Breaking News
Loading...
Sunday, June 6, 2010

জগদ্বিখ্যাত অর্থনৈতিক সাময়িকী ফোর্বসের দৃষ্টিতে বিশ্বসেরা ধনকুবেরদের তালিকায় সুইডিস ফার্নিচার কোম্পানি আইকেইএ’র মালিক ইঙ্গভার ক্যাম্পরাডের স্থান চতুর্থ। ২০০৬ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৮ বিলিয়ন (দুই হাজার আটশত কোটি) ডলার। তিন বছরের মাথায় অর্থাৎ ২০০৯ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩৬ বিলিয়ন (দুই হাজার ছয়শত কোটি) ডলারে। মিতব্যায়ী এবং নিতান্তই সাদামাটাভাবে জীবন যাপনে অভ্যস্ত ইঙ্গভারের ধন সম্পদ অর্জনের পেছনে রয়েছে অবিস্মরণীয় ঘটনাপ্রবাহ।
১৯২৬ সালে সুইডেনের দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী অ্যাগুনার্ডে জন্ম ইঙ্গভার ক্যাম্পরাডের। শিশু বয়সেই ইঙ্গভার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। নিজ গ্রামে ইমটার্ড নামে খোলেন একটি মুদি দোকান। দোকানে নিত্য পণ্য বিক্রি এবং তা দিয়ে পর্যায়ক্রমে পুঁজি বৃদ্ধির একধাপে শিশু ইঙ্গভার কিনে ফেলেন একটি বাইসাইকেল।
প্রথমদিকে স্টকহোম শহর থেকে পাইকারি দামে ম্যাচ বাক্স ক্রয় করে তা বাইসাইকেলে পাড়া মহল্লার বাড়িবাড়ি ফেরি করতেন তিনি। বাজার মূল্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কমে ম্যাচ বাক্স মেলে ইঙ্গভারের কাছে। তাই অল্প দিনের মধ্যে তার জুটে গেল অসংখ্য ক্রেতা। তার ফাকে ইঙ্গভারের ফেরি করা পণ্য তালিখায় যোগ হলো মাছ, ক্রিসমাস ট্রী, সাজানোর নানা উপাদান, বলপয়েন্ট কলম ও পেন্সিল। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি থেমে থাকেনি ইঙ্গভারের লেখাপড়া। মেধাবী ইঙ্গভারের বয়স যখন ১৭ তখন পরীক্ষায় কৃতীত্বের স্বাক্ষর রাখেন তিনি। সন্তানের কৃতীত্বপূর্ণ লেখাপড়া ও একই সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় পেয়ে পিতা পুরস্কার হিসাবে মোটা অংকের অর্থ তুলে দেন পুত্র ইঙ্গভারের হাতে। ১৯৪৩ সাল। ঐ বছরে নিজের নামের দুই আধ্যাক্ষর আই এবং কে মিলিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন একটি ফার্নিচার তৈরির কোম্পানি। স্বল্প দামে বিলাস ও জৌলুসপূর্ণ টেকসই ফার্নিচার তৈরির জন্য অতিঅল্প দিনের মধ্যেই ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো আই কে কোম্পানি। পরে পুরনো মুদি দোকান ও নিজ গ্রামের আদ্যাক্ষর যথাক্রমে ই এবং এ যোগ করে ইঙ্গভার তার কোম্পানির নতুন নামকরণ করেন আইকেইএ।
১৯৪৫ সাল। এ বছর প্রথমবারের মতো ইঙ্গভার তার কোম্পানির তৈরি ফার্নিচারের বিজ্ঞাপন প্রচার করেন স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্রে। রাতারাতি আইকেইএ ফার্নিচারের বাজার মাত করে ফেললো। তখনও আইকেইএ কোম্পানির তৈরি ফার্নিচার চাহিবা মাত্র ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়ার রীতি প্রচলন ছিল। ১৯৫৩ সালে সুইডেনের ছোট্ট শহর আলমাআটে প্রথম খোলা হয় শো-রুম। তারপর ইঙ্গভারকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৯৭৩ সালে ক্যান্ডেনেভিয়ান গন্ডি পেরিয়ে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে প্রথম শোরুম ও বিক্রয় কেন্দ্র খোলা হয় আইকেইএর। পরের বছর অনুরূপ ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয় জার্মানিতে। দুইবছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে কানাডা ও নেদারল্যান্ডে খোলা হয় দুইটি বিক্রয় কেন্দ্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রয় কেন্দ্র খোলা হয় ১৯৮৫ সালে।
পরবর্তী সাত বছরে আইকেইএ’র তৈরি ফার্নিচার বিপননে স্টোর খোলা হয় যুক্তরাজ্য, ইটালি, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫টি দেশে ১১৪টি স্টোর খোলে আইকেইএ। ১৯৯৭ সালে আইকেইএ ফার্নিচার নতুন মাত্রা যোগ হয়। এ বছর শিশু মনস্তাত্বিকদের পরামর্শক্রমে শিশুদের উপযোগী ফার্নিচারে তৈরি করে আইকেইএ। দ্রুত তা সাড়া ফেলে দেয় বিশ্ব বাজারে। পরের বছর ১৯৯৮ সালে চীনে স্টোর খোলে আইকেইএ। ১৯৯৯ সালে কোম্পানিটির শ্রমিক কর্মচারির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৩ হাজারে। একই বছর বিশ্বের ২৯টি দেশে খোলা স্টোরের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫০টিতে।

0 comments:

Post a Comment