Breaking News
Loading...
Saturday, October 15, 2011

স্টিভ জবস শূন্য হাতে অ্যাপল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছিলেন। আর এক জীবনেই হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের চেয়েও বেশি সম্পদের মালিক। এ অবস্থানে আসতে জবস যত বাধা পেয়েছেন ততটা বেশিজনের জীবনে আসেনি। প্রযুক্তি দুনিয়ার মানুষের কাছে তিনি একজন সংগ্রামী মানুষেরই প্রতিকৃতি। তার পুরো নাম -ষ্টিভেন পল জবস ।
১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। অবিবাহিত মা-বাবার সন্তান স্টিভকে দত্তক নেন পল ও ক্লারা জবস। স্টিভ নামটিও তাঁদের দেওয়া। ক্যালিফোর্নিয়ার হোমস্টেড হাই স্কুলে শুরু হয় শিক্ষাজীবন। স্কুলে পড়া অবস্থায়ই চাকরি নেন হিউলেট-প্যাকার্ড বা এইচপিতে। এরপর 'অ্যাটারি' নামের একটি ভিডিও গেইম তৈরির প্রতিষ্ঠানে কাজ নেন। ১৯৭৬ সালে বন্ধু স্টিভ ওজনেক আর রোনাল্ড ওয়েনকে নিয়ে অ্যাপল কম্পিউটার তৈরির কাজ শুরু করেন। সফল হওয়ার তুমুল ইচ্ছা ছাড়া বেশি কিছু সম্বল ছিল না। এর জোরেই তৈরি করে ফেলেন প্রথম কম্পিউটার 'অ্যাপল-১'। ১৯৮৪ সালের ২৪ জানুয়ারি বাজারে আনেন বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কম্পিউটার 'ম্যাকিনটোশ'। বাজার মাতিয়ে দিল নতুন প্রজন্মের এ কম্পিউটার। এরপর একে একে স্টিভ বাজারে এনেছেন আইপড, আইফোন ও আইপ্যাডের মতো পণ্য। অ্যাপল হয়ে উঠল প্রযুক্তিবিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান।
বাবার ওপর খেপে ছিলেন স্টিভ। ভুলতে পারেননি যে বাবা তাঁর দায়িত্ব নেননি। তাই বাবার সামনে যাননি কখনো। একটি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডকে জবসের বাবা জান্দালি বলেন, 'আমি তার সঙ্গে অনেকবার দেখা করতে চেয়েছি। তাকে ই-মেইল করেছি। কিন্তু সে কখনো ই-মেইলের উত্তর দেয়নি, দেখা করেনি। এ ছাড়া ফোন করা হলে জবস ফোন রেখে দিত।'
জবসের জন্মের কয়েক বছর পর জান্দালি ও জোয়ানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মোনা সিম্পসন নামে তাঁদের একটি কন্যাসন্তান হয়। কিন্তু স্টিভ জবস তাঁর বোনের ব্যাপারে জানতেন না। ১৯৮৫ সালে মোনা যখন একজন খ্যাতিমান লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তখন বিষয়টি জানেন জবস। এরপর থেকে তাঁরা খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
জবসের বয়স যখন ২৩, তখন তাঁর প্রেমিকা রিশ-অ্যানের গর্ভে সন্তান আসে। কিন্তু জবস এই সন্তানের বাবা হিসেবে নিজেকে অস্বীকার করেন। প্রায় এক বছর পর লিসা নিকোল নামের এই সন্তানকে মেনে নেন তিনি। মেয়ের প্রতি ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ 'লিসা' নামে একটি কম্পিউটারও তৈরি করেন জবস।
জীবনে অনেকেরই প্রেমে পড়েছেন তিনি। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আমেরিকার সংগীতশিল্পী জোয়ান বারেজ, হলিউড অভিনেত্রী ডায়ানে কিটন। জানা যায়, জবস জোয়ান বারেজকে বিয়েও করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে স্ট্যানফোর্ডে এক অনুষ্ঠানে লরেন পাওয়েল নামের এক ছাত্রীকে পছন্দ হয় জবসের। ১৯৯১ সালের ১৮ মার্চ তাঁরা বিয়ে করেন। চার সন্তানের বাবা জবস নিয়মিত সন্তানদের ভালো-মন্দ ও লেখাপড়ার খোঁজ নিতেন।
২০০৪ সালে জবসের লিভারে বিশেষ ধরনের টিউমার ধরা পড়ে। এই টিউমার থেকেই অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সারের সংক্রমণ। ডাক্তাররা জানান, 'টিউমার অস্ত্রোপচার করলে তাঁর বাঁচার আশা খুবই ক্ষীণ। আবার অপারেশন না করলেও রয়েছে প্রাণসংশয়। এ খবরে ভেঙে পড়েন অ্যাপলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ পরিস্থিতিতে জবস অপারেশন করানোর সিদ্ধান্ত নেন। অস্ত্রোপচার সফল হয়। এতে জবসের সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ ফিরে পায় পুরো অ্যাপল পরিবার। নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। কিন্তু ক্যান্সারটাই শেষ পর্যন্ত জয়ী হলো। সবশেষ হওয়ার আগে দীর্ঘ আট বছর তিনি জটিল ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেন। এ সময়কালে তিনি অ্যাপলের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য আইপড, আইফোন, আইপ্যাড বাজারে ছাড়েন।
জবস কেবল গুরুই নন, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বও বটে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গেও ছিল তাঁর সখ্য। এক শোকবার্তায় গেটস লিখেছেন, 'হৃদয়ের গভীর থেকেই স্টিভের অভাব বোধ করছি। আমি সৌভাগ্যবান বলেই স্টিভের মতো এমন বহু গুণী এবং ভবিষ্যৎ-দ্রষ্টার সঙ্গ পেয়েছি। স্টিভের মৃত্যুর ক্ষতি শুধু এই প্রজন্ম নয়, পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম অনুভব করবে।'
কেবল বিল গেটস নয়, জবসের মৃত্যুতে শোকাহত পুরো প্রযুক্তিবিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ফেইসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক স্পিলবার্গসহ আরো অনেকে জবসের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, এমনকি গুগলের হোমপেইজেও সম্মান জানানো হয়েছে স্টিভ জবসকে।
মৃত্যুর পরপরই সারা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে খবরটি বেশ আলোড়ন তোলে, সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে জবসকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে কোটি কোটি শোকগাথা। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সিলিকনভ্যালির নেতাদের মনে। তাঁদের একটাই কথা, সিলিকনভ্যালি পাবে না নতুন কোনো স্টিভ জবস। তিনি কেবল একজন উদ্যোক্তাই ছিলেন না, ছিলেন এক আদর্শ মডেল। তিনি দেখিয়েছেন শত সংগ্রাম করে কিভাবে সফলতা পেতে হয়। তিনি কেবল নতুন উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন দেখতেই শেখাননি, কিভাবে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হয় তাও দেখিয়েছেন।
জবসের স্বপ্নের হাত ধরেই হয়তো চলবে আরো কয়েক প্রজন্ম। তবে একজন স্টিভ জবস আর কখনো ফিরে আসবেন না। বদলে দেবেন না প্রযুক্তির ধারণা, প্রযুক্তিপণ্য। তবে তাঁকে ভোলা সহজ হবে না। যিনি পথ দেখান, তিনি সঙ্গেই থাকেন।
সূত্রঃ কালের কন্ঠ, আমার ব্লগ

0 comments:

Post a Comment