Breaking News
Loading...
Saturday, March 3, 2012

বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের ডাউন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন চিকিৎসক। বাবা চেয়েছিলেন পুত্র চার্লসও বড় হয়ে তার মতো ডাক্তার হোক। তাই ছেলে ডারউইননকে প্রথমে ডাক্তারি পড়তে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তার মন বসেনি।
তারপর বাবার ইচ্ছে হলো, ছেলে পাদ্রি হোক। চার্লসকে তিনি ধর্মতত্ত্ব পড়তে পাঠালেন। তখনকার ঘটনা। চার্লস ডারউইনের যখন ২২ বছর বয়স, তখন তিনি একটি জাহাজে ঘোরার আমন্ত্রণ পেলেন। ব্রিটিশ সরকার তখন বিগল নামে একটা জাহাজ পাঠাচ্ছিলো দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল আর প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু দ্বীপ অনুসন্ধান করার জন্য। সেই জাহাজে বিভিন্ন পেশার মানুষ ছিলেন। ডারউইনকে নির্বাচন করা হয়েছিলো প্রকৃতি বিজ্ঞানী হিসেবে। কারণ, বরাবরই তার ঝোঁক ছিলো গাছ-পালা আর কীট-পতঙ্গে।
বন্ধুরাও ডারউইনের এই আগ্রহের কথা জানতেন। জাহাজে তার মতো একজন অল্পবয়সী নিতান্ত শৌখিন বিজ্ঞানীকে বেছে নেওয়া হয়েছিল এজন্য যে, জাহাজটা সমুদ্রে ভাসবে পাঁচ বছর ধরে! কোনো বিজ্ঞানীকেই বেতন দেওয়া হবে না। বিনা বেতনে কে যেতে চায়! ডারউইন বড়লোক ডাক্তারের ছেলে, তাই তাকেই নির্বাচন করা হয়।
পাঁচ বছর ধরে বহু দ্বীপ ঘুরে ঘুরে ডারউইন অনেক পশু-পাখি, পোকা-মাকড়, লতাপাতা সংগ্রহ করে আনেন। তারপর সেগুলো নিয়ে অনেক গবেষণার পর লিখলেন তার বিখ্যাত বই, 'দ্য অরিজিন অব স্পিসিস বাই মিনস অব ন্যাচারাল সিলেকশন'। বইয়ে লেখা ডারউইনের মতামত পৃথিবীর শতকরা আশি ভাগ বিজ্ঞানীই মেনে নেন। ডারউইন তার এই বিখ্যাত বইতে লিখেন, গাছপালা, জীবজগৎ, পশুপাখি এবং মানুষ_ কোনো কিছুই অতিপ্রাকৃত শক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট নয়। মানুষ ও প্রাণিজগৎ বিবর্তনের মধ্য দিয়েই চলেছে। চার্লস ডারউইন প্রকৃতির অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করেছেন বিবর্তনের ধারা হিসেবে। তিনি প্রমাণ করেছেন, মানুষ মোটেই জীব জগতের বিশেষ কোনো সৃষ্টি নয়।
তার তত্ত্বটির সারমর্ম হলো, এই বিশাল জীব জগতে আমরা স্বতন্ত্র নই। আমরা ভিন্ন কোনো প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হইনি। কীট-পতঙ্গ, পশুপাখির মতো মানুষও জীব জগতের একটি অংশ মাত্র। জন্মসূত্রে তাদের আত্মীয়। কেননা, একই পূর্বপুরুষের উত্তরসূরি আজকের পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সব প্রাণী। 'প্রতিটি জীবই উত্তরাধিকার সূত্রে সেই সৃষ্টির শুরু থেকে রয়েছে'। _ডারউইনের এই ধারণাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে পরবর্তীকালে ডিএনএ আবিষ্কৃত হয়। সম্ভবত সকল প্রাণী যারা কখনও-না-কখনও এই পৃথিবীতে এসেছে, বসবাস করেছে, তাদের মধ্যে প্রথম থেকে বর্তমান পর্যন্ত কোনো-না-কোনো জীবের বৈশিষ্ট্য উত্তরাধিকার সূত্রে রয়েই গেছে।
ডারউইনের আর একটা তত্ত্ব হলো 'স্ট্রাগল ফর একজিস্টেন্স' বা 'টিকে থাকার লড়াই'। পৃথিবীতে যতো মানুষ জন্মায়, ২৫ বছরে সংখ্যা তার দ্বিগুণ হয়ে যায়। কোনো কোনো প্রাণীর বংশবৃদ্ধি এর চেয়েও অনেক বেশি। এইভাবে বাড়তে থাকলে সবার খাদ্য জোটানো সম্ভব নয়। পৃথিবীতে পা ফেলারও জায়গা থাকতো না। বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, ভূমিকম্প আর যুদ্ধে বহু মানুষ ও প্রাণী অকালে মারা যায়। এর মধ্যে যারা বাঁচে, তারাই টিকে থাকে। সব প্রাণীর মধ্যে অবিরাম যুদ্ধ চলছে; যারা জয়ী হয়, তারাই শুধু বেঁচে থাকে।
কিংবদন্তি এই বিজ্ঞানী পৃথিবীর সব শিশুকে খুব ভালোবাসতেন। ১৮৮২ সালের ১৯ এপ্রিল না-ফেরার দেশে চলে যাওয়া এই মানুষটিকে তোমরাও নিশ্চয় ভালোবাসো খুব।

0 comments:

Post a Comment