বাংলাদেশের জারি গানের কিংবদন্তি শিল্পী হেলিম বয়াতি। ১৯৪০ সালে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়ার দিগলকুশা গ্রামে তার জন্ম। বিখ্যাত পুঁথিপাঠক মিয়া চানের ছেলে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে হেলিম তার বাবার কাছে পুঁথি পাঠের তালিম নেন। তারপর বাবার সঙ্গে বিভিন্ন আসরে তিনি পুঁথিপাঠ করে দর্শকদের মাতিয়ে দিতেন। মাত্র অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে তিনি জীবিকার সন্ধানে বের হন। সংসারের দায়িত্ব নিয়ে তিনি জারি গানের প্রতি প্রচণ্ডভাবে ঝুঁকে পড়েন। ওই সময় তিনি 'বিষাদ-সিন্ধু' কিনে পুরোটাই মুখস্থ করে ফেলেন। এরপর নিজ গ্রামের আবদুস সোবহান বয়াতির কাছে সুর, রাগ এবং প্রশ্নোত্তর শেখার তালিম নেন। পারিবারিক বাধা উপেক্ষা করে বড় বোন বেগম আছিয়ার সহযোগিতায় তিনি জারি গানের দক্ষ শিল্পী হয়ে ওঠেন। এমনকি কালেঙ্গা, জাউলা, কেন্দুয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে তিনি জারি গান পরিবেশন করেন। তিনি বলেন, আমি ছেলেবেলা থেকে জারি গানের প্রতি আকৃষ্ট হই। তখন থেকে আমি বিভিন্ন আসরে গান গাইতাম। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অনেক বয়াতি আমার সঙ্গে হেরে যায় এবং আমি পুরস্কৃত হই। 'শহীদে কারবালা', 'জঙ্গনামা', 'ইমাম হাসান হোসেন', 'বিষাদ সিন্ধু'সহ বিভিন্ন রকমের পালা আমার মুখস্থ।'
বিষাদ সিন্ধুর ৩ পর্বে ৬১টি প্রবাহ। মহরম পর্বে ২৬টি প্রবাহ। উদ্ধার পর্বে ৩০টি প্রবাহ। এজিদ-বধ পর্বে ৫টি প্রবাহ। এছাড়াও একটি মুখবন্ধ, ১টি উপক্রমনিকা ও ১টি উপসংহার আছে। এই নিয়ে বিষাদ সিন্ধু। হেলিম বয়াতির বর্তমান বয়স ৭০ বছর। আজও তিনি নিয়মিতভাবে জারি গান পরিবেশন করেন। তার নিজস্ব জারি গানের দল রয়েছে। সে দল নিয়ে তিনি বাংলা একাডেমী, ছায়ানট, শিল্পকলা একাডেমীতে জারি গান পরিবেশন করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে কয়েকবার জারি গান পরিবেশন করেছেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক গবেষক বাংলাদেশের জারি গান নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করছেন_ তার প্রধান রিসোর্স পারসন হেলিম বয়াতি। বর্তমানে তিনি সন্তান, স্ত্রীকে নিয়ে দিগলকুশাতেই বসবাস করছেন। তাকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী চলতি বছর বিশেষ সম্মাননা জানিয়েছে।
আলপনা বেগম, নেত্রকোনা
হেলিম বয়াতি
Info Post
0 comments:
Post a Comment