Breaking News
Loading...
Wednesday, May 12, 2010

কিংবদন্তি গায়ক বব মার্লের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জ্যামাইকার সেইন্ট এন প্যারিস শহরে। বব মার্লের বাবা ছিলেন শ্বেতাঙ্গ নাবিক নরভাল সিনক্লেয়ার মার্লে। জীবনের প্রায় শেষপ্রান্তে এসে ৫০ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেছিলেন বব মার্লের মা আর অষ্টাদশী কৃষ্ণাঙ্গ তরুণী সেডেলা বুকারকে। কিন্তু নাবিক হিসেবে মার্লের বাবাকে বন্দরে বন্দরে ঘুরতে হতো বলেই বিয়েটা খুব পোক্ত কিছু ছিল না। এরই মাঝে বব মার্লের বয়স যখন মাত্র ১০ তখনই মারা যান বাবা সিনক্লেয়ার মার্লে। সেইন্ট এন প্যারিস ছেছে বব মার্লে আর তার মায়ের স্থান হয় কিংস্টনের ট্রেঞ্চটাউন বস্তিতে। তবে এখানে এসে জীবন সংগ্রামের বাইরে যেন অন্য এক সংগ্রামেও নিজের অনিচ্ছাতেই জড়িয়ে পড়তে হয় মার্লেকে। আর মার্লের এই সংগ্রামের নেপথ্যে কাজ করে তার বর্ণ পরিচয়ের বিষয়টি। এই সময় সাদা না কালো- এই বিতর্কে জড়িয়ে বহু সমালোচনা শুনতে হয়েছিল তাকে। আর অচ্চিত্বের এই দ্বন্দ্বই যেন মার্লেকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে আরো বেশি করে ভালোবাসতে শিখিয়েছিল মানুষকে।
মার্লের বয়স যখন ১৪ তখনই একদিন ঘটনাক্রমে তার পরিচয় ঘটে নেভিল লিভিংস্টোন (বানি ওয়েইলার) এর সাথে। এই নেভিলকে সাথে নিয়েই প্রথমে টুকটাক মিউজিক শুরু করেন মার্লে। দিনে একটা ওয়েল্ডিং শপে কাজ আর রাতে অবসর সময়ে মিউজিক এ নিয়েই কাটতে থাকে মার্লের সময়। এরই মাঝে একে একে পরিচয় হয় জো হিগস এবং পিটার টোশ নামের আরো কয়েকজন স্থানীয় মিউজিশিয়ানের সাথে। আর এদেরকে সাথে নিয়েই চলতে থাকে মার্লের সংগীত চর্চা। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে সংগীতে বব মার্লের অভিষেক হয়েছিল এরও বেশ কিছুদিন পরে, ১৯৬২ সালের মাঝামাঝিতে। এ সময় ববি মারটেল নাম নিয়ে ‘জাজ নট’ এবং ‘ওয়ান কাপ অব কফি’ শিরোনামের দু’টি সিঙ্গেলস প্রকাশ করেন মার্লে। এর ঠিক পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬৩-তে এসে তারুণ্যের দুই বন্ধু বানি লিভিংস্টোন ও পিটার টোশকে নিয়ে একটি ব্যান্ডদল গঠন করেন মার্লে। আর এই ব্যান্ডকে সাথে নিয়েই চলতে থাকে বব মার্লের একের পর এক জনপ্রিয় গান লেখা, সুর করা ও গাওয়ার কাজটি। একপর্যায়ে গানের ভুবনে বিচরণ করতে করতেই তার পরিচয় হয় রিটা অ্যান্ডারসন নামের এক তরুণীর সাথে, যার সাথে ১৯৬৬-তে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মার্লে। সেই সাথে রিটাও যোগ দেন বব মার্লের গানের দল দ্য ওয়েলার্স-এ। আর ১৯৭৪ সালে ব্যান্ড ভেঙে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই ব্যানারে থেকেই বব মার্লে উপহার দেন ‘ওয়ান লাভ’, ‘সিমার ডাউন’, ‘সোল রিবেল’, ‘ফোর হান্ড্রেড ইয়ারস’, ‘গেট আপ স্ট্যান্ড আপ’ এবং ‘আই শট দ্য শেরিফ’ এর মতো জনপ্রিয় সব গান। আর ‘দ্য ওয়েলার্স’-এর ব্যানারে মার্লে যে দু’টি অ্যালবামের কাজ করেন সেগুলো হলো ‘ক্যাচ এ ফায়ার’ ও ‘বার্নিং’।
৭৪-এ ব্যন্ড দল ভেঙে যাওয়ার পর দলের অন্য সদস্যদের মতো মার্লেও ব্যস্ত হয়ে পড়েন তার সলো ক্যারিয়ার নিয়ে। ৭৫-এ এসে উপহার দেন তার বিশ্বকাঁপানো সেই গান ‘নো ওমেন নো ক্রাই’। এ সময় লন্ডন থেকে প্রকাশিত মার্লে’র দুই অ্যালবাম ‘এক্সোডাস’ ও ‘কায়া’র বহু গানই ফিরতে থাকে শ্রোতাদের মুখে মুখে। একজন বব মার্লের মানবতার বাণী শ্রোতাদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেয় ‘বাফেলো সোলজার’ আর ‘ব্ল্যাক প্রগ্রেস’-এর মতো অসংখ্য জনপ্রিয় গানের হাত ধরে। মূলত মানবতার পক্ষে গান গাইতেন বলে সব সময়ই তার অবস্থান ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের পক্ষে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কালোদের ওপর চলতে থাকা বর্ণবাদী নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। প্রতিবাদের ভাষা ছিল গান। রাজনৈতিক আগ্রাসনের প্রতিবাদও মার্লে করেছেন তার গানের মাধ্যমে। তবে ক্যান্সারের কালো ছায়ায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ১৯৮১ সালের ১১ মে তারিখেই থেমে যায় মানবতাকামী এই শিল্পীর সুরের যাদু। তবে বব মার্লের মৃত্যু হলেও তার সুর যে চিরকালই সংগীতপ্রেমী মানুষকে প্রেরণা দেবে তার প্রমাণ মিলেছে মার্লে’র মৃত্যুর পরেও। আর তাই ১৯৯৯ সালে তাঁর ’বব মার্লে অ্যান্ড দ্য ওয়েইলার্স’ অ্যালবামকে বিশ শতকের ‘সেরা অ্যালবাম’ নির্বাচিত করে টাইম ম্যাগাজিন।

1 comments:

  1. all people, all cry......only for you BOB.......

    ReplyDelete