Breaking News
Loading...
Thursday, September 16, 2010

পটুয়া কামরুল হাসানের জন্ম ১৯২১ সালের ২ ডিসেম্বর বর্ধমান জেলার কালনা থানার নারেঙ্গা গ্রামে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ হাশিম ও মা'র নাম মোসাম্মৎ মালিহা খাতুন। ১৯৩০ সালে কলকাতার তালতলার ইউরোপিয়ান এসাইলাম লেনে অবস্থিত মডেল এম.ই. স্কুলের ইনফ্যান্ট ক্লাস থেকেই কামরুল হাসানের বিদ্যাচর্চা শুরু। অতঃপর বাবার আগ্রহে ১৯৩৭ সালে কলকাতা মাদ্রাসার অ্যাংলো-পার্সিয়ান বিভাগে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি যখন কলকাতা মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন তখন পড়াশোনার চেয়ে ছবি আঁকায় মগ্ন থাকতেন বেশি। ১৯৩৮ সালে অষ্টম শ্রেণিতে উঠে তিনি স্কুলের পড়া বাদ দিয়ে ভর্তি হন কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসে। ধার্মিক পিতার সন্তান হওয়ায় চিত্রকর কামরুল বাড়ি থেকে পড়াশোনার জন্য কোনো খরচ পেতেন না। তাই টিউশনি করে নিজের খরচ চালিয়ে তিনি চারুকলার পাঠ নেন। ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরের সময় পত্রিকায় জয়নুল আবেদিনের স্কেচ দেখে কামরুল হাসানের পিতা ছবি আঁকাকে সমর্থন দেন। এমনকি তার পিতা কবরের গায়ে নকশা আঁকার জন্য কামরুলকে কিছু কাজের ব্যবস্থা করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি চারুকলায় ডিপ্লোমা অর্জন করেন।

তিনি স্কুল জীবন থেকে নিয়মিত শরীর চর্চা করতেন। ১৯৪৫ সালে ইন্টার কলেজ বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায় 'বি' গ্রুপে প্রথম হয়েছিলেন। ১৯৪৩ সাল থেকে কাজী আফসারউদ্দীন সম্পাদিত 'মৃত্তিকা'র প্রচ্ছদ আঁকেন এবং 'মিল্লাত' ও 'আলোড়ন' পত্রিকায় নিয়মিত কার্টুন আঁকতেন। ১৯৪৭ সালের শুরুর দিকে কলকাতা আর্ট স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে জয়নুল আবেদিন, সফিউদ্দীন আহমেদ, আনোয়ারুল হকসহ অনেকে এসে ঢাকায় একটি আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ওই সময় কামরুল হাসান তার শিক্ষকদের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় আর্ট কলেজ। ১৯৬০ সালের ১৬ মার্চ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার প্রধান নকশাবিদ হিসেবে তিনি যোগ দেন। ১৯৭০ সালে দেশব্যাপী ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত মানুষের সাহায্যার্থে তিনি সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সব নকশা আঁকেন। 'এই সব জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে'_ তার বিখ্যাত পোস্টার ওই সময় ব্যাপক আলোচিত হয়। দেশ স্বাধীনের পর তিনি দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চূড়ান্ত নকশা অঙ্কন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সরকারি প্রতীকের নকশা, বাংলাদেশ বিমান, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ সংবিধানের প্রচ্ছদসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ নকশা করেন।

কামরুল হাসান তার চিত্রচর্চার মাধ্যমে এ দেশের আধুনিক শিল্পকলার পুরোধা ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। দেশে-বিদেশে তার শিল্পকলার বেশ কিছু প্রদর্শনী হয়েছে। তার শিল্পকর্ম সংগৃহীত হয়েছে লন্ডনের কমনওয়েলথ ইনস্টিটিউট, জাপানের ফুকুওয়া মিউজিয়াম, ঢাকার শিল্পকলা একাডেমী, জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও সংগ্রহ করেছেন অনেকে। ১৯৫৯ সালে তিনি মরিয়ম বেগমকে বিয়ে করেন। মরিয়ম বেগম বিশিষ্ট নজরুলসংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগমের বোন। তাদের একমাত্র সন্তান সুমনা হক। কামরুল হাসান ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার [তমঘা-ই-পাকিস্তান], ১৯৭৭ সালে কুমিল্লা ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক, ১৯৭৯ স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমীর ফেলোসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন। ডাক বিভাগ তাঁর ছবি নিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। ১৯৮৮ সালে জাতীয় কবিতা পরিষদের অনুষ্ঠানে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন; পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তিনি প্রয়াত হন। তাকে সমাহিত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কাজী নজরুল ইসলাম ও জয়নুল আবেদিনের সমাধির পাশে। -

0 comments:

Post a Comment