Breaking News
Loading...
Wednesday, December 15, 2010

জর্জ হ্যারিসন বিংশ শতাব্দীর প্রতিভাবান গায়ক ও গিটারিস্ট। তিনি সংগীত পরিচালনা, রেকর্ড প্রযোজনা এবং চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন। বিশ্ব বিখ্যাত সংগীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু। প্রতিটি বাংলাদেশির কাছে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। যিনি অস্ত্র হাতে নন, গিটার আর গান দিয়ে যুদ্ধ করেছেন খুব দূরের অচেনা কিছু মানুষের জন্য। তাঁর জন্ম হয়েছিল ২৫শে ফেব্রুয়ারী ১৯৪৩ সালে ইংল্যান্ডের লিভারপুল শহরে। তিনি কার্ল হ্যারিসন নামেও বেশ পরিচিত।

চার ভাইবোনের মাঝে হ্যারিসন ছিলেন ছোট। বড়বোন লুইসের জন্ম ১৬ আগস্ট ১৯৩১ ষালে। বড় ভাই হ্যারি ১৯৩৪ সালে এবং ছোট ভাই পিটার ২০ জুলাই ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহন করেন। তার মায়ের একটি দোকান ছিল। বাবা বাসের কন্ডাটর ছিলেন। হ্যারিসনের পরিবার ছিল রোমান ক্যাথলিক।

তাঁর স্কুল জীবনের শুরু হয় ডোভডেইল প্রাইমারি স্কুলে, যেখানে পড়ালেখা করেছেন বিটলসের আরেক কিংবদন্তি জন লেনন। ভালো রেজাল্ট করার সুবাদে তিনি লিভারপুল ইনস্টিটিউট অফ বয়জ-এ পড়ালেখা করার সুযোগ পান। সেখানে তিনি ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। ১৪ বছর বয়সে তাঁর গিটারের প্রতি ঝোঁক বাড়ে, ক্লাসের ব্যাকবেঞ্চে বসে গিটারের ছবি আঁকাই নেশা হয়ে দাঁড়ায় 'আমি তখন গিটারে পুরোপুরি ডুবেছিলাম। আমাদের স্কুলের একটা ছেলে তখন ৩ পাউন্ড ১০ পেনি দিয়ে ১টা অ্যাকুয়েস্টিক গিটার কিনেছিল। যদিও তখনকার সময়ে সেটা অনেক টাকা ছিল, মার কাছ থেকে টাকা নিয়ে জীবনের প্রথম গিটারটি কিনলাম।' সেই স্কুলে হ্যারিসনের সঙ্গে পরিচয় হয় পল ম্যাককার্টনির সঙ্গে। পল ম্যাককার্টনি লেননের 'দ্য কোয়ারিম্যান' ব্যান্ডে যোগ দেন, পরে সেটাই হয় দিগ্বিজয়ী দ্য বিটলস। ম্যাককার্টনি হ্যারিসনকে দলে নেয়ার জন্য লেননকে অনুরোধ করেন। ১৯৫৮ সালে হ্যারিসন সেই ব্যান্ডে যোগদান করেন। বিটলসে সবার ছোট ছিলেন হ্যারিসন। প্রথমদিকে কম বয়সের অযুহাতে লেনন এবং ব্যান্ডের অন্য সদস্যরা তাঁকে নিতে গড়িমসি করলেও পরে হ্যারিসনের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে দলে নেন। ১৫ বছর বয়সে হ্যারিসন সেই ব্যান্ডের পুরোদস্তুর সদস্য হয়ে যান।

১৬ বছর বয়সে তিনি স্কুল ছেড়ে স্থানীয় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কাজ শুরু করেন। ১৯৬০ সালে বিটলসের সঙ্গে হামবুর্গে ব্যান্ডের সঙ্গে পারফর্ম করেন। হ্যারিসনের সেই পারফরম্যান্স তাঁকে মিউজিকের ওপর বৃত্তি এনে দেয়, সেখানে তিনি টনি শেরিডানের কাছ থেকে গিটারের ওপর তালিম নেন। এ শিক্ষাই বিটলসের সঙ্গীত এবং হ্যারিসনের শান্ত পারফরম্যান্সের ভিত্তি তৈরি করে দেয়। জর্জ হ্যারিসন তাঁর এ নীরব অংশগ্রহণের কারণে 'শান্ত বিটলস' খ্যাতি পান। বৃত্তি পেলেও হ্যামবুর্গে হ্যারিসনের বেশি দিন থাকা হয়নি। অল্প বয়সের কারণে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
১৯৬১ সালের নভেম্বরে বিটলসের প্যারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে ব্রায়ান এপ্সটেইন ব্যান্ডটির ম্যানেজারের দায়িত্ব নেন। ১৯৬৩ সালে এমির ব্যানারে তাদের প্রথম অ্যালবাম রিলিজ পায়; ততদিনে বিটলস উন্মাদনা ছড়িয়ে গেছে পূরো বিশ্বে। তার আগে ১৯৬২ সালে অ্যালবামের প্রথম সিঙ্গেল গান ইউকে চার্টে ১৭ নম্বরে জায়গা করে নেয়। মূলত জর্জ হ্যারিসন লিড গিটারিস্ট হলেও বিটলসের প্রতিটি এলবামেই জর্জ হ্যারিসনের নিজের লেখা ও সুর দেয়া দু'একটি একক গান থাকত যা তাঁর প্রতিভার পরিচায়ক ছিল। এরপরের অংশটুকু শুধুই বিটলস এবং হ্যারিসনের সাফল্যগাথা। অলিভিয়া হ্যারিসন বিটলস তারকা জর্জ হ্যারিসনের স্ত্রী। জর্জ হ্যারিসন ফান্ড ফর ইউনিসেফের প্রধান। মূলত বাংলাদেশে পরিচালিত কর্মসূচিতে সহায়তা দেয়া হয় এ তহবিল থেকে।

