ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল
Info Post
ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলকে বলা হয় আধুনিক নার্সিং-এর জননী। ১৮২০ খ্রি. ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্স নামক শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ফ্লেরেন্সের পিতার নাম উইলিয়াম এডওয়ার্ড এবং মাতার নাম ফনি উইলিয়াম। ফ্লোরেন্সরা ছিলেন ২ বোন। তিনি ছিলেন কনিষ্ঠ। ফ্লোরেন্স ছিলেন উচ্চবংশীয়, ধনী পরিবারের ও শিক্ষিতা। ফ্রোরেন্স ছোটবেলা থেকেই বুদ্ধিমতী ছিলেন এবং যেকোনো পড়া সহজেই মনে রাখতে পারতেন। তিনি দেখতে খুবই সুন্দরী ছিলেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকে তিনি খুবই দয়ালু ছিলেন। প্রতিবেশীদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে তাদের দুঃখের কথা শোনতেন। তার মনে কোনো অহংকার ছিল না। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল মাত্র ১৭ বছর বয়সে তার পড়াশোনা শেষ করেছিলেন এবং তখন থেকে তিনি পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার পথ পরিবর্তন করবেন বলে চিন্তা করেন। তার চিন্তা ছিল ভবিষ্যতে তিনি একজন সেবিকা হবেন এবং সেবা কাজের জন্য আত্দনিয়োগ করবেন। কিন্তু তার এ সিদ্ধান্তের কথা শুনে পিতা খুবই দুঃখিত এবং মা ও বড় বোন রাগান্বিত হলেন। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল নীরবে সব সহ্য করলেন কিন্তু তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। তিনি নীরবে ঘরে বসে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতেন না। কারণ সে যুগে ধনী পরিবারের শিক্ষিত মহিলারা সেবা কাজ করত না। কারণ সমাজে এ কাজ নিকৃষ্ট হিসেবে বিবেচিত হতো। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল-এর পিতা-মাতা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব জানালেন। নাইটিংগেল তা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করলেন। ফ্লোরেন্স নাটিংগেল তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। অবশেষে তার পিতা-মাতা বাধ্য হয়ে তাকে একটি হাসপাতালে কাজ করার অনুমতি দিলেন। একটি হাসপাতালে তিনি সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসেবে যোগদান করলেন, পাশাপাশি সেবিকার কাজ আরম্ভ করলেন। এটাই ছিল তার সেবা প্রতিষ্ঠানে প্রথম পদক্ষেপ। ১৮৫৪ সালের মার্চে রাশিয়া, ব্রিটিশ এবং ফ্রান্সের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধ ক্রিমিয়ার যুদ্ধ নামে পরিচিত। ৩৮ জন সেবিকাসহ তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে যোগদান করেন। তিনি সেবিকাদের নিয়ে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করতে লাগলেন। সে যুগে মহিলা সেবিকারা কোনো সামরিক হাসপাতালে কাজ করতেননা। সামরিক হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মচারীরা তার সঙ্গে অসহযোগিতামূলক আচরণ করতে লাগল। তিনি সব বাধা অতিক্রম করে তার কোমল হাতের স্পর্শে সবাইকে সুস্থ করতে লাগলেন। তার কঠোর পরিশ্রম ও অমায়িক ব্যবহারে হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মচারীরা অত্যন্ত খুশি হলেন এবং শেষ পর্যন্ত সবাই ফ্লোরেন্সের কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। তিনি দিনে কাজ করে রাতে মোমবাতি হাতে আহতদের খবর নিতেন। তাই সবাই তার নাম দিলেন 'লেডি উইথ লাম্প'। ১৮৫৬ সালের সেপ্টেম্বের রানী ভিক্টোরিয়া তাকে স্কটল্যান্ডে তার প্রাসাদে ডেকে পাঠান এবং তারই পরামর্শ অনুসারে রয়েল কমিশনাল হাসপাতাল তৈরি করেন এবং নার্সিং-এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলেন, যার নাম 'কিংস কলেজ ট্রেনিং স্কুল ফর মিড-ওয়াইফ'। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় তাকে ৪৫ হাজার পাউন্ড পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়। কিন্তু পারিশ্রমিকের টাকা নিজের জন্য ব্যয় না করে তিনি 'নাইটিংগেল' নামক ফান্ডে সব জমা রাখেন এবং সর্বপ্রথম লন্ডনে সেন্ট টমাস হাসপাতালে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলকে নার্সিং-এর জননী বলা হয়। তার আত্দত্যাগ ও চিন্তা-চেতনার জন্য বিশ্বের অন্য পেশা থেকে এ পেশা ব্যতিক্রমধর্মী সেবামূলক পেশা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
0 comments:
Post a Comment