আমাদের নাট্যাঙ্গনের এক উজ্জ্বল নৰত্র, বিশিষ্ট নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় নাটকে জড়িয়ে পড়েন। সেই থেকে আজো আছেন নাটক নিয়েই। জন্ম লক্ষ্মীপুর জেলায়। ১৯৪১ সালের ৯ আগস্ট। ওই শহরেই কেটেছে তার শৈশব-কৈশোর। পাঁচ ভাই বোনের সংসারে ভাইদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। বাবা কুন্ডল কৃষ্ণ মজুমদার ছিলেন অসম্ভব ভাল মানুষ। মা লীলা মজুমদার তাদের সবাইকে গাইড করতেন। রৰণশীল পরিবারে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যেই বেড়ে উঠেছেন।
ক্লাস সিক্সে পড়ার সময়ই নিয়মিত নাটকের মহড়ায় অংশ নিতেন। ম্যাট্রিক পাশ করে কলেজে ভর্তির জন্য চলে গেলেন কুমিল্লায়। সেখানে ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হলেন। কলেজ জীবন শেষ করে ১৯৬১ সালে ঢাকায় আসেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। তখন থেকেই তার ভেতরে নাটকের আকর্ষণটা বাড়তে লাগলো। ঢাকার মঞ্চে তিনি প্রথম অভিনয় করেছিলেন জগন্নাথ হলের বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে। সে সময় উনার চলার পথটা খুব সহজ ছিল না। মফস্বল শহর থেকে এসে ঢাকায় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ওই সময় নাটকের ব্যাপারে অনেক বিধি নিষেধ ছিল সরকারী ভাবে। তবু তারা একের পর এক নাটক করেছে সফলভাবেই। সেকালে মেয়েদের অভিনয় নিয়ে সমাজের মনোভাব ছিল কঠোর। বিখ্যাত নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর 'রক্তাক্ত প্রান্তর' নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ছাত্র-শিৰক নাট্যগোষ্ঠীর মাত্রা শুরু হয়। ওই নাটকে তার চরিত্রটি ছিল ইব্রাহীম কাদরী এবং জোহরা চরিত্রে ছিলেন ফেরদৌসী আরা (আজকের ফেরদৌসী মজুমদার)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র-শিৰক নাট্যগোষ্ঠীর প্রযোজনায় মোট চারটি নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। ক্রীতদাসের হাসি, দন্ড ও দন্ডধর, কৃষ্ণ কুমারী ও ভ্রানত্দিবিলাস। তখন অবশ্য দর্শনীর বিনিময়ে নাটক দেখানো হতো না। দর্শকরা অনেক আগে থেকে ফ্রি টিকেট সংগ্রহ করে নাটক দেখতে আসতো। এতে এরকম শৃঙ্খলা গড়ে ওঠেছিল। দেশ স্বাধীন হবার পর রামেন্দু'রা নতুন নাট্যদল থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করলেন। এখনো থিয়েটারের সাথেই আদি নাটককে সঙ্গী করে।
রামেন্দু মজুমদারের প্রিয় ব্যক্তিত্ব কবিগুরম্ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান পছন্দের খাবার মিষ্টি ও কাবাব। প্রিয় রঙ গ্রে। অবসরে টিভি দেখতে, গান শুনতে ও পত্রিকা পড়তে ভালোবাসেন। জীবন সঙ্গীনি ফেরদৌসী মজুমদারকে নিয়েই বর্তমানে সুখের সময় কাটছে। এছাড়া একমাত্র কন্যা ত্রপা, জামাই আপন আহসান এবং নাতনি আত্রেয়ীই এখন তার সবকিছু। তবে অভিনয়কে তিনি সবসময় উপভোগ করার চেষ্টা করেন।
দীর্ঘ এ সময়ে অসংখ্য মঞ্চ ও টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে মঞ্চে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় চরিত্রটি হলো 'দুইবেলা' নাটকে শশাঙ্ক। ওটাই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিনয় বলে আমি মনে করেন মজুমদার।
0 comments:
Post a Comment