Breaking News
Loading...
Monday, February 21, 2011

ইয়ান বোথাম একাধারে টেস্ট ক্রিকেট টিমের অলরাউন্ডার, ক্যাপটেন ও কমেন্টেটর। পুরো নাম স্যার ইয়ান টেরেন্স বোথাম। ডাকনাম বীফি, গরিলা। তিনি ১৯৫৫ সালের ২৪ নভেম্বর ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহন করেন।

টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা কমে ওয়ানডে ক্রিকেটের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছে মানুষ। একবাক্যে বলা চলে, ওয়ানডে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ব্যাপক। কিন্তু এক সময় ছিল, যখন অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল টেস্ট ক্রিকেট। তবে, পরিবর্তন যেমনই হোক, ইয়ান বোথাম আজও সকলের কাছে অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। বর্তমানে তার বয়স ৫৫ হলেও তার ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ও সম্পৃক্ততার কারণে তাকে সহজেই প্রজন্মের তালিকায় ফেলা যায়। তিনি মূলত ইংল্যান্ড টিমে ছিলেন। তিনি ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৩৮৩টি উইকেট নিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটে। অলরাউন্ডার হিসেবে তিনি 'বিফি' নামেও পরিচিতি পান। এখন পর্যন্ত তিনি ইংল্যান্ডের সবের্াচ্চ উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়া বোলার। মজার ব্যাপার হলো, তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের একটু পিছে গেলে জানা যাবে তিনি আগে ফুটবল লিগে ছিলেন।

বোথাম ইংল্যান্ডের ভিরাল শহরের হ্যাসওয়ালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা, হার্বাট ল্যাসলি ও মা ভায়লেট ম্যারি। তার মা-বাবা দুজনেই ক্রিকেটপ্রেমী ছিলেন এবং ক্রিকেট খেলতেন। তাকে ইওভিলের মিডফোর্ড স্কুলে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তার খেলাধূলার প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি হয়। তিনি তখন অনূধর্্ব ১৫-তে খেলতেন। ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ও নেশার কারণে ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছাড়েন। সেই সাথে তিনি ফুটবলও ভালোই খেলতে পারতেন। সেই সুবাদে ক্রিস্টাল প্যালেস-এর হয়ে ফুটবল খেলার আহ্বানও পেয়েছিলেন। যখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি খেলা নিয়ে ক্যারিয়ার গড়বেন, তখন তাকে বলা হয়েছিল, 'খেলা নিয়ে ক্যারিয়ার গড়বে, খুবই ভালো কথা, সবাই খেলতে চায়, পছন্দ করে, কিন্তু তুমি কি সত্যিই এতে ক্যারিয়ার গড়তে চাও?' বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই একথা বলেন। এভাবেই ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি।

ক্যারিয়ারের শুরুতেই তিনি সবার আকর্ষণ কেড়ে নেওয়ার মতো খেলা দেখান। ফার্স্ট-ক্লাস ক্রিকেটে তিনি প্রথমেই ১৯,৩৯৯ রান করেন মোট ৩৩.৯৭ বলে, ২৭টির মতো উইকেট নিয়েছিলেন এবং ৩৫৪টির মতো ক্যাচ ধরে সকলের আলোচনার পাত্রে পরিণত হন। প্রথম দিকে তিনি দুরহাম, সমারসেট ও ওয়োরকেস্টসিয়ারের মতো দলের পক্ষে খেলেন। ১৯৮৭-৮৮ সাল, এই সময়টাতে তিনি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে খেলেন। ১৯৭৪ সালে বোথাম তার ফার্স্ট-ক্লাস ম্যাচগুলোতে সমারসেট দলের পক্ষে খেলা শুরু করেন। সে বছরই তিনি যখন হ্যাম্পশায়ারের বিরুদ্ধে খেলছিলেন, সেসময় দ.আফ্রিকাতে বোলার হিসেবে ছিলেন অ্যান্ডি রবার্টস। তার বলের দুর্দান্ত গতি একটা দুর্ঘটনা ঘটায়। বলটি সরাসরি তার মুখে আঘাত করে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, তিনি সেটা গুরুত্ব না দিয়ে আবার খেলা শুরু করেন। ক্রিকেট তার কাছে নেশার মতো ছিল।

তিনি ১৯৮৬ সালে এই ক্রিকেট ক্লাব থেকে রিজাইন করেন। তারই বন্ধু সমতুল্য ভিভ রিচার্ড ও জয়েল গার্নারদের বিপক্ষে খেলার জন্য ওয়োরকেস্টসিয়ার দলে যোগ দেন। সেখানে তিনি ১৯৮৭ এবং ১৯৯১ পর্যন্ত খেলেন। এর পরে, ১৯৯২ সালে, তিনি ক্লাবটি ত্যাগ করে কাউন্টি চ্যাম্পিয়ানস লিগ 'দুরহাম'-এ যোগ দেন। এটা নিউ কামারদের ক্লাব ছিল। কিন্তু সেখানেও তিনি বেশিদিন ছিলেন না, মাঝপথেই ছেড়ে দেন।

