আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের গোড়াপত্তনকারী বলে পরিচিত সারা বিশ্বের যে ক’জন শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীর নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে, তাদের মধ্যে লর্ড উইলিয়াম থমসন কেলভিন ছিলেন অন্যতম
কেলভিন ১৮২৪ সালের ২৬ জুন বেলফাস্টে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি তার মাকে হারান। তারপর থেকে তিনি বাবার কাছে বড় হতে থাকেন। কেলভিনের বয়স যখন দশ, তখনি তাকে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়া হয়। ছোটবেলা থেকে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। মাত্র পনের বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পৃথিবীর গঠন প্রকৃতি’ বিষয়ক একটি রচনা প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং স্বর্ণপদক লাভ করেন।
গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল সেকশনে পড়াকালীন তিনি ফ্রান্সের বিখ্যাত তাপ বিজ্ঞানী জোসেফ ফোরিয়ারের ‘অ্যানালাইটিক্যাল থিওরি অব হিট’ গ্রন্থটি পড়ে ফেলেন। তাপ কিভাবে কোন বস্তুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, তা এই গ্রন্থে হিসাব কষে দেখানো হয়েছিল। ১৮৪১ সালে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৮৪৫ সালে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে বি.এ পাস করেন। ওই বছরেই কেলভিন তাপ বিজ্ঞানী জর্জ গ্রিনের বিখ্যাত বই ‘অ্যান এসে অন দ্য অ্যাপ্লিকেশন অব ম্যাথমেটিক্যাল অ্যানালাইসিস ইন দ্য থিওরিস অব ইলেক্ট্রিসিটি অ্যান্ড ম্যাগনেটিজম’-এর একটি কপি হাতে পান। পরবর্তী সময়ে এই বইটি তাকে গবেষণার পথ নির্দেশ দান করেছিল। ক্যামব্রিজে পড়া শেষ করে কেলভিন প্যারিসে যান। সেখানে তিনি পদার্থ বিজ্ঞানের ওপর গবেষণা শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে মাত্র বাইশ বছর বয়সে তিনি গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাচারাল ফিলোসফির শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
যদিও ক্যামব্রিজে থাকার সময় থেকেই তার বিজ্ঞান প্রতিভার স্ফুরণ, কিন্তু তাঁর বিজ্ঞান জীবনের গোড়াপত্তন হয় গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেবার পর থেকে। ১৮৪৭-৪৯ সালের মধ্যে তিনি ব্রিটেনের অন্যতম বিজ্ঞানী জর্জ গ্যাব্রিয়েল স্টোকস-এর সাথে যৌথভাবে হাইড্রোডাইনামিক নীতির ওপর কয়েকটি মূল্যবান প্রবন্ধ রচনা করেন। ১৮৪৮ সালেই তিনি তাপমাত্রা নিরূপণের একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যা কেলভিন স্কেল নামে খ্যাত। ফ্রান্সের পদার্থ বিজ্ঞানী সাদি ক্যারনটের সূত্রের ওপর ভিত্তি করে তিনি তাপমাত্রার এই নতুন স্কেলটি প্রবর্তন করেন। তবে তিনি একটি বিষয়ে একমত ছিলেন না যে, তাপকে শক্তিরূপে সংরক্ষণ করা সম্ভব। ১৮৫১ সালে তিনি ক্যারনটের সূত্রের ব্যাখ্যা করেন। ''On the synthetical theory of heats" নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। তিনি কর্মজীবনে ছয় শ’টির অধিক বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা করেছেন এবং প্রায় এক ডজন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নাম রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তাপমাত্রার পরিমাপ ছাড়াও তার আরো অবদান রয়েছেÑতিনি চুম্বকের গানিতিক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করেছেন। আলোর তড়িৎ-চুম্বকীয় সূত্রের মৌলিক ধারণাও তিনিই দিয়েছেন। সমুদ্রতলের টেলিগ্রাফ পদ্ধতি এবং সমুদ্রের তলদেশে বৈদ্যুতিক ক্যাবলস বসানোর ক্ষেত্রেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য। তাপমাত্রার স্কেল নির্ণয় এবং শক্তির নিত্যতার সূত্র আবিষ্কারের জন্যই ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ১৮৯২ সালে লর্ড উপাধিতে ভূষিত করেন। এরপর তাঁর নাম হয় লর্ড কেলভিন। তিনি ১৮৫১ সালে ব্রিটেনের রয়েল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ১৮৯০ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত সেখানকার সভাপতি ছিলেন।
১৮৯৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর স্কটল্যান্ডের লার্জস-এর নিকটবর্তী নেদারহল নামক শহরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
লর্ড কেলভিন
Info Post
0 comments:
Post a Comment