Breaking News
Loading...
Monday, August 23, 2010

সত্তর দশকের নায়িকা ওলিভিয়ার জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের করাচিতে। ধর্মে তিনি ছিলেন খ্রিস্টান। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। তেরো-চৌদ্দ বছর বয়স থেকে মডেলিং করা শুরু করেন। একটা চাকরি প্রয়োজন ছিল বলেই পূর্বাণী হোটেলের রিসেপশনিস্ট হয়েছিলেন। হোটেল পূর্বাণীর রিসিপশনিস্ট থাকা অবস্থায় অলিভিয়া কয়েকটি বিজ্ঞাপনের মডেল হন।

হোটেল পূর্বাণীতে একবার এসএম শফি এলেন। তিনি অলিভিয়াকে দেখে বললেন, ‘ফিল্মে অভিনয় করবে নাকি!’ কথাটা শুনে অলিভিয়া ভাবলেন, এতদিনের চাওয়া-পাওয়া তাহলে এবার পূর্ণ হবে। শুরু হলো ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ ছবির কাজ। দুজন নায়িকা, দুজন নায়ক। রাজ্জাকের নায়িকা হলেন শাবানা আর ওয়াসিমের নায়িকা হলেন অলিভিয়া। এরপর টাকার খেলা, মাসুদ রানা, সেয়ানা, দি রেইন, বাহাদুর ছবিতে অভিনয় করলেন। এই ছবিগুলো নির্মিত হয় ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে। তখন অলিভিয়ার অসম্ভব খ্যাতি। যখন যেখানে গিয়েছেন সেখানে জনতার ভিড় উপচে পড়ত।
১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত অলিভিয়া-ওয়াসিম জুটি অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল। ওয়াসিমের সঙ্গে ২২টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এই জুটির উল্লেখযোগ্য ছবি হলো—বাহাদুর, বেদ্বীন, লুটেরা, দি রেইন, লাল মেম সাহেব, তকদিরের খেলা, ছন্দ হারিয়ে গেল প্রভৃতি। শুধু ওয়াসিম নন, অলিভিয়া সে সময় প্রবীর মিত্র, মেহফুজ, আজিম, রাজ্জাক, সোহেল রানা, মাহমুদ কলি প্রমুখ নায়কের বিপরীতে রোমান্টিক নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। ‘টাকার খেলা ছবিতে আজিমের বিপরীতেও অভিনয় করেন তিনি। ওই ছবিতে সুজাতাও ছিলেন। ‘পাগলা রাজা’য় তার নায়ক ছিলেন রাজ্জাক। ১৯৯৪ সালে জসিমের বিপরীতে ‘হাতকড়া’ ছবিতে অভিনয় করেন।


একসময় জহির রায়হানের সঙ্গে অলিভিয়ার চেনাজানা হয়। জহির রায়হান তাকে ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ছবিতে নিতে চাইলেন। সব ঠিকঠাক, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ছবিটি থেকে বাদ পড়লেন তিনি। এরই এক বছর পর ১৯৭২ সালে ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ ছবিতে অলিভিয়া নায়িকা হয়ে এলেন। ‘টাকার খেলা’, ‘বাহাদুর’ ও ‘দি রেইন’ ছবি তিনটি করার পর অলিভিয়া ঢাকা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আবেদনময়ী নায়িকা হিসেবে পরিচিতি পেলেন। বাহাদুর ছবিতে অলিভিয়া এতটা খোলামেলা হলেন যে, তাকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। তবে ১৯৭৬ সালে ‘দি রেইন’ ছবিতে অভিনয় করে অসম্ভব খ্যাতি পেলেন তিনি। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল অলিভিয়া নামটি।

অলিভিয়া একযুগেরও বেশি সময় ধরে ফিল্মে নেই। ফিল্মের লোকজনের সঙ্গেও তার যোগাযোগ নেই। একবার অলিভিয়া জানিয়েছিলেন, ফিল্মে যোগ দিয়েছিলাম নেহায়েত শখের বশে। প্রায় ৫৩টির মতো ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছি। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম চিত্র পরিচালক এসএম শফিকে। যদিও আমাদের সন্তানাদি ছিল না, তবুও সুখী হতে পেরেছিলাম। স্বামীর মৃত্যুতে আমি ভেঙে পড়ি। সেই শোকে একদিন ফিল্ম জগত ছেড়ে দিলাম...।

তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি ‘দুশমনি’ মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে। অলিভিয়া অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় আরও রয়েছে—শ্রীমতী ৪২০, চন্দ্রলেখা, শাহাজাদী গুলবাহার, টক্কর, হিম্মতওয়ালী, ডার্লিং, রাস্তার রাজা, বন্ধু প্রভৃতি। এক সময় তিনি দেখলেন, নায়িকা হিসেবে তার বয়স ফুরিয়ে এসেছে। আর তাই তিনি ফিল্ম জগত থেকে সরে দাঁড়ালেন। মা, ভাবী, খালার রোল করবেন না বলেই অলিভিয়া আজ আর ফিল্ম জগতে নেই। ১৫ বছর আগে ফিল্ম জগত থেকে সরে গেলেও কালজয়ী অনেক ছবিতে তার অভিনয় তাকে এখনও স্মরণীয় করে রেখেছে। আর এ জন্য অলিভিয়া কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন।

0 comments:

Post a Comment