খ্যাতনামা চিত্রকর সালভাদর দালি। পুরো নাম সালভাদর ডমেনেক ফিলিপ জেসিন্ট দালি ডমেনেখ নাম নিয়েই দালি’র জন্ম হয়েছিল ১৯০৪ সালের ১১ মে স্পেনের ক্যাটালোনিয়ার ফিগুয়েরস্ শহরে। বাবা সালভাদর দালি আই কুসি এবং মা ফেলিপা ডমেনেক ফেরেসের সংসারে অভাব কী জিনিস তা কখনই জানার সুযোগ পাননি দালি। আর তাই স্বচ্ছল, স্বাধীন শৈশব ও কৈশোরে আঁকাআঁকির ভূতটা বেশ ভালো করেই পেয়ে বসেছিল সালভাদর দালিকে। আর দালির এই উৎসাহে সবসময়ই কার্যকর প্রেরণা যুগিয়েছিলেন দালির মা ফেলিপা ডমেনেক ফেরেস। যদিও দালি’র বয়স যখন ১৬ তখনই তার মায়ের মৃত্যু ঘটে। আর দালির বাবা বিয়ে করেন তার মায়ের বোনকেই। যদিও ব্যক্তিজীবনের এসব ঘটনার প্রভাব দালি’র জীবনে খুব সামান্য মাত্রাতেই ছিল। তাই নিজের ভালোবাসার শিল্পচর্চা আর নানা অদ্ভুতুরে কায়দায় নিজেকে প্রকাশ করা নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটত তরুণ দালি’র।
মূলত স্পেনের একাডেমি অব আর্টসের পাট চুকানোর পরই দালি পাড়ি জমান প্যারিসে। সেকালে শিল্পচর্চার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্যারিসের যেমন নাম-ডাক ছিল তেমনই এখানে দেখা মিলত বিশ্বের সব নামিদামি চিত্রকরেরও। আর এ কারণেই একজন শিল্পী হিসেবে নিজের জীবনটাকে গড়ে তুলতে প্যারিসে যাওয়ার স্বপ্ন বহুদিন থেকেই ঠাঁই গেড়েছিল দালির মনে। মজার বিষয় হলো, প্যারিসে যাওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দালি’র পরিচয় হয়েছিল সে সময়কার আরেক সাড়া জাগানো চিত্রকর পাবলো পিকাসোর সাথে। দালি নিজেও ছিলেন পিকাসোর চিত্রকর্মের একজন ভক্ত। এছাড়া এন্ড্রে ব্রেটন ও সমকালীন সুরিয়ালিস্টিক আর্ট মুভমেন্ট-এর সাথে জড়িত অনেকের সাথে পরিচয়ের সুবাদে নিজেকে আরো বেশি করে শিল্প ভাবনায় ডুবিয়ে দেয়ার সুযোগ পেয়ে যান দালি। সেই সাথে চলতে থাকে তার শিল্পচর্চাও। বিশেষ করে তার আঁকা বেশ কিছু চিত্রকর্ম এ সময় সুরিয়ালিস্টিক ধারার পথিকৃৎ হয়ে ওঠে। ‘দ্য গ্রেট মাস্টারবেটর’ এবং ‘দ্য পারসিস্টেন্স অব মেমোরি’র মতো শিল্পকর্মের সুবাদে দালি হয়ে ওঠেন সুরিয়াল ধারারই অন্য নাম। এরই মাঝে ১৯২৯ সালে দালির পরিচয় ঘটে হেলেনা দিয়াকোনোভা নামের এক রাশিয়ান অভিবাসীর সাথে। বয়সে দালির চাইতে দশ বছরের বড় হলেও ক্রমেই হেলেনার সাথে তার বন্ধুত্ব রূপ নেয় ভালোবাসায়। আর ভালোবাসার পরিণতিতেই ১৯৩৪ সালে হেলেনা দিয়াকোনোভাকে বিয়ে করেন দালি। পরবর্তী জীবনে দালি’র যত কর্ম আর ভাবনা তার উল্লেখযোগ্য অংশের প্রেরণাও হয়ে উঠেছিলেন এই হেলেনাই। এমনকি দালি একসময় তাকে নিযুক্ত করেছিলেন তার বিজনেস ম্যানেজার হিসেবেও।
মূলত আমেরিকায় তার প্রবাস জীবনে একের পর এক সাড়া জাগানো চিত্রকর্মের পাশাপাশি দালি আলোচিত ও সমালোচিত হয়ে উঠেছিলেন তার অদ্ভতুরে আচরণ আর মন্তব্যের জন্যও। এছাড়া এ সময়কার একজন প্রভাবশালী চিত্রকর হিসেবে প্রচুর বিত্ত-বৈভবেরও মালিক হয়েছিলেন তিনি। এরই মাঝে মার্কিন মুলুকে আট বছর কাটিয়ে দালি আবারো ফিরে আসেন তার জন্মভূমি স্পেনের ক্যাটালোনিয়াতে। আর এখানেই ১৯৮৯ সালের ২৩ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান দালি। তবে সুরিয়ালিস্টিক ধারার একাধিক আলোচিত চিত্রকর্মের পাশাপাশি দালি’র উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হিসেবে এখনো সারাবিশ্বের চিত্রপ্রেমী মানুষ যে কাজগুলোর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তার মধ্যে রয়েছে ভিলাবার্টিন, ফিয়েস্তা ইন ফিগুয়েরাস, ক্যাবারে সিন, দ্য বাস্কেট অব ব্রেড, আন চিন এন্ডালু, লবস্টার টেলিফোন, মর্ফোলজিক্যাল ইকো, মেটামরফোসিস অব নার্সিসাস, দ্য বার্নিং জিরাফ, শার্লি টেম্পল, দ্য ইয়ংগেস্ট, দ্য ফেস অব ওয়ার, স্টিল লাইফ মুভিং ফাস্ট, টুনা ফিশিং, চুপা চুপস, লা টয়লে ডালিগ্রাম এবং দ্য সলো’স টেইল (শেষ চিত্রকর্ম)সহ অসংখ্য চিত্রকর্ম।
সালভাদর দালি
Info Post
0 comments:
Post a Comment