মোহাম্মদ ইদ্রিস বিন মোহাম্মদ আল মাহাদি। যাকে গোটা বিশ্ব চিনে কিং অফ লিবিয়া নামে। ক্ষমতার সর্বোচ্চ চূড়ায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরও একটা সময় নক্ষত্রের পতনের মতো তলিয়ে যায় লিবিয়ার এই রাজা। ইদ্রিসের জন্ম ১৮৮৯ সালের ১২ মার্চ আল জাগবাব, অটোমান সাইরেনাইকাতে। ১৯৫১ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা লিবিয়ার প্রথম এবং একমাত্র রাজা তিনি। এ ছাড়া লিবীয় মুসলমানদের ধর্মীয় গোষ্ঠী সেনাসসিরও প্রধান ছিলেন। সেনাসসি আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র আল জাগবাব নামক স্থানে জন্মগ্রহণকারী এ লিবীয় রাজার পিতার নাম সাঈদ মুহাম্মাদ আল মাহাদি বিন সাঈদ মুহাম্মাদ আল সেনাসসি এবং মায়ের নাম আয়েশা বিনতে আহমেদ আল সার্থি। তার দাদা উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের বিখ্যাত মুসলিম গোষ্ঠী সেনাসসি মুসলিম সুফির প্রতিষ্ঠাতা। ব্রিটিশদের খুব কাছের মানুষ হিসেবে তাদের দেওয়া উপাধি আমির হিসেবে গোটা বিশ্বে তিনি বিশ্বে পরিচিতি পান। ১৯২২ সালের ২৮ জুলাই তাকে আমির অব ত্রিপোলিটানিয়া উপাধি দেওয়া হয়। এই রাজা তার জীবনের প্রথম সময়টা কাটিয়েছেন মাতৃভূমি সাইরেনাইকার স্বাধীনতার জন্য। ১৯২২ সালে ইতালিয়ান আর্মিদের লিবিয়া অভিযানকে কেন্দ্র করে তিনি বিপ্লবী হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি যুক্তরাজ্যের পক্ষ অবলম্বন করেন। কারণ ইদ্রিস লিবিয়ার ক্ষমতা দখলে মরিয়া ছিলেন। তিনি এবং তার সহযোগীরা মিলে জার্মান এবং ইতালিয়ান সৈন্যদের বিরুদ্ধে জোট গঠন করেন। এ জোটের সহযোগিতায় ব্রিটিশ অষ্টম পদাতিক সৈন্যদল উত্তর আফ্রিকাতে জার্মান এবং ইতালিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। আরউইন রোমেলের নেতৃত্বে এই জোট জার্মান এবং ইতালিয়ান বাহিনীকে পরাজিত করতে সমর্থ হয়। এরপর থেকেই তার উত্থান শুরু। অবশেষে বেনগাজিতে পেঁৗছে দাফতরিক সরকার গঠন করেন ইদ্রিস। ১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের সাহায্যের স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাজ্য তাকে অর্ডার অব গ্রান্ড ক্রস পুরস্কারে ভূষিত করে। পরবর্তীতে তিনি পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৪৯ সালে ইদ্রিস লিবিয়ার সংবিধান প্রণয়ন করেন। যা ১৯৫১ সালে অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়। ন্যাশনাল কংগ্রেস তাকে কিং অব লিবিয়া বলে ঘোষণা দেয়। ১৯৫১ সালের ২৪ অক্টোবর তার নেতৃত্বে লিবিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবিভর্ূত হয়। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর তার সুযোগ্য উত্তরসূরি না থাকায় ১৯৬৯ সালে তার ভাইয়ের ছেলে হাসানকে প্রিন্স হিসেবে নিযুক্ত করেন। তবে তার জীবনের শেষভাগটা ছিল নিদারুণ কষ্টের। ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ইদ্রিস যখন তুরস্কের হাসপাতালে চিকিৎসারত তখন একদল সেনা অফিসার নিয়ে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে লিবিয়ার ক্ষমতা দখল করেন কর্নেল গাদ্দাফি। ফলে তার রাজত্বের অবসান ঘটে এবং রিপাবলিক অব লিবিয়ার জন্ম হয়। এ অভ্যুত্থানের খবর পেয়ে রানীকে নিয়ে গ্রিসে পালিয়ে যান ইদ্রিস এবং পরবর্তীতে মিসর থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তোলা হয় লিবিয়ার পাবলিক আদালতে। ১৯৭১ সালে নভেম্বরে ইদ্রিসের ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন আদালত।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
0 comments:
Post a Comment