Breaking News
Loading...
Thursday, April 14, 2011

কিংবদন্তির নায়ক মান্নার আসল নাম এসএম আসলাম তালুকদার। ১৯৬২ সালের ১ জানুয়ারি তার জন্ম টাঙ্গাইলের কলেজ পাড়াতে পৈতৃক বাড়িতে। শৈশবে তার প্রিয় নায়ক ছিলেন রাজ্জাক, নাদিম, জাভেদ এবং আরও অনেকেই। তাদের ছবি দেখে দেখে ভাবতেন, কী করে ছবির নায়ক হওয়া যায়। ইচ্ছে আর আগ্রহ ছিল বলেই অনেক চেষ্টার পর ১৯৮৪ সালে এফডিসি’র নতুন মুখের কার্যক্রমের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন। প্রথম ‘তওবা’ ছবিতে কাজ শুরু করেন। তবে তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘পাগলী’। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন কাজী হায়াত। ‘তওবা’ ছবির প্রধান পাত্র-পাত্রী ছিলেন রাজ্জাক ও ববিতা। ছবিতে মান্নার চরিত্রটিও কম গুরুত্বের ছিল না। বড় শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে মান্না সেদিন নিজেকে বড় ভাগ্যবান মনে করেছিলেন।

মান্না দু’শরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৮৪ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত (মৃত্যু ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি) তিনি ছিলেন ফিল্মের রাজকুমার। মান্নার প্রথম সুপারহিট ছবি ‘কাসেম মালার প্রেম’। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন মুস্তফা আনোয়ার। এ ছবিতে মান্নার বিপরীতে ছিলেন চম্পা। চম্পার খ্যাতি তখন তুঙ্গে। চম্পাই তাকে এ ছবিতে নেয়ার ব্যাপারে প্রযোজক ও পরিচালককে সুপারিশ করেছিলেন। ‘কাসেম মালার প্রেম’ ফোক ফ্যান্টাসি ধরনের ছবি। মান্না কিন্তু পরে এ ধরনের ছবির মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। প্রতিনিয়ত তিনি ভাবতেন, কী করে নিজেকে সব শ্রেণীর দর্শকের মাঝে উপস্থাপন করা যায়। কমার্শিয়াল মুভি ও অ্যাকশনধর্মী ছবি যেমন—দাঙ্গা, ত্রাস, লাল বাদশা, চাঁদাবাজ, সিপাহী ছবিতে তার উপস্থিতি দেখে দর্শক ভাবতে শুরু করল, এতদিনে বুঝি ফিল্মে একজন বীর পুরুষের আগমন ঘটল। এভাবেই মান্নার জয়যাত্রা শুরু হতে লাগল। ১৯৯৫ সালের পর থেকেই মান্না দর্শকের হৃদয়ে ব্যাপকভাবে নাড়া দিলেন। এক সময় তিনি হয়ে ওঠেন সুপার স্টার। ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেও তিনি তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। যেগুলোতে মান্না নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সেই ছবিগুলো হলো—দাঙ্গা, চাঁদাবাজ, ত্রাস, তেজী, মিনিস্টার, প্রেম দিওয়ানা, ডিস্কো ড্যান্সার, খল নায়ক, শান্ত কেন মাস্তান, গুণ্ডা নাম্বার ওয়ান, কুখ্যাত খুনী, রংবাজ বাদশা, বসিরা, ঢাকাইয়া মাস্তান, মেজর সাহেব, আরমান, মাস্তানের ওপর মাস্তান, বিগবস, টপ সম্রাট, সুলতান, ভাইয়া, বিদ্রোহী সালাহউদ্দিন, বাবা, মান্না ভাই, কিলার, টপ টেরর, জনতার বাদশা, রাজপথের রাজা, এতিম রাজা, টোকাই রংবাজ, ভিলেন, নায়ক, সন্ত্রাসী মুন্না, মোস্তফা ভাই, রাজা বাংলাদেশী, বীর সৈনিক, ভণ্ড বাবা, জুম্মান কসাই, আব্বাস দারোয়ান, জিদ্দি ড্রাইভার, রাজা, লাল বাদশা, রুস্তম, দানব, ঈমানদার মাস্তান, বাবা মাস্তান, রাজা নাম্বার ওয়ান, তেজী সন্তান, রাজু মাস্তান, মেশিনম্যান, মুসা ভাই, নেতা, বাংলার হিরো প্রভৃতি। এর প্রতিটি ছবিই ব্যবসাসফল হয়েছিল।