তিনি বিটলস্ ব্যান্ডর সাথে যুক্ত হবার আগে দি কুয়্যেরিমেন নামের একটি দলে ছিলেন। ১৯৬০ সালে তিনি বিখ্যাত ব্যান্ড দল দ্যা বিটলস্ এ যোগদেন।তার লেখা এবং সুরকরা প্রথম গান বিটলস্ এর বিখ্যাত গান ডোন্ট ব্রাদার মি। জর্জ হ্যারিসন দ্য বিটল্‌স ত্যাগ করার আগে সোলৌ এ্যালবামের কাজ শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে তার দুটি এ্যালবাম (ওয়ান্ডার ওয়াল মিউজিক এবং ইলেক্ট্রনিক সাউন্ড ) রিলিজ পায়।

১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পন্ডিতজী (পন্ডিত রবি শংকর) বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা এবং মুক্তিসেনা ও সরনার্থী শিবিরের জন্য জনমত ও তহবিল গঠনের লক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন এবং বন্ধু জর্জ হ্যারিসনের সাথে দেখা করেন। তিনি জর্জ হ্যারিসনকে সকল বিষয় খুলে বললে ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ১৯৭১ সালের ১লা আগষ্টে এক বেনিফিট সঙ্গীত অনুষ্ঠানের কনসার্ট ফর বাংলাদেশ আয়োজন করেছিলেন। যেখানে বব ডিলান, জন লেলন, জর্জ হ্যারিসন, পন্ডতজী, দ্যা বিটলস্ সহ আরও অনেকেই অংসগ্রহন করেন।এখানে সকলেই দুটি করে গান পরিবেশন করেন।তবে জর্জ হ্যারিসন এর গাওয়া বাংলাদেশ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। গানটি আজও সকল বাংলাদেশীর প্রানে বাজে।এই কনসার্ট হতে সংগৃহীত ২,৫০,০০০ ডলার মুক্তিসেনা ও সরনার্থী শিবিরের কল্যানের জন্য দেয়া হয়। ২০০৫ সালে Apple Corporation এবং UNICEF এর যৌথ উদ্দ্যগে এই কনর্সাটের সিডি ও ডিভিডি রিলিজ করা হয়।
তাঁর বিচরণের ক্ষেত্র ব্যাপ্ত ছিল সঙ্গীত পরিচালনা, রেকর্ড প্রযোজনা এবং চলচ্চিত্র প্রযোজনা অব্দি।মূলত: লীড গিটারিস্ট হলেও বিটলসের প্রতিটি এলবামেই জর্জ হ্যারিসনের নিজের লিখা ও সুর দেয়া দু’একটি একক গান থাকতো যা তাঁর প্রতিভার পরিচায়ক ছিল।
বিটলস্ ভেঙ্গে যাবার পরও তাঁর জনপ্রিয়তা কমেনি। সত্তুরের পরবর্তী সময়ে তাঁর অনেক গান প্রচন্ড জনপ্রিয় হয়েছিল।
বিটলস্ এর হয়ে জনপ্রিয় গানগুলো-
* ইফ আই নিডেড সামওয়ান
* ট্যাক্সম্যান
* হোয়াইল মাই গীটার জেন্টলী উইপস্
* হেয়ার কামস্ দ্য সান এবং
* সামথিং
হ্যারিসনের একক গাওয়া জনপ্রিয গানগুলো-
* মাই সুইট লর্ড
* গিভ মি পিস অন আর্থ
* অল দোজ ইয়ার্স এগো
* গট মাই মাইন্ড সেট অন ইউ

এই মহান শিল্পী ২৯ নভেম্বর ২০০১ সালে ৫৮ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেসে নিজ বাড়ীতে মৃত্যু বরন করেন।

লিখেছেন : ৬ টি তারএসএম নাজমুল হক ইমন

0 comments:

Post a Comment