ফতেহ লোহানীর জন্ম ১৯২৬ সালে কলকাতায়। তিনি একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, সাহিত্যিক, অনুবাদক। দক্ষ আবৃত্তিকার হিসেবেও প্রশংসিত। সাহিত্য শাখায় গল্পকার ও অনুবাদক হিসেবে খ্যাতিমান। মাসিক মোহাম্মদী, সওগাত প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত তার উল্লেখযোগ্য ক’টি গল্প প্রকাশিত হয়। অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মার্কিন লেখক হেমিংওয়ের ‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দি সী’-র বাংলা অনুবাদ।অবশ্য তার পৈতৃক নিবাস পাবনা জেলায়। তাদের পরিবারটি ছিল শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান এক মুসলিম পরিবার। পিতা আবু লোহানী (বি.এ.) ছিলেন কলকাতার বিখ্যাত ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘দি মুসলমান’ (১৯০৬) এর সহকারি সম্পাদক। তার মাতা বেগম ফাতেমা লোহানী ছিলেন কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলের শিক্ষিকা। মাত্র আট বছর বয়েসে পিতার আকস্মিক মৃত্যুর পর কলকাতায় শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয় মায়ের তত্ত্বাবধানে। কলকাতার বিশপ ক্যাথিড্রেল মিশন স্কুল থেকে মাধ্যমিক, রিপন কলেজ থেকে আই.এ. ও বি.এ/ পাস করেন।
কিশোর বয়সেই কলকাতায় মুকুন্দদাসের স্বদেশী যাত্রা দেখে মুগ্ধ হয়ে অভিনয়ের প্রতি অনুরাগ জন্মে। প্রথম অভিনয় কলকাতার বাণী থিয়েটারের মঞ্চে ‘রামের সুমতি’ নাটকে কিশোর রামের ভূমিকায়। কলেজে অধ্যয়নকালে কলকাতার ‘আলোক তীর্থ’, শৌখিন নাট্য সংস্থানে যোগদান করেন। তৎকালীন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার বিমল রায়ের নির্মীয়মান হিন্দি ছবি ‘হোমরাহী’-র একটি ছোট্ট ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য মনোনীত হয়ে কিরণ কুমার নামে ১৯৪৬-এ প্রথম চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রবেশ করেন। হিমাদ্রি চৌধুরী নামে ওবায়দুল হক পরিচালিত ‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া’ (১৯৪৬) ছবিতে অভিনয় করেন।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ঢাকা আগমন করেন। ১৯৫৮ সালে এফ. ডি. সি প্রতিষ্ঠিত হবার পর পূর্ব বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে সংযুক্ত হন। তার নির্মিত প্রথম ছবি ‘আকাশ আর মাটি’। মুক্তিপ্রাপ্ত আশরাফের নির্মিত ছবি, ‘আসিয়া’ (১৯৬০), ও সাতরং (উর্দু-১৯৬৫)। বছরের সেরা ছবি হিসেবে ১৯৬১ সালে ‘আসিয়া’-র প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ। তিনি প্রায় ২৫টি ছবিতে এবং অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন।
উল্লেখযোগ্য ছবি- বেহুলা (১৯৬৬), মায়ের সংসার (১৯৬৯), আঁকাবাঁকা (১৯৭০), স্বরলিপি (১৯৭০), দর্পচূর্ণ-(১৯৭০), দ্বীপ নেভে নাই (১৯৭০), ডাকু মনসুর (১৯৭৪), আলো তুমি আলেয়া (১৯৭৫), এক মুঠো ভাত (১৯৭৫)।
১৯৭৫ সালের ১২ এপ্রিল তিনি চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে নির্মীয়মাণ ছায়াছবির স্যুটিং উপলক্ষে অবস্থানকালে মৃত্যুবরণ করেন।
ফতেহ লোহানী
Info Post
0 comments:
Post a Comment