Breaking News
Loading...
Wednesday, June 30, 2010

ইতিহাসের অন্যতম সেরা বক্সার মুহম্মদ আলী। জীবনে যত বাধাই আসুক না কেন, সেই বাধা ডিঙিয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপে এগিয়ে যাওয়াই প্রকৃত বিজয়ীর কাজ। এমনই এক অপ্রতিরোধ্য বিজয়ী যোদ্ধা মুহম্মদ আলী। মার্কিন হেভিওয়েট বক্সার মোহম্মদ আলীই বক্সিং ইতিহাসের সফল এবং শেষ অধ্যায়। তার সাফল্য আজো অধরা। তিনবার হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী এই বক্সার বিশ্বের মুষ্টিযোদ্ধাদের এক ঘায়ে কাহিল করে দিয়েছিলেন; কিন্তু একটি রোগ কাহিল করে দেয় তাকে। পার্কিসন ডিজিজ। খুব কঠিন এক ব্যাধি। বিশেষ ধরনের এই মানসিক রোগটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে অকেজো করে দেয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কথা বলার কিংবা স্বাভাবিক আচরণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। প্রায় সময়ই সমস্ত শরীর কাঁপতে থাকে। দুরারোগ্য এই ব্যাধি একজন সুস্থ মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। পেশা জীবনের মাঝপথে গিয়ে মুহম্মদ আলীর এই রোগ ধরা পড়ে। সাধারণত দেখা যায় বঙ্াররাই এ ধরনের রোগের শিকার হয়ে থাকেন। মুহম্মদ আলীও হয়েছিলেন; কিন্তু তার লড়াইয়ের তীব্রতায় ওই রোগ তাকে প্রথম কাবু করতে পারেনি।
আফ্রিকান-আমেরিকান বংশোদ্ভূত আলীর আসল নাম ক্যাসিয়াস মারসেলাস ক্লে। তিনি ১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি কেন্টাকির লুইভিলেতে জন্মগ্রহণ করেন।

বাবা ক্যাসিয়াস পোস্টার লিখতেন। মা ওডিসা ছিলেন গৃহিণী। তাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন শেতাঙ্গ আমেরিকানদের ক্রীতদাস। চেষ্টা করেও জীবনে সেই দাগ মুছে ফেলতে পারেনি তার পরিবার। ছোটবেলা থেকেই বক্সংয়ে ঝোঁক ছিল ছেলে ক্যাসিয়াসের। তাই বাবা তাকে খুব ছোট বয়সেই নিয়ে গিয়েছিলেন এক মুষ্টিযোদ্ধার কাছে। খুব ভালো ছাত্র ছিলেন আলী। দ্রুত শিখে নিয়েছিলেন মুষ্টিযুদ্ধের নিয়ম-কানুন। পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তিনি ক্যাসিয়াস থেকে মুহম্মদ আলী নাম ধারণ করেন। ১৯৬০ সালে সামার অলিম্পিক সোনার মেডেল পান মুহম্মদ আলী। এরপর ক্যারিয়ার জীবনে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে বিশ্বের সেরা সব বক্সারকে হারিয়ে আলী যখন মুষ্টিযোদ্ধা হিসাবে শীর্ষে, ঠিক তখনই তার বংশপরিচয় তাকে আইনের ফাঁদে ফেলে। কেড়ে নেওয়া হয় তার 'বঙ্ংি লাইসেন্স'। তবুও হাল ছাড়েননি আলী। সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে অবশেষে তিনি তার অনুমতিপত্র ফিরে পান। এরপর তার উত্থান আর কেউ ঠেকাতে পারেনি। তিনবার টানা ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট প্রতিযোগিতায় জিতে তিনি পৃথিবী সেরার শিরোপা পান; কিন্তু তার ভক্তরা একটা বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন। তারা জানতেন না যে, তাদের এই তারকা দীর্ঘদিন এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন। নিজের পরিচয় এবং বর্ণের পাশাপাশি মুহম্মদ আলীর জীবনে আরো একটি বাধা ছিল তার এই রোগ। তবে আলী কখনো হারেননি। অন্তত অন্য কারো শর্তে তো নয়ই। তা সে কোনো সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধেই হোক বা নিজের শরীরের কোনো ব্যাধির বিরুদ্ধে, তাই আলীও সিদ্ধান্ত নেন, যেকোনো পরিস্থিতিতেই তিনি নিজের মুষ্টির শক্তি ধরে রাখতে চাইতেন। এই মনের জোরেই আলী সাফল্যের উচ্চশিখরে পৌঁছেছেন।

বক্সার হিসাবে যতটা সাফল্য তিনি পেয়েছেন ততটাই সফল সমাজের অন্যান্য সৃষ্টিমূলক কাজেও। আমেরিকার হয়ে ইরাকের তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ২০০২ সালে জাতিসংঘের শান্তির দূত হিসাবে তিনি আফগানিস্তানেও যান। ২০০৫ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ তাকে বিশেষ নাগরিকের সম্মান দেন। বক্সিং জীবনে মাত্র পাঁচবার হারের সম্মুখীন হতে হয়েছে আলীকে। তবে এই পার্কিনসন ডিজিজ তার জীবন থেকে অনেক কিছু সরিয়ে নিয়েছে। তার অনেকটা দায়ই ওই ব্যাধির। কিন্তু এই রোগ অনেক শিক্ষাও দিয়েছে তাকে। যা এই সমাজ তাকে দিতে পারেনি। মানুষের অসহায়ত্ব আর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন তিনি। তাই মানুষের দুর্দিনে সবসময়ই তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন আলী। উদ্দেশ্য একটাই, লড়াইটা যেন বেঁচে থাকে। যোদ্ধা বদলাবে। যুগ বদলাবে। কিন্তু লড়াইয়ের তাগিদ যেন না বদলায়।

0 comments:

Post a Comment