Breaking News
Loading...
Monday, May 3, 2010

চিকিৎসাশাস্ত্র, মানুষের দেহ আর রোগ নিয়ে যারা গবেষণা করে গেছেন তাদের মধ্যে উইলিয়াম হার্ভে অন্যতম। আজ থেকে প্রায় চারশ' বছর আগে মানুষের দেহের ভেতর রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়াটি তিনিই প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন। ১৫৭৮ সালের ১ এপ্রিল লন্ডনের 'ফোকস্টনে' উইলিয়াম জন্মগ্রহণ করেন। বাবা টমাস হার্ভে ছিলেন ওই শহরের মেয়র ও ধনী ব্যবসায়ী। কিংস স্কুলে তার শিক্ষাজীবনের শুরু। তারপর ১৫ বছর বয়সে তিনি ক্যামব্রিজে পড়তে চলে আসেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক শেষ করেন। এরপর পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে আসেন হার্ভে। তার ইচ্ছা ডাক্তারি, গবেষণা ও অধ্যাপনা তিনটিই একসঙ্গে করার। ১৬০৭ সালে ক্যামব্রিজের চিকিৎসাবিদ্যার কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন হার্ভে। এরপর বার্থোলোসিউ হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তিনি মানুষের শরীরের একটি বিশেষ অংশ হৃৎপিণ্ড ও তার ক্রিয়া নিয়ে খুব ভাবনাচিন্তা শুরু করেন। আর হৃৎপিণ্ড নিয়ে ভাবতে ভাবতেই রক্ত চলাচলের ব্যাপারটা নিয়েও ভাবতে শুরু করেন তিনি। এর আগে রক্ত চলাচল সম্পর্কে কারো সঠিক ধারণা ছিল না। এবার হার্ভে রক্ত চলাচল নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করলেন। নয় বছরের গভীর গবেষণার পর অবশেষে তিনি প্রমাণ করলেন আগের সব ধারণা ভুল। তিনি বের করলেন শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তশিরা পথে হৃৎপিণ্ডে আসে এবং হৃৎপিণ্ড থেকে ধমনির মাধ্যমে বিভিন্ন অংশে সঞ্চালিত হয়। রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে মৃত্যু। গবেষণায় সফল হয়েও তিনি তা প্রকাশ করলেন না। তিনি আলোচনার মাধ্যমে তার মতামত সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কেউ তার কথা বিশ্বাস করলেন না। এ সময় তিনি রাজা প্রথম চার্লসের ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি রাজাকে তার আবিষ্কারের কথা বললেন। রাজা খুশি হয়ে হার্ভের বই বের করার সব ব্যবস্থা করে দিলেন। হার্ভে ১৬২৮ সালে ৭২ পৃষ্ঠার বই বের করলেন এবং তা রাজা প্রথম চার্লসের নামে উৎসর্গ করলেন। বই প্রকাশের পর বিরূপ সমালোচনা হলেও কেউ তার গবেষণাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেননি। চিকিৎসকরাও আন্তরিকতার সঙ্গে বইটি গ্রহণ করেছিলেন। ১৬৫৪ সালে হার্ভেকে রয়াল সোসাইটির সভাপতি পদে মনোনীত করা হয় কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি তা গ্রহণ করতে পারেননি। ১৬৫৭ সালে প্রায় ৮০ বছর বয়সে হার্ভের মৃত্যু হয়। চিকিৎসাশাস্ত্র ও শরীরবিদ্যা তার কাছে চিরদিন ঋণী হয়ে থাকবে।
প্রীতম সাহা

0 comments:

Post a Comment