Breaking News
Loading...
Saturday, January 1, 2011

রাসূলুল্লাহ (স.)-এর ঔরসে বিবি খাদিজার গর্ভে ষষ্ঠ ও সর্ব কনিষ্ঠা সন্তান হযরত ফাতেমা জোহরা (রা.) নবুয়্যাতের পাঁচ বছর পূর্বে এবং রাসূলুল্লাহ (স.)-এর ৩৫ বছর বয়সে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। হিজরী দ্বিতীয় সালের রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কলিজার টুকরাসম ফাতেমা জোহরাকে আবু তালেবের পুত্র হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সময় হযরত আলীর বয়স ছিল ২১ বছর ৫ মাস এবং হযরত ফাতেমার বয়স ছিল ১৫ বছর ৫ মাস। 'রাসূলুল্লাহ (স.) এর ওফাতের ছয় মাস পর মা ফাতেমার ইন্তেকাল হয়। এই হিসাব অনুযায়ী মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ২৮ বছর।

এই বর্ণনা মতে জানা যায়, হযরত ফাতেমা নবুয়্যতের প্রথম বর্ষে জন্মগ্রহণ করেন। এই প্রসঙ্গে ইবনে ইসহাক লিখেছেন যে, একমাত্র ইব্রাহীম ছাড়া রাসূলুল্লাহ (স.) এর সব কয়টি সন্তানই নবুয়্যত লাভের পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। আবার কেউ বলেছেন- যে বছর নবুয়্যত লাভ হয় সেই বছর অহী প্রাপ্তির অব্যবহিত পূর্বেই হযরত ফাতেমার জন্ম হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে ইবনুল জাওবী বলেন- নবুয়্যত লাভের পাঁচ বছর পূর্বে যখন কাবাগৃহ সংস্কার করা হচ্ছিল, তখন হযরত ফাতেমার জন্ম হয়।

পুর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, হিজরী দ্বিতীয় সনে হযরত আলীর সাথে তাঁর বিয়ে দেয়া হয়।

হযরত আলী সম্পর্কে এক বর্ণনায় আছে যে, তিনি আট বছর বয়সে ইসলাম কবুল করেন। সেই হিসেব অনুসারে বিবাহের সময় তাঁর বয়স হওয়ার কথা একুশ বছর পাঁচ মাস।

হযরত আলীর তরফ হতে বিবাহের প্রস্তাব আসার পর রাসূলুল্লাহ (স.) তাঁকে ডেকে জিজ্ঞস করলেন- মোহরানা আদায় করার মতো কোন কিছু তার আছে কি? হযরত আলী উত্তর করলেন- একটি মাত্র ঘোড়া ও একটি বর্ম (যুদ্ধের জন্য ব্যবহূত লোহার পোশাক) রয়েছে। তুমি বর্মটি বিক্রয় করে মোহরানার খরচ সংগ্রহ কর। হযরত আলী বর্মটি ৪৮০ দিরহামের বিনিময়ে হযরত উসমানের নিকট বিক্রয় করলেন। রাসূলুল্লাহ (স.) অর্থ দিয়ে হযরত বেলালকে বাজারে পাঠালেন যেন কিছু সুগন্ধি কিনে আনা হয়। বেলাল সুগন্ধি নিয়ে আসলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (স.) হযরত আলীর সাথে ফাতেমাকে অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে বিয়ে দিলেন।

এছাবাতে উলেস্নখ আছে যে, কন্যা বিদায়ের সময় রাসূলুল্লাহ (স.) একটি খাটিয়া, বিছানা, একটি আটা পিষার চাক্কি এবং পানি তোলার একটি মশক উপঢৌকন দিয়েছিলেন। শেষোক্ত জিনিস দুটি মা ফাতেমার মৃতু্য পর্যন্ত তাঁর সাথে ছিল।

বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত হযরত আলীর কোন বাড়ি-ঘর ছিল না। তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সংসারেই থাকতেন। বিবাহের পর মা ফাতেমাকে নিয়ে বাস করার জন্য যখন বাড়ির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল, তখন হারেস বিন নো'মান আনসারী তাদের বাস করার মতো একটি বাড়ি দিলেন। হযরত ফাতেমাকে নিয়ে হযরত আলী সেই বাড়িতে উঠে আসলেন এবং বসবাস করতে লাগলেন।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) সব সময় জামাতা আলী ও কন্যা হযরত ফাতেমার মাঝে মধুর সম্পর্ক বজায় রাখার মতো পরিবেশ ও অবস্থা গড়ে তুলবার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতেন। সাংসারিক ব্যাপারে উভয়ের মধ্যে কোনরকম মনোমালিন্য দেখা দিলে স্বয়ং তিনি উভয়ের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দিতেন এবং উভয়ের সুখময় সংসার আরো সুন্দর ও প্রাণবন্ত করে তুলতেন।

একদিন এমনি একটি দাম্পত্য কলহ মিটিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হাসিমুখে মা ফাতেমার বাড়ি হতে প্রত্যাবর্তন করছিলেন। তাঁর নূরানী চেহারা মোবারকে আনন্দের ঝিলিক খেলে বেড়াচ্ছিল। পথিমধ্যে জনৈক সাহাবীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কিছুক্ষণ আগেও আমরা আপনাকে উদ্বিগ্ন দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন যে আপনাকে বড়ই হাসি-খুশি দেখছি, এর কারণ কী? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনএইমাত্র আমি আলী ও ফাতেমার মাঝে দাম্পত্য কলহ মীমাংসা করে এসেছি। তারা দু' জনই আমার কাছে বড় আদরের। তারা আজ আনন্দিত। সে আনন্দের লহমা আমার চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে।

একবার হযরত আলী নিজের অজান্তে মা ফাতেমার প্রতি রুক্ষ ব্যবহার করে বসলেন। মা ফাতেমা রাসূলুল্লাহ (সঃ) দরবারে অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হলেন। পেছনে পেছনে হযরত আলীও বিমর্ষ বদনে দোজাহানের সম্রাটের দরবারে হাজির হলেন। মা ফাতেমার অভিযোগ শ্রবণ করে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেন, ওগো আমার নয়নের পুত্তলী মা ফাতেমা! তোমার বুঝা উচিত যে, আলী কেমন হূদয়বান স্বামী যে এমন পরিস্থিতিতেও বিমর্ষ বদনে নীরবে স্বীয় স্ত্রীর কাছে চলে আসে। এই কথায় হযরত আলীর অন্তরের ভয়-ভীতি ও জড়তা নিমিষে দূর হয়ে গেল। শ্রদ্ধায়, লজ্জায় মাথা আপন হতে নুয়ে আসল। তারপর তিনি হযরত ফাতেমার সামনে বিনম্র স্বরে এই প্রস্তাব করলেন যে, আর কোনদিন আমি তোমার রুচিবিরুদ্ধ কোন কথা মুখে উচ্চারণ করব না। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) মুচকি হাসলেন। মা ফাতেমাও না হেসে পারলেন না। তিনি হযরত আলীর দিকে চেয়ে বললেন চলুন বাড়ি যাই। একবার হযরত আলী দ্বিতীয় একটি বিবাহ করতে মনস্থ করলেন। মা ফাতেমা ও স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) এতে দারুণ মর্মাহত হন। মসজিদে নববীতে খুৎবাহ দেয়ার সময় তিনি বললেন মা ফাতেমা আমার কলিজার টুকরাসম। তাকে কষ্ট দেয়া আমাকেই কষ্ট দেয়া হবে। এই কথা শুনে হযরত আলী চমকে উঠলেন। তিনি দ্বিতীয় বিয়ের সংকল্প পরিত্যাগ করলেন। তাই দেখা যায় মা ফাতেমা যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন হযরত আলী কখনো তাঁর সামনে রুক্ষ কথা বলেননি এবং দ্বিতীয় বিবাহও করেননি।

হযরত আলীর ঔরসে মা ফাতেমার পাঁচজন সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। (১) হযরত হাসান (রাঃ), (২) হযরত হোসাইন (রাঃ), (৩) হযরত মোহসিন (রাঃ)। মোহসিন অতি শৈশবেই ইন্তেকাল করেন। দুই কন্যাঃ (১) হযরত উম্মে কুলসুম ও (২) হযরত জয়নাব। দ্বীন ও ঈমানের নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এদের সকলেই ইসলামের ইতিহাসের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছেন।

-ফারুক আজম

0 comments:

Post a Comment