Breaking News
Loading...
Saturday, August 18, 2012

মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একমাত্র জীবিত সদস্য ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি অধ্যাপক কমরেড মোজাফফর আহমদ ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লার দেবিদ্বারের এলাহাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বরেণ্য এই রাজনীতিক উচ্চাশিক্ষা গ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অর্থনীতিতে অনার্স ও এমএ পড়েন। পরে ইউনেস্কোর ডিপ্লোমা লাভ করেন। রাজনীতি শুরু করেন ১৯৩৭ সালে। ১৯৫২ সালে বিভিন্ন সরকারি কলেজসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।
দেশের খ্যাতনামা এই রাজনীতিক ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। পরে ১৯৫৪ সালে চাকরি ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে নামেন। সে বছর সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের শিক্ষামন্ত্রীকে পরাজিত করেন। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব সরকার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও হুলিয়া জারি করে।

তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। তবুও আত্দগোপন অবস্থায় আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করেন। আট বছর আত্দগোপন থাকার পর ১৯৬৬ সালে প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব-পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন। '৬৯ সালে আইয়ুব সরকারবিরোধী আন্দোলনে 'ডাক' গঠনে নেতৃত্ব দেন এবং কারাবরণ করেন। আইয়ুব খান আহূত রাওয়ালপিন্ডির গোলটেবিল বৈঠকে পূর্ব-পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে মূল নেতৃত্বের একজন ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন।

সময়ে তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের নিজস্ব ১৯ হাজার গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার দল গঠনে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। ন্যাপের আজীবন সভাপতি কমরেড মোজাফফর আহমদ স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি এবং প্রগতিশীল শক্তির প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের প্রাক্কালে কারারুদ্ধ হন। পরবর্তীতে কারামুক্তির পর ফের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তিনি আমৃত্যু রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে চান। রাজনৈতিক সংগ্রামের সুবাদে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, সেভিয়েত ইউনিয়ন, বুলগেরিয়া, অস্ট্রিয়া, ভারত, দক্ষিণ ইয়েমেন, লিবিয়া, আফগানিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের বহু দেশ সফর করেন। তার রচিত 'সমাজতন্ত্র কি ও কেন, প্রকৃত গণতন্ত্র তথা সমাজতন্ত্র সম্পর্কে জানার কথা, মার্কসবাদী সমাজতন্ত্র ও কিছু কথা' গ্রন্থগুলো ও বেশকিছু পুস্তিকা বামপন্থি রাজনৈতিক মহলে পাঠ্য হিসেবে বিবেচিত। ঘটনাবহুল বিশ্ব ব্যবস্থায় তার রাজনৈতিক দর্শন ও দূরদর্শিতা বাস্তবানুগ ও সময়োপযোগী বলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে প্রমাণিত।

কমিউনিজমের আদর্শে দীক্ষিত দেশবরেণ্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যাপক কমরেড মোজাফফর আহমদ বর্তমানে গবেষণা করছেন 'নতুন শতাব্দীতে নতুন সভ্যতা জন্ম নিচ্ছে, যার প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে রাশিয়ায় এবং ব্যথা ছড়াচ্ছে অন্যান্য দেশে_ আমাদের দেশেও' বিষয়ে। দেশপ্রেমিক কর্মী সৃষ্টির জন্য নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন উপমহাদেশের একমাত্র রাজনৈতিক শিক্ষায়তন 'সামাজিক বিজ্ঞান পরিষদ'। মোজাফফর আহমদ ব্যক্তিগত জীবনে এক কন্যাসন্তানের জনক। তার সহধর্মিণী মিসেস আমিনা আহমেদ এমপি ন্যাপের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বাংলাদেশ নারী সমিতির সভানেত্রী।

0 comments:

Post a Comment