বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে লাল-সবুজ পতাকা উড়ালেন নিশাত মজুমদার।
নিশাত মজুমদার ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। নিশাতের ব্যবসায়ী বাবা আবদুল মান্নান মজুমদার একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ডের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব।
মা আশুরা মজুমদার। দুই বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে নিশাতের অবস্থান দ্বিতীয়। পরিবারের সদস্য ও কাছের মানুষের কাছে নিশাত নিশু নামে পরিচিত। নিশাত মজুমদার ১৯৯৭ সালে ঢাকার বটমূলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৯ সালে শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার দফতরে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন।
১৯ মে নেপালের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে নয়টায় নিশাত ২৯ হাজার ২৯ ফুট (৮ হাজার ৮৪৮ মিটার) উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ করেন। বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে নিশাত মজুমদার ও দ্বিতীয়বারের মতো এম এ মুহিতের এভারেস্ট জয়ের খবর দেন। নিশাত ও মুহিত দুই জনই এ ক্লাবের সদস্য। তারা এভারেস্টের দক্ষিণ দিক দিয়ে এই অভিযান সম্পন্ন করেন। তাদের সঙ্গে আছেন মিংমা গ্যালজে শেরপাসহ তিন শেরপা।
নিশাত ২০০৩ সালে এভারেস্ট বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া (৩ হাজার ১৭২ ফুট) কেওক্রাডং জয় করেন। ২০০৬ সালের মার্চে বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে বিএমটিসি আয়োজিত বাংলাদেশের নারী অভিযাত্রী দলের সঙ্গে ফের কেওক্রাডং-চূড়ায় ওঠেন। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বিএমটিসি আয়োজিত নারী অভিযাত্রী দলের সঙ্গে তিনি এভারেস্ট বেস ক্যাম্প (১৭ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা) ট্র্যাকিংয়ে অংশ নেন। ২০০৭ সালের মে মাসে বিএমটিসির অর্থায়নে দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ নিয়ে সেপ্টেম্বরে হিমালয়ের মেরা পর্বতশৃঙ্গ (২১ হাজার ৮৩০ ফুট) জয় করেন নিশাত মজুমদার। পরের বছর মে মাসে হিমালয়ের সিঙ্গুচুলি পর্বতশৃঙ্গে (২১ হাজার ৩২৮ ফুট) ওঠেন। সে অভিযানে পুরো দলের নেতৃত্ব দেন নিশাত। একই বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি ভারতের উত্তর কাশীর গঙ্গোত্রী হিমালয়ের গঙ্গোত্রী-১ পর্বতশৃঙ্গে (২১ হাজার ফুট) বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অভিযানে অংশ নেন। নিশাত ২০০৯ সালের এপ্রিলে পৃথিবীর পঞ্চম উচ্চতম শৃঙ্গ মাকালুতে (২৭ হাজার ৮৬৫ ফুট) ভারত-বাংলাদেশ যৌথ অভিযানে অংশ নেন। ২০১০ সালে তিনি হিমালয়ের নেপাল-বাংলাদেশ মৈত্রী পর্বতশৃঙ্গ (২০ হাজার ৫২৮ ফুট) জয় করেন। গত ২০১১'র অক্টোবরে বিএমটিসি আয়োজিত হিমালয়ের চেকিগো নামের একটি শৃঙ্গেও সফল অভিযানে যান নিশাত।
0 comments:
Post a Comment