Breaking News
Loading...
Monday, February 14, 2011

উপমহাদেশের বিশিষ্ট শাস্ত্রীয় কণ্ঠশিল্পী বারীন মজুমদারের আজ ৯২তম জন্মবার্ষিকী। এদেশে ধ্রুপদী কণ্ঠসঙ্গীতের প্রতিষ্ঠা ও প্রচারে তার অবদান অসীম। সংগীতকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে চর্চায়, তার পাঠ্যক্রম রচনায়ও তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। পথিকৃৎ এই কণ্ঠশিল্পী ১৯১৯ সালের ১৪ফেব্রুয়ারি পাবনার রাধানগরের জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি কলকাতায় ভীস্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে শাস্ত্রীয়সংগীতে তালিম নেন ও পরে তিনি লক্ষ্মৌর ওস্তাদ রঘুনন্দন গোস্বামীকে তার বাড়িতে এনে সংগীতশিক্ষা লাভ করেন। তিনি লক্ষ্মৌর মরিস কলেজ অব মিউজিক থেকে স্নাতক হন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি পণ্ডিত শ্রীকৃষ্ণ রতনজনকর, অধ্যাপক জে, এন, নান্টু, ওস্তাদ হামিদ হোসেন খাঁ, চিন্ময় লাহিড়ী, ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ ও ওস্তাদ খুরশীদ আলী খাঁর কাছে স্বতন্ত্রভাবে তালিম নেন।

তিনি ১৯৫৭ সালে বুলবুল একাডেমীর উচ্চাঙ্গসংগীতের অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দেন এবং ধ্রুপদী সংগীত চর্চার কোর্স চালু করেন। ঢাকা রেডিওতে বিশেষ শ্রেণীর শিল্পী হিসাবে রাগসংগীত পরিবেশন শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে ১০ নভেম্বর ওস্তাদ বারীণ মজুমদার ঢাকার কাকরাইলে ১৬জন শিক্ষক ও ১১জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে দেশের প্রথম সংগীত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বেতারের অডিশন ও গ্রেডেশন বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে ওস্তাদ বারীণ মজুমদার মণিহার সঙ্গীত একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি রচনা করেন সংগীত বিষয়ক গ্রন্থ 'সঙ্গীতকলি' ও 'সুর লহরী'; এছাড়াও সম্পাদনা করেন সংগীত বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা।

সংগীতে বিশেষ অবদান রাখায় তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের স্বাধীনতা দিবসের বেসামরিক খেতাব তমঘা-ই-ইমতিয়াজ পদক তিনি গ্রহণ করেন নি। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক দেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৮ সালে বেগম জেবুন্নেছা ও কাজী মাহাবুবউল্লাহ জনকল্যাণ ট্রাস্ট পুরস্কার এবং ৯০ সালে ছায়ানট আয়োজিত সিধু ভাই স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে পাবনা পদক ১৯৯৮ সালে জনকণ্ঠ গুণীজন সম্মাননা এবং ১৯৯৯ সালের বাংলা একাডেমী ফেলোশিপ লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ; থেকে রবীন্দ্র পদক লাভ করেন। বারীন মজুমদার ১৯৬০ সালে ইলা মজুমদারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের তিন সন্তান মধুমিতা, পার্থস্বারথী মজুমদার ও বাপ্পা মজুমদার। তার একমাত্র কন্যাসন্তান মধুমিতা ১৯৭১ সালে ২ এপ্রিল মাত্র দশ বছর বয়সে যুদ্ধে মারা যান। মহান এই শিল্পী আমৃত্যু অসংখ্য শিল্পী তৈরি করেছেন। তিনি ২০০১ সালে ৩ অক্টোবর প্রয়াত হন। সংগীত চর্চা ও শিক্ষায় গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য তাকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার ২০০২ প্রদান করা হয়।

_সৈয়দা আফসানা রুমকি

0 comments:

Post a Comment