বিধবা মা অনেক কষ্টে তাঁকে মানুষ করেন। মায়ের প্রতি তাই অপরিসীম ভক্তি ছিল তাঁর। এই মায়ের ডাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে একদিন বিপদসংকুল দামোদর নদ সাঁতরে পার হয়েছিলেন। তৎকালীন সমাজে হিন্দু নারীদের স্বামী মারা গেলে সে আর বিয়ে করতে পারত না। আমৃত্যু নানা দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে মানবেতর জীবন যাপন করতে হতো। বিধবাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য তিনি ব্রিটিশ সরকারকে দিয়ে ১৮৫৬ সালে হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন পাস করান। নিজের ছেলের সঙ্গে এক বিধবার বিয়ে দিয়ে তিনি হিন্দু বিধবাদের বিয়ের পথ প্রশস্ত করেন। বিখ্যাত এই সমাজ সংস্কারক হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তাঁর প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ করে তোলেন। বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক গদ্যকারও তিনি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বীরসিংহ সেই সময় হুগলি জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঈশ্বরচন্দ্রের বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা ভগবতী দেবী। ছোটবেলায় বিদ্যাসাগরদের বেশ অর্থকষ্ট ছিল। তাই বিদ্যাসাগর পরবর্তী জীবনে গরিব মানুষকে ব্যাপকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। অনেকে তাঁকে দয়ার সাগর বলে ডাকত। বিদ্যাসাগর শিক্ষা বিস্তারেও অবদান রেখেছেন। তিনি শিশুপাঠ্য 'বর্ণপরিচয়' নামক যুগান্তকারী গ্রন্থটি রচনা করেন। এই বিখ্যাত মানুষটি ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই কলকাতায় মারা যান।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
Info Post
0 comments:
Post a Comment