Breaking News
Loading...
Saturday, February 19, 2011

গত শতাব্দীতে বাঙালি জাতির জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ এবং ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান। একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে' পরিণত করার প্রথম ভাবনা আসে কানাডার ভ্যাংকুভারে অবস্থানকারী প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালামের মাথায়। ২০০০ সালের ৪ জানুয়ারি ইউনেস্কোর মহাপরিচালক কাইচিরো মাটসুরা এক চিঠিতে ইউনেস্কোর সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি তখন থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানান। ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধু মাতৃভাষার জন্য আমাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকেই স্বীকৃতি দেয়নি, অমর একুশের শহীদদের আত্মদান থেকে উৎসারিত স্বাধীনতা আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনকেও মর্যাদা দিয়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের পৃথিবীর বুকে মহিমানি্বত করেছে। বিশ্বের ১৯০টি দেশে এখন প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হচ্ছে। ওইসব দেশের মানুষ জানছে ঢাকার বুকে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে কি ঘটেছিল, কি কারণে রফিক, সালামরা প্রাণ দিয়েছিলেন। তারা আরও জানবে বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। একুশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রূপ দানে ভূমিকা রাখা একজন রফিকুল ইসলাম কুমিল্লার ছেলে।

১৯৫৩ সালের ১১ এপ্রিল কুমিল্লা শহরের উজিরদীঘির পাড়ে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আবদুল গণি। মাতা করিমুন্নেসা। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি অষ্টম। কুমিল্লা উজিরদীঘির পাড় হরেকৃষ্ণ স্কুলে তার শিক্ষা জীবন শুরু। ১৯৬৮ সালে কুমিল্লা হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে। ১৯৭১ সালে তিনি এ কলেজের ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করেন। একাত্তরে ২নং সেক্টরে মুজিববাহিনীর হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেন। একাত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সম্মুখযুদ্ধে তার ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম সাফু শহীদ হন। তিনি দেশে ৭ বছর প্রশিকায় চাকরির পর ১৯৯৫ সালে কানাডায় পাড়ি জমান। ২ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি বর্তমানে কানাডায় বসবাস করছেন। কানাডার ভ্যাংকুভার থেকে রফিকুল ইসলাম জানান, মাতৃভাষার সঙ্গে যেমন সংস্কৃতি তেমনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত আত্মসম্মানবোধ। প্রথমটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়লে অন্যটিও নিজস্ব সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। মানুষ তার কেন্দ্রবিন্দু থেকে ছিটকে পড়ে। ১৯৪৭ সালের একটি ত্রুটিপূর্ণ স্বাধীনতা লাভের ৫ বছরের মধ্যে আমাদের একটি অগ্রজ দল মাতৃভাষাকে গভীর প্রেমে আঁকড়ে ধরে। সৃষ্টি হয় অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। তারপরের ইতিহাস তো আলোকিত।

-মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

0 comments:

Post a Comment