Breaking News
Loading...
Thursday, January 27, 2011

ডিউক এবং ডাচেস অব ইয়র্কের (পরে রাজা পঞ্চম জর্জ এবং কুইন এলিজাবেথ) জ্যেষ্ঠ কন্যা এলিজাবেথ আলেকজান্ড্রা মেরির জন্ম ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল, ১৭ ব্রুটন স্ট্রিটে। রাজ পরিবারের চোখ ধাঁধানো জৌলুসের মাঝে বড় হয়ে ওঠা রানী বিশ্বের অন্যতম ধনবতী নারীও বটে। এ পর্যন্ত ২৩টি সমুদ্রগামী জাহাজ তার নামে পানিতে ভাসানো হয়েছে, তিনি ৩৩টি কর্গি জাতের কুকুরের মালিক, ভ্রমণ করেছেন ১৩০টিরও বেশি দেশ, তার ১৪০টি ছবি আঁকা হয়েছে এবং তিনি এ পর্যন্ত কমপক্ষে দশ লাখ চিঠির জবাব দিয়েছেন।


এলিজাবেথকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা দেওয়া হয় বাকিংহাম প্যালেসের চ্যাপেলে। এলিজাবেথ কোনোদিনই স্কুলে যাননি। তাকে বাড়িতে পড়িয়েছেন গভর্নেস মেরিয়ন ক্রফোর্ড।

এলিজাবেথ ১৯৩৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাকিংহাম প্যালেসে বসবাসের সুযোগ পান তার বাবা রাজা হওয়ার পরে। তবে রানীর প্রিয় বাড়ি হলো উইণ্ডসর ক্যাস্ল। রানীর সঙ্গে প্রিন্স ফিলিপের পরিচয় হয় এলিজাবেথের ১৩ বছর বয়সে। ফিলিপ ছিলেন রানীর থার্ড কাজিন। এলিজাবেথের সঙ্গে ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর ফিলিপের বিয়ে হয়। এলিজাবেথ তার স্বামীকে আদর করে সসেজ বলে ডাকতেন। প্রিন্স অ্যান্ড্রু রানীকে সাত বছর আগে একটি মোবাইল ফোন উপহার দিয়েছিলেন যা তিনি খুব কমই ব্যবহার করেছেন। তিনি রানীকে ২০০৫ সালে একটি আইপডও উপহার দেন। আর প্রিন্স উইলিয়াম তার দাদীর ৮০তম জন্মদিনে একটি ডিভিডি প্লেয়ার উপহার দিয়েছিলেন। এলিজাবেথ এটি দিয়ে তার প্রিয় ছবি ঢ়ড়রৎড়ঃ, ঋধষিঃু ঞড়বিৎং এবং ওহংঢ়বপঃড়ৎ গড়ৎংব- এর ডিভিডি ফরম্যাট তৈরি করেন।

পিতা রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর দুই দিন পর, ১৯৫২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এলিজাবেথকে ইংল্যান্ডের রানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে রানীর সিংহাসনে আরোহণের দৃশ্য টিভিতে দেখানো হয়নি রাজ্যাভিষেক পবিত্র অনুষ্ঠান বলে।
এলিজাবেথ একবার মন্তব্য করেন, নিজেকে তার প্রথম রানী বলে মনে হয় যখন রাজকীয় দুগ্ধ খামার থেকে তার নামে দুধের বোতল নিয়ে আসা হয়। বোতলে রেখা ছিল ঊওওজ.

রানী এ পর্যন্ত ১৬ বার অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করেছেন, কানাডা গেছেন ২৪ বার, জ্যামাইকা ঘুরে এসেছেন ৬ বার এবং নিউজিল্যান্ড ১০ বার। ২০০২ সালে ৭৬ বছর বয়সে, স্বর্ণজয়ন্তী পালন উপলক্ষে তিনি মাত্র ৩৮ দিনে ভ্রমণ করেছেন ৭০টি শহর এবং ৫০টি দেশ।

