বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) ৪৭১ হিজরীর রমজান মাসে ইরাকের জিলান নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সাইয়েদ আবু সাহেল মুসা জঙ্গী দোস্ত, মাতার নাম ফাতেমা। আবু মোহাম্মদ তাঁর কুনিয়াত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক তাকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছেন। কেউ তাকে বলেছেন গাউসুল আযম। বাংলাদেশের সকল মুসলমান তাকে বড়পীর বলে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন। আরবরা তাকে মহিউদ্দীন খেতাব দান করে থাকে। বড়পীরের প্রকৃত নাম হলো আবু মুহাম্মদ আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.)। বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) এলমে তাসাউফের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি এলমে শরীয়ত, মায়ারেফাত, হাকীকত ও তরিকতের সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। সকল যুগের, সকল শতাব্দির অলিরা আব্দুল কাদির জিলানীকে (রহ.) অলিকুল শিরোমণি হিসাবে স্বীকার করেন এবং শ্রদ্ধা ও ভক্তি করেন। বাল্যকাল হতেই আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) অত্যন্ত মেধাবী ও স্মরণশক্তির অধিকারী ছিলেন। এ মহান অলি কুরআন ও হাদিসে পারদর্শী হওয়ার জন্য ৪৮৮ হিজরীতে বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান হতে তিনি কুরআনের তাফসীরে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। এসময় তাঁর অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ সৃষ্টি হয়। তিনি মুসলিম জাতির জন্য বেশ কয়েকটি কিতাব রচনা করেন। এ সকল কিতাবের মধ্যে ‘ফুতহুল গায়েব’ ‘গুনিয়াতুত তালেবিন’ ‘ফতহুর রাব্বানী’ ‘কাসিদায়ে গাওসিয়া’ বিখ্যাত। এ সকল সুবিখ্যাত কিতাব মুসলমান জাতির আগামীদিনের পাথেয় হয়ে থাকবে। বড়পীর তাঁর অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদদের এই বলে সতর্ক করে দেন, কখনো মিথ্যা বলো না। আল্লাহর সাথে শিরক করো না। আল্লাহর নামে শপথ/কসম করো না। ঐতিহাসিক ফরিদউদ্দিন সাত্তার (রহ.) তাজকেরাতুল আউলিয়া গ্রন্থে লিখেন: বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) ইতিহাসে, সাহিত্যে, ভূগোল ও দর্শনশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) শুধু ধর্মীয় জ্ঞানে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি সকল বিষয়ে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। ঐতিহাসিকরা বলে থাকেন, বড়পীরের জীবনে সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো তিনি সমগ্র জীবন ইসলামী শরীয়তের ভেতর থেকেছেন। রাতভর আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থেকেছেন। বাগদাদ ও পারস্যের ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি সারারাত নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকতেন। বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) ইসলামী শিক্ষাকে প্রসারের জন্য মাদ্রাসা স্থাপন করেন। এ মাদ্রাসার নাম মাদ্রাসা-ই-কাদেরীয়া-ফরিদউদ্দিন সাত্তার।
৬৬২ হিজরী ১১ রবিউস সানিতে ৯১ বছরে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
লেখক: গোলাম আশরাফ খান উজ্জল | ইত্তেফাক
0 comments:
Post a Comment