Breaking News
Loading...
Sunday, February 13, 2011

১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা ভাষাকে পূর্ববঙ্গের মাতৃভাষার মর্যাদা দানের দাবি জানান। মূলত তার ভাষণের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৫ সালে এফ এ পাস করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে। কলকাতা রিপন কলেজে ১৯০৮ সালে বিএ এবং ১৯১০ সালে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতার পর আইন ব্যবসায় মনোযোগ দেন। তার পিতা ইংরেজের সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও স্কুলজীবন থেকেই ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন ইংরেজবিরোধী। হিন্দু সমাজের বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং স্বদেশের প্রতি টান ছিল তার সহজাত। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণের মধ্যে দিয়েই মূলত তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। ১৯০৬ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত কলকাতা কংগ্রেসের অধিবেশনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দলভুক্ত হন। ত্রিপুরা জেলা আন্তঃপুরবাসী মেয়েদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে গঠিত কলকাতাকেন্দ্রিক 'ত্রিপুরা হিতসাধনী সভা'র সম্পাদক নিযুক্ত হন ১৯০৭ সালে। এর সভাপতি আব্দুল্লাহ রসুল সম্পর্কে ধীরেন্দ্রনাথ লিখেছেন, 'তাহার কাছ থেকেই আমি জনসেবার প্রেরণা পাইয়াছিলাম। তিনিই আমার সত্যিকারের রাজনৈতিক গুরু'।

১৯৬৪ সালে কুমিল্লা আইনজীবী এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। এ সময় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে মিস ফাতেমা জিন্নাকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ২৮ ডিসেম্বর ঊধংঃ চধশরংঃধহ চঁনষরপ ঝধভবঃু ঙৎফরহধহপব-এর আওতায় গ্রেফতার হন। ১৯৬৫ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত বিনাবিচারে তিনি কারাভোগ করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২৯ মার্চ রাতে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী কনিষ্ঠপুত্র দিলীপ দত্তকেসহ তাকে নিজগৃহ থেকে ধরে নিয়ে যায় কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে। তারপর তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত একজন কালজয়ী পুরুষ। তার জীবনের অমরকীর্তি ১৯৪৮ সনের ২৫ মার্চ পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলায় লেখার দাবি করে প্রস্তাব উত্থাপন। এই অর্থে বাংলাদেশে রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের সূচনা সে দিনই। এরই পথ-পরিক্রমায় ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জন। স্বাধীনতার চলি্লশ বছরেও বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের জন্য শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অসীম অবদানের কোনো মূল্যায়ন হয়নি। কুমিল্লার জনগণের দাবি ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে সেগুনবাগিচায় অবস্থিত মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের নামকরণ করা হোক। আজীবন সংগ্রামী শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

1 comments:

  1. ধন্যবাদ লেখককে এই সূর্য সন্তানের পরিচয় তুলে ধরার জন্য ।

    ReplyDelete