Breaking News
Loading...
Thursday, October 14, 2010

নাট্যকার, কবি, চিত্রনাট্য রচয়িতা, অভিনেতা ও নির্দেশক হ্যারল্ড পিন্টার। ১৯৩০ সালের ১০ অক্টোবর পূর্ব লন্ডনের হ্যাকনিতে ইহুদি ধর্মাবলম্বী পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন দর্জি। কৈশোরে লিটল ম্যাগাজিনে কবিতা লেখার মাধ্যমেই তার লেখালেখি শুরম্ন। অভিনয় শেখার জন্যে ভর্তি হন রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টে। সেখান থেকে পাস করার পর ডেভিড ব্যারন ছদ্মনামে অভিনেতা জীবন শুরম্ন করেন। হ্যারল্ড পিন্টার ১৯৫৭ সালে প্রথম নাটক লেখায় হাত দেন, এবং লিখেন 'দ্য রম্নম' যা সে সময়ে ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটিতে মঞ্চায়িত হয়। এরপর থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর বিশ্বখ্যাত নাটকগুলো। কিন্তু এসবের বাইরেও একটি পরিচয় তাঁর রয়েছে। তিনি একজন কবি। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে কাব্যচর্চা শুরম্ন করে সারা জীবন ধরেই তিনি তা অব্যাহত রেখে চলেছেন। অভিনেতা হিসেবে কাজ করার সময় থেকে তিনি ছোট ছোট প্রবন্ধও লিখতে শুরম্ন করেন। পিন্টার শুধু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীই নন, যে কোনো ধরনের আগ্রাসনবিরোধী শিল্পী। তাঁর এই বিরোধী মনোভাব প্রবলভাবে প্রকাশ পায় কবিতায়। বোধ করি কবিতাকেই পিন্টার তাঁর প্রতিবাদের প্রধান শিল্পিত উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সামপ্রতিক সময়ে সাম্র্রাজ্যবাদ ও আগ্রাসনবিরোধী এত কবিতা আর কোনো শিল্পীর নামের পাশে দেখা যায়নি।

নিজের অসত্দিত্বে নিজেই যেন প্রবল আত্নবিশ্বাসী এই মানুষটি যেন নিজেকে প্রতিনিয়ত ভাঙ্গা গড়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি সবসময়ই ছিলেন হ্যারল্ড পিন্টার, নিজের শোর তারকা, খুবই একা কিন্তু ভয়াবহভাবে খাঁটি, সতিক্যারের এক শিল্পী। ইংলিশ মঞ্চ প্রথায় মহত্তম সৃষ্টিগুলোর মতো, যেখানে তিনি ছিলেন জীবনত্দ উপাদান। হ্যারল্ড নাটক লেখার আগেই ছিলেন একজন কবি। তার প্রায় সবগুলো বিষয়বস্তু, বিশেষ করে তার প্রথমদিকের নাটক যেমন দ্য বার্থডে পার্টি, দ্য কেয়ারটেকার, দ্য হোমকামিং থেকে স্বতন্ত্র। সেগুলো ছিল যুদ্ধ-পরবর্তী দিনগুলো নিয়ে। অদ্ভুত ও দারম্নণ গীতিময় তার প্রথম উপন্যাস ডোয়ার্ফস- এগিয়ে গেছে বিদ্রোহী এক বইপাগল কিশোরকে কেন্দ্র করে, যে তার বন্ধুদের নিয়ে হ্যাকিনির রাসত্দায় রাসত্দায় ঘুরে বেড়ায়। সমমনা এ চক্রের সবাই শিল্পী হতে চাই এবং সবচেয়ে আরাম বোধ করে চালবাজ ও বহিরাগতদের সঙ্গে সময় কাটাতে।

নাট্যজন পিন্টারের নাটকে বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে অসত্দিত্ববাদী সমস্যাক্রানত্দ মানুষের বিভিন্ন দিকের গভীর উন্মোচন রয়েছে।

দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ইউরোপজুড়ে অ্যাবসার্ড নাটকের উৎপত্তি ও বিকাশ। ইউজিন আয়েনেস্কো, স্যামুয়েল বেকেট, জ্যাঁ জেনে, অ্যাডওয়ার্ড অ্যালবি সেই ধারার পুরোধা পুরম্নষ। পিন্টারও ওই ধারার অনুবর্তী এবং সফল নাট্যজন। অ্যাবসার্ডধর্মিতা তাঁর নাটকে রয়েছে এবং স্যামুয়েল বেকেট পিন্টারের প্রিয় নাট্যকার। তবু পিন্টারের নাটকগুলো পুরোপুরি অ্যাবসার্ড না হয়ে ভিন্ন এক মাত্রাগত সমৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা সম্পূর্ণই তাঁর নিজস্ব। সে আঙ্গিককে পিন্টারীয় স্টাইল বলা যেতে পারে। পিন্টারের স্বাতন্ত্র্য তাঁর রাজনৈতিক বিবেচনা এবং সচেতনতাপ্রসূত। পিন্টারকে নাটকে সচেতন রাজনৈতিক ভাষ্যকার বললেও বেশি বলা হয় না বলেই বিবেচনা করি। নাট্যশিল্পী পিন্টার এসব বিষয় কবিতাতেও এড়িয়ে যায়নি। ফলে তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিবাদ। স্যাটায়ারের পাশাপাশি একই শব্দের বহুমাত্রিক ব্যবহার তাঁর কবিতায় ভিন্নভাবে ধরা দিয়েছে।

জীবনের প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতা শুষে নাটকের উপাদান উন্মোচন করা ছিল তার স্বভাব। রাশান-ইহুদি যুগল জাতিস্বত্ত্বার মিশেল সনত্দান হিসেবে এন্টি-সেমেটিক মনোভাবের মুুখোমুখি তাকে হতে হয়েছে। যুদ্ধের বিষয়ে তিনি ছিলেন কড়া সমালোচক। তার পরিবার এটা থেকে তাকে বিরত থাকতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তার ইংরেজ গুরম্ন, যাকে পিন্টার রীতিমতো শ্রদ্ধা করতেন, একবার বলেছিলেন, সে যদি জেলে যেতে চায় তাহলে সে যাবেই, তা আপনার পছন্দ হোক বা না হোক। সুতরাং যথারীতি পিন্টার একবার কোর্টে গিয়েছিলেন এবং জরিমানা গুনতে হয়েছিল তাকে। এই প্রতিবাদী শিল্পী বিশ্বসাহিত্যে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৫ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। ক্যান্সারে আক্রানত্দ হয়ে দীর্ঘদিন ভোগার পর ২০০৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি মারা যান হন। ১০ অক্টোবর এই মহান শিল্পী ও মানুষটির ৮০তম জন্মদিন ছিল।

0 comments:

Post a Comment