Breaking News
Loading...
Wednesday, May 5, 2010

শুধু আধুনিক বাংলার প্রথম মুসলিম চিত্রকর হিসেবেই নন, বরং একটি সময় আর চেতনার শক্তিমান ধারক হয়েই বাঙালির মন ও মননকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিলেন কাজী আবুল কাসেম।
কাজী আবুল কাসেম জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৩ সালের ৭ মে যশোর জেলার উমেদপুর গ্রামে। মূলত একটি বড় সময় ধরে কাজী আবুল কাসেমের যে অনুসরণীয় শিল্পচর্চা তার শুরুটা হয়েছিল ত্রিশের দশকের শেষভাগে, কলকাতাতে। সে সময় পরপর দু’বার আর্ট কলেজে ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়ে এক শুভাকাঙিক্ষর পরামর্শ ও সহযোগিতায় এন মিত্র নামের একটি কমার্শিয়াল আর্ট স্টুডিওতে শিক্ষানবিশ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন আবুল কাসেম। এখানেই প্রথম হাতে-কলমে কাজ করার ও কাজ শিখার সুযোগ পান তিনি। ক্রমে ক্রমে যোগ্যতা আর দক্ষতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান চিত্রকর্মী হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। যদিও দিনমান নিজেকে ছকেবাঁধা বাণিজ্যিক কিংবা ফরমায়েশি কাজে কখনই বাধতে চাইতেন না কাজী আবুল কাসেম, এ কারণে নিজের আগ্রহ থেকেই কাজের পাশাপাশি কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলেন তিনি। তার আঁকা চিত্রগুলোর কদর বুঝতে পারেন পত্রিকার কর্তাব্যক্তিরাও। এ কারণে ত্রিশের দশকের শুরু থেকে কলকাতার প্রথম সারির সব পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে কাজী আবুল কাসেমের আঁকা চিত্রকর্মগুলো। এর মধ্যে মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন কলকাতায় তার সওগাত পত্রিকায় এই তরুণ বাঙালি মুসলিম চিত্রকরের প্রথম ছবিটি ছেপেছিলেন। ছবিটির নাম ছিল ‘সাকী’। আর তার অনুসৃত এবং প্রতিষ্ঠিত এই অকল্পনীয় সত্যটিকে প্রেরণা হিসেবে নিয়েই পরবর্তী কালে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সামাজিক পশ্চাদপদতাকে পেছনে ফেলে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান এবং সফিউদ্দীন আহমদের মতো ব্যক্তিরা চিত্রকর হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন।


মূলত আধুনিক বাংলার প্রথম মুসলিম চিত্রকর হিসেবেই নন, বরং সৃষ্টির আরো অনেক ক্ষেত্রেই তার অনন্য প্রতিভার সাক্ষর রেখেছিলেন কাজী আবুল কাসেম। উপমহাদেশের সব সম্প্রদায়ের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রথম পথিকৃৎ রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্রী। আজাদ, সওগাতসহ অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত কার্টুন চিত্রে তার অসাধারণ রসবোধ ও তীক্ষè সমাজমনস্কতা ফুটে উঠেছিল। বিশেষ করে ১৯৩৭ সালে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা- দাদা মেখে দেয় দাড়িতে খেজাব- এই ব্যঙ্গ কবিতাটি অবলম্বনে এবং হিন্দু-মুসলিম সম্প্রতিকে উপজীব্য করে শিল্পী কাজী আবুল কাসেমের আঁকা কার্টুনটি সে সময় ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। এছাড়া বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনের আগেও পরে মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তার আঁকা প্রতিবাদী কার্টুনগুলোও ভিন্ন এক প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছিল সকল বাংলা ভাষাভাষি মানুষের জন্য। এ সময় ‘আজাদ’ পত্রিকায় তার আঁকা বেশ কিছু বিদ্রপাত্মক কার্টুন প্রশংসিত হয়। বিশেষ ভাবে আলোচিত হয় সাপ্তাহিক ইত্তেফাকে ‘দোপেঁয়াজা’ ছদ্মনামে প্রকাশিক ব্যাঙ্গচিত্রগুলোও।


শিল্পী কাজী আবুল কাসেমের শিল্পকর্মকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো- সুকুমার চিত্র, ব্যঙ্গচিত্র এবং ব্যবহারিক চিত্র। সে সময়কার খ্যাতনামা বহু লেখকের বইয়ের প্রচ্ছদ অংকনের পাশাপাশি ছোট সোনামণিদের কবিতা ও ছড়ার বইয়ের চিত্রকর হিসেবেও তিনি কর্মকুশলতার পরিচয় দেন । ‘পুঁথির মালা’, ‘কাজলা পুসি’, ‘কাঁচা-মিঠে’সহ প্রায় কয়েক ডজন ছড়ার বইয়ের প্রচ্ছদ ও ভেতরের অলংকরণ করেন কাজী কাসেম। এছাড়া শীর্ষচিত্র ও কমিক স্ট্রিপস তৈরিতেও নামযশ ছিল তার।

0 comments:

Post a Comment