



এ ক ন জ রে

০০ ১৬৭১ সালে তিনি লন্ডনের রয়াল সোসাইটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

০০ ১৬৭২ সালে বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ 'আলোক বিজ্ঞান' প্রকাশিত হয়।

০০ ১৬৮৪-১৬৮৬ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'প্রিন্সিপিয়া' প্রকাশিত হয়।

০০ ১৬৮৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

০০ ১৬৯৬ সালে সরকারি টাকশালের ওয়ার্ডেন এবং পরে প্রধান পদ লাভ করেন।

০০ ১৭০৩ সালে রয়াল সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হন।

০০ ১৭০৫ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত হন।

সূত্রঃ ইত্তেফাক

0 comments:

Post a Comment