Breaking News
Loading...
Friday, June 4, 2010

নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নূরজাহান বেগম। উপমহাদেশের নারীদের নিয়ে প্রথম সাপ্তাহিক 'বেগম' পত্রিকার সূচনালগ্ন থেকে তিনি জড়িত। নূরজাহান বেগমের জন্ম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে। মা ফাতেমা বেগম ও বাবা সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। শৈশবে সবার কাছে নূরী নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন। সাড়ে তিন বছর বয়সে মা আর মামা ইয়াকুব আলী শেখের সঙ্গে কলকাতায় বাবার কাছে চলে যান নূরী। কলকাতার ১১ নম্বর ওয়েলেসলি স্ট্রিটের দোতলা বাড়িতে ছিল তাঁদের বসবাস। বাড়ির একদিকে ছিল সওগাত পত্রিকার দপ্তর। সেখানেই নূরীর পড়াশেনা শুরু হয়। ছোটবেলায় বাবার কাছেই তাঁর লেখালেখির হাতেখড়ি। কবিতা, গল্প লেখা, ছবি আঁকা ছিল তাঁর শখ।


সওগাত পত্রিকা অফিসে নিয়মিত সাহিত্য মজলিস বসত। সেখানে যোগ দিতেন কাজী নজরুল ইসলাম, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ, আবুল কালাম শামসুদ্দিন, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, হবীবুল্লাহ বাহার, ইব্রাহীম খাঁ, কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখ। তাঁদের আড্ডার নিয়মিত শ্রোতা ছিলেন নূরজাহান। বাবার প্রতিদিনের পত্র-পত্রিকার কাটিং, রেফারেন্স সব সংগ্রহে রাখতেন তিনি। অর্থাৎ তিনি বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে একজন লেখক এবং সাংবাদিক হিসেবে তৈরি হয়েছেন।


বাংলাদেশের নারীদের সৃজনশীলতা বিকাশের ক্ষেত্রে বেগমের নাম শ্রদ্ধায় উচ্চারিত হয়। বেগম পত্রিকার সূচনা হয় ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই। নূরী তখন বিএ অধ্যয়নরত। নাসিরউদ্দীন প্রতিষ্ঠিত বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন নারী জাগরণের আরেক পথিকৃৎ কবি সুফিয়া কামাল। সবার প্রিয় খালাম্মা। তাঁর নেতৃত্বে ওই সময় বেগম নারী জাগরণের প্রধান মুখপাত্রে পরিণত হয়। বেগমের শুরু থেকে নূরজাহান বেগম ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। পরবর্তীতে তাঁর বিয়ে হয় রোকনুজ্জামান খানের (দাদা ভাই) সঙ্গে। দাদা ভাই এদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিশু-কিশোর সংগঠক ও লেখক। তাঁর উদ্যোগে কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠিত হয়।


নূরজাহান বেগম সপরিবারে বাংলাদেশে চলে আসেন ১৯৫০ সালে। তারপর পুরোদমে নিজেকে সাংবাদিকতায় নিয়োজিত করেন। অতঃপর নারী সাংবাদিক ও সাহিত্যিক তৈরি এবং নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। দেশের অগ্রগণ্য নারী লেখকদের অধিকাংশই বেগম পত্রিকার মাধ্যমে লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। এ দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে নূরজাহান বেগমের অনন্য অবদান। এ অনবদ্য অবদানের জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা সবার। তিনি সম্মানিত হয়েছেন বিভিন্নভাবে। তার মধ্যে ১৯৯৭ সালে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার রোকেয়া পদক ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার অন্যতম। স্বর্ণপদক পেয়েছেন বিভিন্ন সাংবাদিক ফোরাম থেকে।

0 comments:

Post a Comment