অভ্যন্তরীণ লীগ খেলার পর্ব শেষ করে তিনি শুরু করেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলা। অবশ্য তার জন্য লীগ থেকে আন্তর্জাতিক খেলাতে প্রবেশের ব্যাপারটা তেমন কঠিন কিছু ছিল না। তার খেলার ধরনটাই ছিলো এমন যে, খুব সহজেই তিনি এ পথটুকু পার করেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি তার ক্যারিয়ার শুরু করেন টেস্ট খেলার মধ্য দিয়ে। ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের সাথে প্রথম টেস্ট ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি ২৮ জুলাই ১৯৭৭ সালে। সেদিন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টের তৃতীয় দিন ছিল। তিনি তার ১৫ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ার ভালোই উপভোগ করেছিলেন। এ সময় তিনি ১০২টি ম্যাচ খেলেন।

অল-রাউন্ডার হিসেবে বোথামের বেশ সুনাম রয়েছে ক্রিকেট মহলে। সেই সাথে তিনি সবথেকে দ্রুত রানও করতে পারতেন বলে সবার মুখে মুখে পরিচিত। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তার এই রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি। ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলে তিনি ৩৮৩টি উইকেট নিয়েছেন। তিনি একবার এক ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন, সেই সাথে ৫টি উইকেট নেওয়ারও রেকর্ড তার রয়েছে। আর কেউ এমনভাবে কখনোই খেলতে পারেনি। মজার ব্যাপার হলো, ১৯৮০ সালে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে খেলে ১০০ রান করেন ও ১০টি উইকেট নেন। তিনিই প্রথম এমন রেকর্ড করেন। ১৯৮১ সালের সিঙ্গেল ম্যাচগুলোতে তার প্রতি বলে ছক্কা মারারও রেকর্ড আছে। এই রেকর্ড ২০০৫ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল। এরপর অ্যান্ড্র- ফিন্ট্রফ তার এই রেকর্ড ভেঙে দেন। তার টেষ্ট ক্রিকেটের বাইরে সিঙ্গেল ম্যাচের সংখ্যাও কম নয়। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত ১১৬টি ম্যাচ খেলেন তিনি। তিনি প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে আত্মপ্রকাশ করেন ওয়েস্টইন্ডিজের বিপরীতে। ব্যাটিংয়ে তার অ্যাভারেজ ২৩.২১ এবং বোলিংয়ে ২৮.৫ র্যাংকিং।

সেসময় মাইক ব্রেয়ারলি দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন, যাকে তিনি রিপেস্নস করেন খুব সহজেই। সেই ম্যাচটিতে অস্ট্রেলিয়া টসে জিতে ব্যাটিং-এ নেমেছিল। কিন্তু বোথামের তোপের মুখে পড়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি তাদের ব্যাটিং। পানীয় বিরতির আগেই তাদের ৯ উইকেট পড়ে যায়। তখন তারা মাত্র ৪০১ রানের মালিক। সেবার অস্ট্রেলিয়া খুব বাজেভাবে পরাজিত হয়েছিল। ইংল্যান্ড ব্যাটিং শুরু করে সেদিনই ৭ উইকেটের মাথায় ম্যাচটি জিতে নেয়। আর এর জন্য দায়ী করা যায় এই লিজেন্ডারি ক্রিকেটার, ইয়ান বোথামকে। এর পরদিনই , ক্রিকেট বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের সামনে দলের অধিনায়ক ঘোষণা করা হয় ইয়ান বোথামকে।

একই সাথে ক্রিকেটার ও ফুটবলার_এমনটা সত্যিই বিরল। দু-দিকেই উনি খুব ভালো খেলতেন এবং আগ্রহ ছিল। তাই বলতে গেলে, এক রকমের কষ্টকর সিদ্ধান্তই হয়ে যায় ফুটবল ও ক্রিকেটের মধ্যে ক্যারিয়ার নির্বাচন করতে। ১৯৮০ সালে তিনি ফুটবল ক্লাব জয়েন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ইনজুরির কারণে সেই ক্যারিয়ার নিয়ে বেশিদূর এগোতে পারেননি। পরে সিদ্ধান্ত নেন, ক্রিকেট নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার।

এক নজরে

পুরো নাম :স্যার ইয়ান টেরেন্স বোথাম

জন্ম :২৪ নভেম্বর, ১৯৫৫

ডাকনাম :বীফি, গরিলা

উচ্চতা :৬ ফিট ২ ইঞ্চি

ব্যাটিং : ডানহাতি ব্যাটসম্যান

বোলিং :ফাস্ট-মিডিয়াম

বর্তমান পদ :ক্রিকেট কমেন্ট্রিয়ান

-০০ প্রাঞ্জল সেলিম ০০

0 comments:

Post a Comment