Breaking News
Loading...
Monday, July 23, 2012

মার্কিন বিদেশনীতির কট্টর সমালোচক, বামঘেঁষা, আপসহীন তীক্ষ্ণ লেখনীর অধিকারী জনপ্রিয় সাংবাদিক-সম্পাদক আলেক্সজান্ডার কোবার্ন ১৯৪১ সালের ৬ই জুন স্কটল্যান্ডে তাঁর জন্ম হলেও আলেক্সজান্ডার কোবার্ন জন্মগতভাবে ছিলেন আইরিশ। বড় হয়েছেন আয়ারল্যান্ডে, পড়াশুনা অক্সফোর্ডে। তাঁর বাবা ক্লদ কোবার্ন ছিলেন ইংরাজী সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক, যিনি কমিউনিস্ট হিসাবেও পরিচিত ছিলেন। স্পেনের ফ্যাসিবিরোধী গৃহযুদ্ধের সময় সাংবাদিকতা করতে গিয়ে তিনি ফ্রাঙ্কোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। পরিবারের এই বামপন্থী ভাবধারাতেই বড় হয়েছিলেন আলেক্সজান্ডার কোবার্ন।
লন্ডনে তাঁর সাংবাদিকতা জীবন শুরু করলেও ১৯৭২ সালে আলেক্সজান্ডার কোবার্ন আমেরিকায় চলে আসেন। এখানে ‘নিউ ইয়র্ক রিভিউ অব বুকস্‌’, ‘হার্পার্স’, ‘এস্কোয়ার’সহ বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন তিনি। ১৯৭৩ সাল থেকে ‘দি ভিলেজ ভয়েস’ পত্রিকায় ‘প্রেস ক্লিপস’ শিরোনামে কলম লেখা শুরু করার পরে একজন বামঘেঁষা নিবন্ধকার হিসাবে তিনি সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু মার্কিন সরকারের ইজরায়েলপ্রীতি এবং প্যালেস্তাইন জনসাধারণের দুরবস্থার প্রতি উদাসীন দৃষ্টিভঙ্গির তীক্ষ্ণ সমালোচক হওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষের রোষের মুখে পড়েন তিনি। কর্মচ্যুত হতে হয় তাঁকে।

তবে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ‘দি নেশন’ পত্রিকায় কলম লেখার সুযোগ পান তিনি। তাঁর ‘বিট দ্য ডেভিল’ নামাঙ্কিত কলমে কোবার্ন মার্কিন প্রশাসনের তথাকথিত উদারবাদী মুখোশকে ফালা ফালা করতেন নিয়মিত। বাবার লেখা একটি জনপ্রিয় উপন্যাস থেকে তিনি এই ‘বিট দ্য ডেভিল’ শিরোনামটি নিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে বন্ধু জেফ্রি সেন্ট ক্লেয়ার-এর সঙ্গে যৌথভাবে ‘কাউন্টারপাঞ্চ’-এর প্রকাশ শুরু করেন। তাঁদের সুযোগ্য সম্পাদনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিকল্প ধারার সংবাদ ম্যাগাজিন হিসাবে ‘কাউন্টারপাঞ্চ’-এর জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে।

‘ইরান-কন্ট্রা’ কেলেঙ্কারি থেকে ইরাক আগ্রাসন, লাতিন আমেরিকা থেকে কসভো, প্রতিটি ক্ষেত্রেই যুদ্ধবাজ মার্কিন প্রশাসনের মুখোশ খুলে দিতে আলেক্সজান্ডার কোবার্ন-এর কলম ছিল ধারালো। ‘দি নেশন’ এবং ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ নিয়মিত কলম লিখতেন তিনি। ‘কাউন্টারপাঞ্চ’-এ কোবার্ন-এর সহযোগী সম্পাদক জেফ্রি সেন্ট ক্লেয়ার লিখেছেন: ‘তাঁর শরীর ভেঙে পড়ছিল, কিন্তু তাঁর লেখা ছিল বরাবরের মতই তীক্ষ্ণ, ঝরঝরে এবং মারাত্মক।’ গত ১১ই জুলাই ‘দি নেশন’ পত্রিকায় নির্দিস্ট কলমে তাঁর শেষ লেখা ছিল ‘কালচার অব র‌্যাবিড ক্রিমিনালিটি’ শিরোনামে, যেখানে আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করে তিনি লিখেছেন যে এমনকি কড়া নিয়মকানুন জারি এবং সংস্কার করেও এই ব্যবস্থা টিঁকে থাকতে পারবে না, বিপর্যয় অনিবার্য।

আলেক্সজান্ডার কোবার্ন বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখক। এরমধ্যে ‘স্টুডেন্ট পাওয়ার‘(১৯৬৯), ‘করাপসানস্‌ অব এম্পায়ার’ (১৯৮৮), ‘এন্ড টাইমস্‌: দি ডেথ অব ফোর্থ এস্টেট’ (২০০৬) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাঁর স্ত্রী এম্মা টেনান্ট ১৯৭৩ সালে মারা যান। কোবার্ন-এর একমাত্র সন্তান তাঁর মেয়ে ডেইজি ‌অ্যালিস কোবার্ন।

২১ জুলাই ২০১২ সালে শনিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ৭১ বছর বয়সী আমেরিকার অন্যতম প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংবাদ ম্যানগাজিন ‘কাউন্টারপাঞ্চ’-এর সম্পাদক আলেক্সজান্ডার কোবার্ন। তিনি দু’বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন।


অজয় দাশগুপ্ত

0 comments:

Post a Comment