মান্না যখন চলচিত্রে টপ নায়ক তখন ফিল্মের কিছুসংখ্যক অশিক্ষিত ধোঁকাবাজ প্রযোজক-পরিচালক ফিল্মে কাঠপিস জুড়ে দিয়ে মা-বোনদের প্রেক্ষাগৃহ বিমুখ করেছিল। মান্না সব সময় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। মান্না চাইতেন, ঢাকার ফিল্মে ভালো ভালো ছবি হবে। সব শ্রেণীর মানুষ ফিরে আসুক প্রেক্ষাগৃহে। শুধু এজন্য অন্যের ওপর নির্ভর করেননি। নিজেও এক সময় ছবির প্রযোজক হলেন। প্রযোজক হয়ে বানালেন—আব্বাজান, দুই বধূ এক স্বামী, আমি জেল থেকে চলছি, লুটতরাজ, লাল বাদশা, মনের সাথে যুদ্ধ, পিতা-মাতার আমানত ইত্যাদি। এসব ছবির নায়ক তিনিই ছিলেন।

মান্না একবার জানিয়েছিলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফিল্মের উন্নতি হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে বিপরীত অবস্থা। এখানে কে কত কম খরচে, কম বাজেটে ছবি রিলিজ করাবে সেই চিন্তায় ব্যাকুল। ফলে চলচ্চিত্রে কোয়ালিটির চেয়ে কোয়ানটিটি বাড়ছে। চলচ্চিত্রের ওপর থেকে দর্শকের আকর্ষণ কমে যাচ্ছে। এসব দিক চিন্তা করে আমার কৃতাঞ্জলি প্রোডাকশন থেকে বানিয়েছি—‘মনের সাথে যুদ্ধ’, ‘আমি জেল থেকে বলচি’সহ কয়েকটি ছবি। যার প্রতিটিই যুগোপযোগী। যে জন্য ছবিগুলো সুপারহিট। প্রতিটি ছবি বক্স অফিসের কাছে যেমন আদরে গ্রহণীয়, তেমনি দর্শকের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় হয়েছে।

মান্না টেলিভিশন ও সিনেমা হলের তুলনা করতে গিয়ে একবার বলেছিলেন, এখন তো ঘরে বসে টেলিভিশনে শতাধিক চ্যানেল দেখা যায়। এক চ্যানেল ভালো না লাগলে দর্শকরা রিমোট টিপে অন্য চ্যানেল দেখে। তা ভালো না লাগলে টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ফিল্মটা ব্যতিক্রম। টিকিট কেটে ছবিঘরে ঢুকে সবাই কিন্তু পুরো ছবিটা দেখেই বের হয়।

ফিল্মে এসে মান্না প্রথম দিকে ফারজানা ববি, সুচরিতা, অরুণা বিশ্বাস, চম্পা, সুনেত্রা, নিপা মোনালিসা প্রমুখের বিপরীতে অভিনয় শুরু করেন। পরে তিনি চম্পা, মৌসুমী, শাহনাজের বিপরীতে বেশি কাজ করেছেন। শাবনূর, পূর্ণিমাও ছিলেন তার রোমান্টিক নায়িকা।

২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মান্নার মহাপ্রয়াণ ঘটে। তার এ মৃত্যুতে ঢাকা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়।

-লিয়াকত হোসেন খোকন

0 comments:

Post a Comment