রানী যখন সানড্রিগহ্যাম এবং বালমোরালের প্রাইভেট হোমে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়ান, কখনোই সিটবেল্ট পরেন না কিংবা মাথায় চাপান না শক্ত টুপি। শুধু একটি স্কার্ফ বেঁধে নেন মাথায়। বলা হয় রানী প্রতিবছর ঘোড়দৌড়ের পেছনে পাঁচ লাখ পাউন্ড খরচ করেন এবং তার ঘোড়াগুলো প্রায় সবগুলো ক্ল্যাসিক রেস জিতেছে। তিনি তার সবগুলো রেসের ঘোড়ার নাম জানেন।

রানী এখনও ১৬টি দেশের সার্বভৗম ক্ষমতার অধিকারী। এর মধ্যে কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া রয়েছে।

রানী প্রতি বছরই পার্লামেন্টের উদ্বোধন করেন। শুধু ১৯৫৯ এবং ১৯৬৩ সালে এ কাজটি করতে পারেননি। তখন তিনি গর্ভবতী ছিলেন।

রানীর ওয়ারড্রবে রয়েছে ৫০০ হ্যাট এবং ২০০ হ্যান্ডব্যাগ। প্রতিদিনই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে হয় বলে রানী দিনে পাঁচবার পোশাক বদলান।

রানী এলিজাবেথ ভূতে বিশ্বাস করেন। তার বিশ্বাস প্রথম এলিজাবেথের অতৃপ্ত আত্মা উইন্ডসর ক্যাসলে ঘুরে বেড়ায়। তিনি এবং তার মৃত বোন ছেলেবেলায় নাকি প্রথম এলিজাবেথের ভূত দেখেছেন গ্রিন করিডরে।

এলিজাবেথ তার প্রথম ই-মেইলটি পাঠিয়েছেন ১৯৭৬ সালে, ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর একটি ঘাঁটি থেকে। এলিজাবেথ জীবনেও কোনোদিন সুটকেস গোছাননি, জামা ইস্ত্রি করেননি কিংবা কাপড় ধোননি।

রানীর উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। ১২ মিনিটের বেশি বক্তৃতা দেওয়া রানীর একদমই অপছন্দ। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে চুলে রং লাগানো বন্দ করলে রানীর চুল রাতারাতি পেকে যায়। রানী গোঁফ দাড়িওয়ালা পুরুষদের পছন্দ করেন না। রানী রাত ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন এবং ঘুমের আগে বই পড়া পছন্দ করেন। রানী টেনিস খেলা একদমই পছন্দ করেন না। শুধু ১৯৭৭ সালে তাকে উইম্বলডনে যেতে হয়েছিল ভার্জিনিয়া ওয়েডের খেলা দেখতে। কারণ ভার্জিনিয়ার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার দায়িত্বটি যে তার কাঁধেই বর্তেছিল। বৈকালিক জলযোগ হলো, রানীর সবচেয়ে প্রিয় খাবার। এই নাস্তায় তাকে পরিবেশন করা হয় ছোট আকারের স্যান্ডউইচ, গরম স্কোন এবং ডান্ডি কেক। তবে স্কোনের বেশিরভাগ তিনি বিলিয়ে দেন প্রিয় কর্গি কুকুরগুলোর মাঝে।

রানী চমৎকার ফরাসি ভাষায় কথা বলতে পারেন। ফলে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির সঙ্গে কথা বলার সময় তার দোভাষীর প্রয়োজন হয়নি।

গর্ডন ব্রাউন রানীর জীবনে ১১তম প্রধানমন্ত্রী_ উইনস্টন চার্চিল ছিলেন প্রথম।

ব্রিটিশ ইতিহাসে এলিজাবেথই সবচেয়ে দীর্ঘজীবী রানী। কুইন ভিক্টোরিয়া মারা গেছেন ৮১ বছর বয়সে। তিনি ৬৩ বছর রাজ্য শাসন করেছেন। তবে এলিজাবেথ ২০১৫ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকলে তিনিই হবেন সবচেয়ে দীর্ঘায়ু সম্রাজ্ঞী।

তৈমুর রেজা তুহিন

0 comments:

Post a Comment