Breaking News
Loading...
Thursday, August 26, 2010

উনিশ শতকে ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে যখন বাংলার মুসলিম সমাজ হতাশাগ্রস্ত, অবনমিত ও অসংগঠিত তখন তাদের সংগঠিত করার জন্য যে কয়জন মনীষী এগিয়ে এসেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুসলিম আধুনিকতার অগ্রদূত ও মুসলমানদের নব জাগরণের স্থপতি নওয়াব আবদুল লতিফ। তিনি ১৮২৮ সালে ফরিদপুর জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। তার পিতা ফকির মাহমুদ ছিলেন একজন আইনজীবী। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে ফকির মাহমুদ তার পুত্রকে আরবির সাথে ইংরিজি ভাষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে কলকাতা মাদ্রাসায় ভর্তি করান।

কর্মজীবন
আবদুল লতিফের কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে। পরবর্তীতে তিনি ইংরেজি ও আরবির অধ্যাপক হিসেবে কলকাতা মাদ্রাসায় যোগদান করেন। ১৮৪৯ সালে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন এবং ১৮৭৭ সালে তিনি প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট পদে উন্নীত হন।

অবদান
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে সাতক্ষীরায় থাকাকালীন সময়ে তিনি সেখানকার দরিদ্র নীল চাষীদের অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশা দূরীকরণে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেন। ১৯৬০ সালে নীল কমিশন গঠনেও তার অবদান ছিল।

১৯৬২ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদের প্রথম মুসলিম সদস্য হিসেবে তিনি মনোনীত হন। ১৯৬৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো মনোনীত হন। শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রেও তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। মুসলমানদের মধ্যে তিনিই প্রথম উপলব্ধি করেন যে, বাংলার মুসলিম যুবক শ্রেণীর আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া উচিত। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আধুনিক শিক্ষা সম্পর্কে মুসলমানদের অনীহার দরুণ তারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে আছে। মুসলমানদের এই আত্মঘাতী কুসংস্কার দূর করার জন্য তিনি সারাজীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষাগ্রহণের জন্য তিনি দুই ধরনের নীতি গ্রহণ করেছিলেন। প্রথমত ব্রিটিশের নতুন শাসন পদ্ধতির সুফল ভোগ করার জন্য মুসলমানদের প্রস্তুত করার এবং দ্বিতীয়ত, ঔপনিবেশিক সরকারের প্রতি তাদের আনুগত্যের ভাব সৃষ্টি করা এবং এভাবে মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের সন্দেহ ও আবিষ্কার দূর করা। তিনি শাসক শ্রেণীর সঙ্গে যে কোনো ধরনের সংঘর্ষ পরিহারের জন্য মুসলমানদের আহ্বান জানান। তিনি জৌনপুরের মাওলানা কেরামত আলীর মাধ্যমে ঘোষণা করেন যে, ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত বর্ষ ‘দারুণ হারব’ নয় বরং ‘দারুল ইসলাম। এভাবে উনিশ শতকে মুসলমানদের প্রধান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। বাংলার মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য তিনি নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৮৬৩ সালে তিনি নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৮৬৩ সালে তিনি কলকাতায় মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ সোসাইটির লক্ষ্য ছিল আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের স্বপক্ষে জনমত গড়ে তোলা এবং শিক্ষিত মুসলমান হিন্দু ও ইংরেজদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তুলে পারস্পরিক কল্যাণ নিশ্চিত কথা। তার প্রচেষ্ঠায় কলকাতা মাদ্রাসায় ইস্ট-ফারসি বিভাগ খোলা হয় এবং সেখানে উর্দু ও বাংলা ভাষা শিক্ষাদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তার চেষ্টার ফলেই মহসীন ফান্ডের টাকা মুসলমানদের শিক্ষার কাজে সংরক্ষিত করা হয়। তার উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ১৮৭৭ সালে তাকে ‘খান বাহাদুর’ ও ১৮৮০ সালে ‘নওয়াব’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৮৮৩ সালে তিনি সি.আই. এবং ১৮৮৭ সালে উচ্চতর সম্মানের প্রতীক ‘নওয়াব বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত হন। উদারপন্থী রক্ষণশীল বাংলার মুসলিম জাগরণে পথিকৃত এ মানুষটির ১৮৯০ সালের ১০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

0 comments:

Post a Comment