Breaking News
Loading...
Wednesday, May 9, 2012

বাংলা সাহিত্যের দিকপাল কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার ও দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ অনুযায়ী ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মে (বাংলা বর্ষপঞ্জির পরিবর্তনে এখন বাংলাদেশে ৮ মে) কলকাতায় জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল ব্রাহ্ম আদিধর্ম মতবাদের প্রবক্তা।রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষেরা খুলনা জেলার রূপসা উপজেলা পিঠাভোগে বাস করতেন।

তাঁর পিতা ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭–১৯০৫) এবং মাতা ছিলেন সারদাসুন্দরী দেবী (১৮২৬–১৮৭৫)। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান। ১৮৭৫ সালে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ ঘটে। পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অতিবাহিত করতেন। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে। শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন করে পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন রবীন্দ্রনাথ।

রবীন্দ্রনাথ তার জীবনের প্রথম কবিতা লিখেছিলেন মাত্র আট বছর বয়সে। ১৮৭৭ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি প্রথম ছোট গল্প এবং নাটক লিখেন। এর আগেই প্রথম প্রতিষ্ঠিত কাব্যের জন্ম দিয়েছিলেন যা ভানুসিংহ ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়। পারিবারিক শিক্ষা, শিলাইদহের জীবন এবং প্রচুর ভ্রমণ তাকে প্রথাবিরুদ্ধ এবং প্রয়োগবাদী হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। তিনি ব্রিটিশ রাজের প্রবল বিরোধিতা করেন এবং মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করেন। তার পুরো পরিবারের পতন এবং বাংলার বিভক্তিরেখার নিদর্শন তাকে দেখতে হয়েছিল।

রবীন্দ্রনাথ মূলত কবি হলেও বাংলা সাহিত্যের সব শাখায় রয়েছে সমান কৃতিত্ব। তিনি একাধারে রচনা করেন কবিতা,ছোটগল্প,উপন্যাস,প্রবন্ধ, পত্রসাহিত্য, নাট্যসাহিত্য,সংগীত, নৃত্যকলা ও চিত্রকলা।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় একক প্রচেষ্টায় বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বসভায় স্বকীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিলেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভের মাধ্যমে। তিনিই সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী প্রথম বাঙালি এবং প্রথম এশীয়। তিনি তাঁর বহুমুখী প্রতিভায় বাংলা কাব্য, উপন্যাস, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ ও সংগীতকে অতুলনীয় সমৃদ্ধি দান করেছেন। চিত্রকলায় সংযোজন করেছেন নতুন মাত্রা। সৃজনশীল কর্মের সমান্তরালে ধর্ম, দর্শন, রাজনীতি, সমাজ উন্নয়ন, পরিবেশ, কৃষি, শিক্ষা ক্ষেত্রেও তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য এখনো প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে। তাঁর রচিত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ আমাদের জাতীয় সংগীত। এ দেশের মুক্তিসংগ্রামে তাঁর গান আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছে। এখনো দুর্যোগ-দুর্দিনে তাঁর রচনা আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।

১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর (২৪ অগ্রহায়ণ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ) ঠাকুরবাড়ির অধস্তন কর্মচারী বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী। ১৯০২ সালে তাঁর পত্নীবিয়োগ হয়। রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনীর সন্তান ছিলেন পাঁচ জন: মাধুরীলতা (১৮৮৬–১৯১৮), রথীন্দ্রনাথ (১৮৮৮–১৯৬১), রেণুকা (১৮৯১–১৯০৩), মীরা (১৮৯৪–১৯৬৯) এবং শমীন্দ্রনাথ (১৮৯৬–১৯০৭)। এঁদের মধ্যে অতি অল্প বয়সেই রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু ঘটে।

১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন।

জীবনের শেষ চার বছর ছিল তাঁর ধারাবাহিক শারীরিক অসুস্থতার সময়। মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ৭ আগস্ট, ১৯৪১ (৮০ বছর)বয়সে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা ভারতে মৃত্যু বরন করেন বাংলার এই কৃতি সন্তান।

0 comments:

Post a Comment