Breaking News
Loading...
Saturday, May 5, 2012

হিলারি ক্লিনটন। পুরো নাম হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন। তিনি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। আর বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীর তালিকায়ও তার নাম একেবারে উপরের দিকেই রয়েছে। তবে তিনি কেবল আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেই বিখ্যাত হয়েছেন তা নয়, এর আগে থেকেই তিনি বিশ্ববাসীর কাছে এক পরিচিত নাম। কারণ তিনি আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী। আর ফার্স্টলেডি থাকাকালীন থেকেই বিশ্বনেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন হিলারি ক্লিনটন। বিয়ের আগে তার নাম ছিল হিলারি ডায়না রডহ্যাম। বিয়ের পর নামের সঙ্গে ক্লিনটন যোগ হয়। হিলারির জন্ম ১৯৪৬ সালের ২৬ অক্টোবর আমেরিকার শিকাগো শহরে ইলিয়নসের একটি হাসপাতালে। তার বাবা রডহ্যাম ছিলেন টেঙ্টাইল ব্যবসায়ী। আর মা ডরোথি এমা হোয়েল ছিলেন গৃহিণী। হিলারির পরিবারে তিনিই ছিলেন বড় সন্তান। আরও দুই ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ইলিয়নসে কাটে হিলারির শৈশব।
ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন হিলারি। পার্ক ব্রিজে তার স্কুলের শিক্ষকরা হিলারিকে খুবই পছন্দ করতেন। শুধু পড়ালেখাই নয়, ছোটবেলায় সাঁতার, বেসবলসহ অন্যান্য খেলাধুলায়ও ছিলেন নিয়মিত। ন্যাশনাল মেরিট ফাইনালিস্ট হিসেবে হিলারি তার হাইস্কুল জীবন শেষ করেন। রাজনৈতিকভাবে রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা হিলারির মা চাইতেন হিলারি তার নিজের মতো স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠুক। সে তুলনায় হিলারির বাবা অনেকটাই রক্ষণশীল ছিলেন। এরপরও থেমে থাকল না মেধাবী-প্রত্যয়ী হিলারির পথচলা। এরপর সদ্য স্কুল পেরুনো তরুণী হিলারি ১৯৬০-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ১৯৬৫ এর দিকে উইলিসলি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে কলেজ শেষ করেন হিলারি। আর তখন থেকেই কলেজের তরুণ রিপাবলিকান দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন হিলারি। এর মধ্যেই আমেরিকান সিভিল রাইট মুভমেন্ট ও ভিয়েতনাম যুদ্ধ হিলারির রাজনৈতিক দর্শনে পরিবর্তন আনে। এরপরও তিনি মিয়ামিতে ১৯৬৮ সালে রিপাবলিকানদের জাতীয় কনভেনশনে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হন। এখানেও তার সাফল্য ছিল গগণচুম্বী। তবে এই পড়া চলাকালীন বিল ক্লিনটনের সঙ্গে পরিচয় হয় হিলারির। আর সেই পরিচয় এক সময় রূপ নেয় প্রেমে। ১৯৭৫-এর গ্রীষ্মে হিলারি ও ক্লিনটন একটি বাড়ি কিনলেন এবং সে বছরই ১১ অক্টোবর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরবর্তী জীবন শুরু করেন। ক্লিনটনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও তখন উঠতি। এর মধ্যেই আরাকানসাসের অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন হিলারি। এরপর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে উঠে আসে বিল ক্লিনটনের নাম। এক সময় তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিতও হন। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের ক্ষমতায় আসার পেছনে তার স্ত্রী হিলারির অবদান অনস্বীকার্য। আমেরিকার কম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য আরাকানসাসের গভর্নর ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হওয়ার পেছনে হিলারির আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অবদান অনেকখানি। দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক শেষে সংসার শুরু করেছিলেন তারা। বৈবাহিক জীবনে হিলারি অন্য কারও সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন এমন কোনো কানাঘুষা কখনো শোনা যায়নি। আইনজীবী ও মানবাধিকার নেত্রী হিলারির পরামর্শ ক্লিনটনকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। কিন্তু এরপরও ক্লিনটন ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ততার পরিচয় দেননি। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মনিকা লিউনস্কি নামের অধস্তন এক কর্মীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ক্লিনটন। এ সম্পর্ক হিলারির সঙ্গে ক্লিনটনের দাম্পত্য জীবনকেও হুমকির মধ্যে ফেলে। ক্লিনটন মনিকার সঙ্গে তার দৈহিক সম্পর্কের কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে স্বীকার করতে বাধ্য হন। পশ্চিমা সমাজ নারী-পুরুষের সম্পর্ককে স্বাভাবিক চোখে দেখলেও কিন্তু মনিকার সঙ্গে সম্পর্ক গোপন করাকে তারা প্রেসিডেন্টের অসততা হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে নামাতে ইমপিচমেন্টের আশ্রয় নেন। আর স্বামীর এ বিপদের দিনে পাশে এসে দাঁড়ান হিলারি। মনিকার সঙ্গে সম্পর্ক ফাঁস হওয়ার পর হিলারি একসময় বিবাহ বিচ্ছেদের কথা ভাবলেও শেষ পর্যন্ত ক্লিনটনের প্রতি তার ভালোবাসারই জয় হয়। এর মধ্যেই কেটে যায় অনেক দিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেন বারাক ওবামা। আর তার মন্ত্রিসভায় যুক্তরাষ্ট্রের ৬৭তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে নতুন করে আলোচনায় উঠে আসেন সাবেক মার্কিন ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটন। এরই মধ্যে পরবর্তী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছিল হিলারির নাম। খোদ নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা-কর্মীরা ওবামার ওপর আস্থা হারিয়েছেন। তাদের ধারণা, হিলারি যদি প্রেসিডেন্ট হতেন, মার্কিন অর্থনীতির জন্য সেটা মঙ্গলের হতো। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে হিলারি ২০১২ সালের নির্বাচনে না দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তার ভক্তদের আশা, তিনি তার সিদ্ধান্ত বদলাবেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাদের বিশ্বাস, দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে ও বাস্তবনীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এবং দলের জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ন রাখতে আগামী নির্বাচনে হিলারিই ভরসা।

রণক ইকরাম

0 comments:

Post a Comment