Breaking News
Loading...
Saturday, June 19, 2010

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী এবং ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির শীর্ষ ব্যক্তিত্ব আধুনিক বার্মার জনক অঙ সান এর কন্যা সু কি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৫ সালের ১৯ জুন, ইয়াঙ্গুনে(তৎকালীন বার্মার রেঙ্গুনে। ১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে ১৪ বছর ধরে গৃহবন্দী এই নেত্রী পরিণত হয়েছেন গণতন্ত্রের আইকনে।
তিনি ছিলেন তার পরিবারের ৩য় সন্তান। তার নামকরন করা হয়েছিল তার পরিবারের তিন সদস্যের নামে, " অং সান " তার বাবার নাম থেকে, " সূ " তার দাদির নাম থেকে এবং " চি " তার মা'র নাম থেকে। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী এই নেতা ১৯৯০ সালে রাফতো পুরস্কার এবং শাখারোভ পুরস্কার লাভ করেন। সামরিকতন্ত্রের বিপক্ষে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য ১৯৯১ সালে অং সান সুকি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯২ সালে আন্তরজাতিক সম্পরকের জন্য ভারত সরকার অঙ সান সু কিকে "জহরলাল নেরু" পুরস্কার প্রদান করেন।

সু চি-র বাবা জেনারেল অং সান ছিলেন মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক। গত শতকের আশির দশকে অনেকটা দুর্ঘটনাক্রমেই সু চি রাজনীতিতে আসেন। সু চি-র মধ্যে গণতন্ত্রের প্রতি অনুরাগ জন্মে লন্ডনে পড়াশোনাকালে এবং সেখানেই পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকারের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। এর আগে শৈশবে তিনি ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে শিক্ষা পড়াশোনা করেন। ভারতও পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকারের শাসিত হচ্ছে এবং বিশ্বের সর্ববৃহত্ গণতন্ত্র হয়ে দেশটি খ্যাতি অর্জন করেছে। সু চি-র মা ছিলেন মিয়ানমারের ভারতস্থ রাষ্ট্রদূত। ১৯৮৮ সালে মায়ের অসুস্থতার সংবাদে লন্ডন থেকে দেশে ফিরলে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় দেশটিতে সামরিক অভিযানে তিন হাজার লোক মারা যায়। এরপর সামরিক জান্তা সু চি-কে ১৯৮৯ সালে গৃহবন্দি করে আর এভাবেই কেটে যায় দুই দশক। এর আগে ১৯৭২ সালে বিয়ে করেন ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ মাইকেল অ্যারিসকে।

গৃহবন্দি থাকাকালে ১৯৯০ সালের নির্বাচনে সু চি-র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করলেও ক্ষমতা ছাড়েনি সামরিক জান্তা। সর্বশেষ ২০১০ সালের নভেম্বরে সুচি মুক্তি পান আরেক নির্বাচনের আগে। ১ এপ্রিলের উপনির্বাচনে সু চি-র দল সরকারি দলের বিপরীতে পার্লামেন্টে বড় শক্তিধর না হলেও বর্তমান বাস্তবতায় মিয়ানমারের ইতিহাসের মোড়পরিবর্তনের নায়ক হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। এই উপনির্বাচনের ৪৪ আসনের মধ্যে ৪৩ আসনে সু চি-র দল জয়লাভ করেছে। একটি আসনে প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় তারা অংশ নিতে পারেনি। সেই বিচারে তার দল শতভাগ বিজয়ী। ২০১০ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে এক হাজারের বেশি আসনের পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন দল ৮৮৩ আসনে জয়ী হয়। ওই নির্বাচনে আইনি জটিলতার কারণে অংশ নিতে পারেনি এনএলডি। সু চি-কে মুক্তি দেওয়ার মধ্য দিয়ে সামরিক জান্তা সরকার মিয়ানমারে নতুন যুগের সূচনা ঘটিয়েছে। তবে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এখনো কারাগারে। পরবর্তী নির্বাচন ২০১৫ সালে এবং সে পর্যন্ত পরিস্থিতির নিবিড় পর্যবেক্ষণ দরকার। অনেকে মনে করেন—বাধ্য হয়েই মিয়ানমারের সরকার দেশটিতে সংস্কারের পদক্ষেপ নিচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ এবং অতি প্রয়োজনীয় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এর বড় কারণ হতে পারে। তবে জান্তা সরকারের আন্তরিকতাও কিছুটা রয়েছে বলেও মনে করেন কেউ কেউ।
এক নজরে পরিচিতি
পুরো নাম : অং সান সু চি

জন্ম : ১৯৪৫ সালের ১৯ জুন, ব্রিটিশ বার্মার রেঙ্গুনে (বর্তমানে ইয়াঙ্গুন)

বাবা : অং সান

মা : কিং চি

রাজনৈতিক দল : ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)

দাম্পত্য সঙ্গী : ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ মাইকেল অ্যারিস (১৯৭২—১৯৯৯)

সন্তান : বড় ছেলে আলেক্সান্ডার (৩৯), ছোট ছেলে কিম (৩৫)

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : দিল্লি­ বিশ্ববিদ্যালয়; সেন্ট হগ্স কলেজ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

ধর্ম : বৌদ্ধ

পুরস্কার :অ্যাওয়ার্ডস অব রাফতো প্রাইজ, নোবেল পুরস্কার (শান্তি), জওহরলাল নেহ্রু অ্যাওয়ার্ড, আন্তর্জাতিক সাইমন বলিভার পুরস্কার, অলোফ পাল্ম পুরস্কার, ভগবান মহাবীর বিশ্বশান্তি পুরস্কার।



রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জি

# ২০ জুলাই ১৯৮৯ :গৃহবন্দি জীবনের শুরু।

# ১৯৯০ :সাধারণ নির্বাচনে নিজ দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ। তবু ক্ষমতা হস্তান্তরে সামরিক জান্তার অস্বীকার।

# ১৯৯১ :শান্তিতে নোবেল পুরস্কার।

# ১০ জুলাই ১৯৯৫ :গৃহবন্দি থেকে সাময়িক মুক্তি, তবে চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত।

# ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০০ :পুনরায় গৃহবন্দি।

# ৬ মে ২০০২ :১৯ মাস পর আবার মুক্তি।

# ৩০ মে ২০০৩ :এনএলডি ও জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে পুনরায় অবরুদ্ধ।

# ২৫ মে ২০০৭ :আরো এক বছরের জন্য গৃহবন্দিদশা বৃদ্ধি করা হয়।

# ২৭ মে ২০০৮ :আবারো এক বছরের জন্য গৃহবন্দিদশার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। যদিও এই মেয়াদবৃদ্ধি আন্তর্জাতিক ও মিয়ানমারের আইনেও নিয়মবহির্ভূত ছিল।

# ১১ আগস্ট ২০০৯ :গৃহবন্দিদশার মেয়াদ আরো ১৮ মাস বাড়ানো হয়।

# ১৩ নভেম্বর ২০১০ :অবশেষে মুক্তি ঘটে গৃহবন্দিদশা থেকে।

# এপ্রিল ২০১২ :প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের সংসদে বসেন।

তথ্য সূত্রঃ ইত্তেফাক

0 comments:

Post a Comment