Breaking News
Loading...
Wednesday, November 3, 2010

শুদ্ধতার স্বপক্ষে উচ্চকিত বিশিষ্ট সঙ্গীতগুরু, রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চার বিকাশের অন্যতম পথিকৃত্, সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার সাহসী কর্ণধার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কলিম শরাফীর জন্ম ১৯২৪ সালের ৮ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সিউড়ী মহকুমার খয়রাডিহি গ্রামে।

লড়াকু শিল্পী কলিম শরাফী ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ বিরোধী ছাড়ো আন্দোলনে সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণে এক বছরেরও বেশি কারারুদ্ধ ছিলেন।

কলকাতায় রবীন্দ্রসঙ্গীতে শিক্ষাগ্রহণের পর সেখানে তিনি কিছুকাল রবীন্দ্রসঙ্গীতে শিক্ষকতাও করেন। আইপিটিআই বা ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের মধ্য দিয়ে কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন গণজাগরণের গান। এই অগ্রসরের পথে আর ছেদ পড়েনি। এরপর থেকে তিনি আশ্রয় নেন রবীন্দ্র সঙ্গীতে। কিন্তু মানব মুক্তির মিছিল ছাড়েননি তিনি।
১৯৫০ সালে তিনি ঢাকায় চলে যান ও সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। কলিম শরাফী ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছিল তার সরব উপস্থিতি। সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবেও কলিম শরাফী একটি স্মরণীয় নাম। তিনি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ছিলেন এবং গণমানুষের জন্য সংস্কৃতি চর্চার পথ উন্মুক্ত করার ব্রত নিয়েছিলেন। পেছন ফিরে তার অনেক কৃতকর্মের সাক্ষ্য মেলে। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় টিভি সেন্টার চালু হলে তিনি অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পান। ’৬৭তে চাকরি ছেড়ে ’৬৮ সালে ব্রিটিশ রেকর্ড কোম্পানির পূর্ব পাকিস্তানের জেনারেল ম্যানেজার পদ লাভ করেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনে চিফ ইনফরমেশন অফিসার হিসেবে যোগ দেন। একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। এক কথায় বর্ণাঢ্য জীবন।

পুনশ্চ, চলচ্চিত্রেও তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। সূর্যস্নান ছবিতে গেয়েছেন—‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে...’। একটি ছবি বানিয়েছিলেন ‘সোনার কাজল’ নামে। রমেশ শীলের জীবনী নিয়ে তৈরি করেছেন তথ্যচিত্র।

১৯৪৬ সালে গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে বের হয় কলিম শরাফীর প্রথম গণসঙ্গীতের রেকর্ড। ’৫১ সালে চট্টগ্রামে গড়ে তোলেন ‘প্রান্তিক সংগঠন’। পূর্ববাংলায় তখন তিনি ছিলেন বিখ্যাত নবনাট্য আন্দোলনের প্রথম প্রতিনিধি। ১৯৮৩ সালে ‘সঙ্গীত ভবন’ নামে একটি সঙ্গীত বিদ্যালয় গড়ে তোলেন এবং এর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শুধু আচার-উচ্চারণ আর প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় নিখুঁত সুদ্ধাচারীই ছিলেন না, নিজেকে জাহির করার বেলায় ছিলেন অসাধারণ সংযমী। সম্ভবত সে জন্যই সাড়ে আট দশকেরও বেশি দীর্ঘ জীবনে তার গানের অ্যালবাম বেরিয়েছে মাত্র পাঁচটি। কৃতিকর্মের স্বীকৃতিও তাঁর একেবারে কম নয়। সঙ্গীতে অনন্য অবদানের জন্য পেয়েছেন একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, বাংলা একাডেমীর রবীন্দ্র পদকসহ বহু সম্মাননা।
২ নভেম্বর ২০১০ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় তাঁর নিজ বাসভবনে ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কলিম শরাফী।

0 comments:

Post a Comment