Breaking News
Loading...
Thursday, October 28, 2010

অমর সংগীতশিল্পী আব্বাস উদ্দিন ছেলেবেলায় ছিলেন সংগীতপ্রিয়। তার জম্ম ১৯০১ সালের ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার তুফানগঞ্জের বলরামপুর গ্রামে। পিতা জাফর আলী আহমদ ছিলেন তুফানগঞ্জ আদালতের উকিল। তিনি তুফানগঞ্জ স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং পরে কুচবিহার কলেজ থেকে আইএ পাস করলেও বিএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। এরপর সংগীতচর্চাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কমল দাশগুপ্ত, জগত ঘটক, ইন্দু বালা, আঙ্গুর বালাসহ অসংখ্য শিল্পীর সঙ্গে। কবি নজরুলের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবেও তার সমধিক পরিচিতি ছিল। এমনকি তারই অনুপ্রেরণায় নজরুল ইসলামী গজল, ঠুমরী গান রচনা করেছিলেন। 'ওই মন রমজানের ওই রোজার শেষে' গানটি আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠে ১৯৩০ সালে প্রথম কলকাতার গ্রামোফোন কোম্পানি হিজ মাস্টার্স ভয়েস থেকে নজরুলের 'কোন বিরহিণীর নয়ন জলে', 'স্মরণ পারের ওগো প্রিয়', 'বন্ধু আজো মনে পড়ে' গানের রেকর্ড বের হয়। এরপর থেকে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। একসময় কলকাতার হিজ মাস্টার্স ভয়েজ, গ্রামোফোন রেকর্ড, অল ইন্ডিয়া রেডিওতে তার গান প্রতিনিয়ত বাজত।

আব্বাস উদ্দিনের মূল পরিচয় ছিল পল্লীগীতির গায়ক হিসেবে। তার কণ্ঠে 'ওকি গাড়িয়াল ভাই' 'ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে', 'আল্লা মেঘ দে পানি দে' ইত্যাদি গান আজও গ্রামের মানুষের কণ্ঠে অনুরণীত হয়। অতুলনীয় ছিল তার গলার সুর। কোনো গান এক-দুইবার শুনলেই তা আয়ত্ত করেত পারতেন। অথচ তিনি কোনো ওস্তাদের কাছে গান শেখার সুযোগ পাননি। নিজের সাধনা ও চেষ্টায় গান শিখেছেন। তিনি কবি নজরুল, জসীমউদ্দীন, গোলাম মোস্তফার রচিত ইসলামী ভাবধারার গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। একাধারে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, জারি, সারি, মুর্শিদি, দেহতত্ত্ব, বিচ্ছেদী ও পল্লীগীতির অসাধারণ এক গায়ক ছিলেন তিনি।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ঢাকার পুরানা পল্টনের হীরামন মঞ্জিলে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রচার বিভাগে এডিশনাল অর্গানাইজার হিসেবে যোগ দেন। তিনি পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৫৫ সালে ম্যানিলায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সংগীত সম্মেলন, ১৯৫৬ সালে জার্মানিতে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলন এবং ১৯৫৭ সালে রেঙ্গুনে প্রবাসী বঙ্গ-সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার তাকে মরণোত্তর প্রাইড অব পারফরমেন্স, ১৯৭৯ সালে শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার এবং ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সরকার মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়। তার বড় ছেলে মোস্তাফা কামাল দেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। কনিষ্ঠ পুত্র মোস্তফা জামান আব্বাসী ও কন্যা ফেরদৌসী রহমান দেশের অন্যতম প্রধান কণ্ঠশিল্পী। এই গুণী শিল্পী ১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় মুত্যুবরণ করেন।

সংগ্রহ:বাঙলাদেশ প্রতিদিন

0 comments:

Post a Comment