Breaking News
Loading...
Saturday, May 12, 2012

ভারতীয় উপমহাদেশের বিংশ শতকের অন্যতম প্রধান ছোট গল্পকার সাদাত হাসান মান্টো।
‏‏سعادت حسن منٹو
বিখ্যাত এই মানব সচেতন অসাম্প্রদায়িক লেখক ১৯১২ সালের ১১ মে ব্রিটিশ শাসিত (বর্তমান পাকিস্তান) পাঞ্জাবের লুধানিয়া জেলার সামরালা শহরে শিক্ষিত কাশ্মিরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

সাদাত হাসান মান্টো মূলত মানবতাবাদী ইতিহাস আশ্রিত ছোট গল্পকার ছিলেন। তিনি ১৯১৯ সালে জালিওয়ানাবাগে হত্যাকাণ্ড তার সাহিত্যে প্রভাব পড়েছে। এজন্য তাকে ইংলিশ সাহিত্যিক ডিএইচ লরেন্সের সঙ্গে তুলনা করা হতো। মান্টোর মতো লরেন্সও অল্প বয়সে মারা যান।

দ্য হিন্দুর আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, “মান্টোকে আজো ভারতীয়রা স্মরণ করে কারণ তার লেখায় যেমন ভারত-পাকিস্তানের মর্মান্তিক বিভাজনের মধ্যে দিয়ে এর কুৎসিত চেহারা ফুটে উঠেছে। যেমনটা আমরা সাম্প্রদায়িকতার নগ্নতা দেখতে পাই ১৯৮৪ সালে দিল্লিতে দাঙ্গা কিংবা ২০০২ সালে গুজরাটে অসংখ্য মানুষ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।”

আলোচনায় তারা আরো বলেন, “মান্টো হচ্ছেন সত্যিকারের চিত্রনাট্যশিল্পী।সাদাত হাসান মান্টোর জন্মশত বর্ষ উপলক্ষে আমরা তার বর্ণাঢ্যময় জীবনের সংক্ষিপ্ত কিছু অংশ আলোচনা করবো।”

মান্টো একাধারে উর্দু ছোট গল্পকার, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচয়িতা ছিলেন। ভারতের বলিউডের আধুনিক চিত্রনাট্যের জনক বলা হয় তাকে।

মান্টো ১৯৩১ সালে অমৃতসরে হিন্দুসভা কলেজে পড়ার সময় ‘তামাশা’ গল্প লেখেন। গল্পটি ১৯১৯ সালে জালিওয়ানাবাগের হত্যাকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে রচিত।

পন্ডিত আব্দুল বারী আলিগের নির্দেশনা অনুযায়ী মান্টো তার জীবনের প্রথমে শুরু করেন ভিক্টর হুগোর ‘দ্য লাস্ট ডেইজ অব এ কনডেম্ড ম্যান’ (একজন কয়েদীর গল্প)এর উদ্যু অনুবাদ লিখে। এরপর তিনি লুধিনিয়া থেকে প্রকাশিত উদ্দু ‘মাসোয়াট’ পত্রিকায় চাকরি নেন। এরপর তিনি পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন। অনুবাদে তার এমন প্রতিভা দেখে পণ্ডিত আব্দুল বারী আলিগ তাকে উৎসাহিত করেন রুশ এবং ফ্রান্স সাহিত্য বেশি করে পড়ার। মান্টোর তখন ২১ বছরের তরুণ।

এরপর মান্টো গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি নেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি পরে শিক্ষকতাও করেন। পরে তিনি সাহিত্য কর্মে আরো বেশি মনোনিবেশ করার জন্য ভারতীয় প্রগতিশীল লেখক সংঘের সদস্য পদ লাভ করেন। সেখানে তিনি নতুন করে আবিস্কার করেন। এবং লিখেন, ‘ইনকিলাব পছন্দ’ যা ১৯৩৫ সালের মার্চ মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। এরপর অবশ্য মান্টোকে পেছন ফেরে তাকাতে হয়নি। কারণ মাত্র ১৯৩৬ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে প্রথম প্রকাশ হয় উর্দু গল্পগ্রন্থ ‘আটিশ পারে।’ এরপর মান্টো আলীগড় ছেড়ে পাড়ি জমান লাহোর পরে বোম্বে।

চলচ্চিত্রের প্রতি ছিল তার অসামান্য ঝোঁক। সেই ঝোঁক থেকে ১৯৩৬ সালে মূলত তার বোম্বে শহরে আসা। কয়েক বছর তিনি বোম্বে কাটান। সেখানে তিনি ‘মুসাফির’ নামক একটি মাসিক চলচ্চিত্র ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন। একই সঙ্গে তিনি শুরু করেন চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখার কাজ।

‘১৯৩৬ সালে হিন্দি ছবি ‘কিষান কানাইয়া’ এবং ১৯৩৯ সালে ‘আপনি নাগরিয়া’র চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখে বিপুল জনপ্রিতা লাভ করেন। সে সঙ্গে অর্থের সমাগমও ঘটে। ১৯৩৯ সালের ২৬ এপ্রিলে বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম সাফিয়া। মান্টো তিন সন্তানের জনক ছিলেন।

আজকের মান্টো দুইভাবে আলোচনায় আসেন। প্রথমে উর্দ্দু ছোট গল্পকার এই ভাগে তিনি পাকিস্তানে আলোচনায় আসেনর। দ্বিতীয় ভাগে চিত্রনাট্যকার এবং সংলাপ রচয়িতা। এইভাগে তিনি বোম্বে তথা ভারতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

১৯৪৮ সালে তিনি যখন ভারত ত্যাগ করেন। তখন অনেকেই তাকে পাকিস্তান ফিরতে নিষেধ করেছিল। তার সেই বন্ধুদের অনেকেই হিন্দু ছিলেন। তাদের মধ্যে অশোক কুমার, নুরজাহান নাসিমসহ প্রভৃতি অভিনেতা-অভিনেত্রী। এছাড়াও বিখ্যাত লেখিকা ইসমত চুগতাইও ছিলেন তার অন্যতম শুভাকাঙ্ক্ষী। জানা যায়, চুগতাইয়ের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল। সে সময় তাদের সম্পর্ক বেশ আলোচনার খোরাক জুগিয়েছিল। অবশ্য শেষপর্যন্ত মান্টোর নিরবতা ও চলে যাওয়া সেই আলোচনায় যবনিকাপাত ঘটে।

দেশ ভাগ হলে মান্টো সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানে লাহোরে ফেরার। ১৯৪৮ সালে বন্ধুদের অনুরোধ সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়ে সস্ত্রীকে নিয়ে জন্মভূমে ফেরেন।

এখানে শুরু হলো মান্টোর তৃতীয় এবং শেষ অধ্যায়। তিনি ভেবেছিলেন। দেশ ভাগ হলে সাম্প্রদায়িক চেতনা শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু খ্যাতি-যশ বোম্বে ফেলে মান্টো পাকিস্তানে মারাত্মক অর্থ কষ্টে পড়েন।

এ সময় অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যাপক ও অনেকটা এলোমেলোভাবে লেখালেখি শুরু করেন যা তাকে খ্যাতিতে কিছুটা কালিমা দেয়।

মাত্র ৪২ বছর বয়সে ৮ জানুয়ারি, ১৯৫৫ তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে একদিকে যেমন পাকিস্তান একজন মানবতাবাদী লেখককে হারায় তেমনি আজো ভারত মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন এমন একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মান্টোকে।

--বার্তা২৪ ডটনেট

0 comments:

Post a Comment