Breaking News
Loading...
Tuesday, April 23, 2013

বিশ্বের আর্থিক জগতের অন্যতম রাঘব বোয়াল, অন্যতম ধনী জর্জ সোরোসের জন্ম, আগস্ট ১২, ১৯৩০ সালে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের এক ইহুদি পরিবারে। কৈশোর ও বাল্যকাল কেটেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এ ধনকুবের বিশ্বখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সোরোস ফান্ড ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান। এছাড়া বিশ্বের খ্যাতনামা অলাভজনক জনকল্যাণম‍ূলক সংস্থা ওপেন সোসাইটি ইন্সটিটিউটেরও চেয়ারম্যান তিনি।

তার সম্পদের মূল্য বর্তমান বাজারে ২ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী ধনকুবেরদের তালিকায় তিনি ২২ নম্বরে, তবে নিশ্চিতভাবে আরও কয়েকজনকে ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকেই থাকতেন, যদি না তিনি ৮শ’ কোটি ডলার দানধ্যানে ব্যয় করতেন।

তবে এই খ্যাতনামা সমাজসেবককে নিয়ে দুর্নামও আছে প্রচুর। তাকে অভিহিত করা হয় ‘দি ম্যান হু ব্রোক ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ এই উপাধিতে। তার কারণেই ১৯৯২ সালে বড় ধরণের ধাক্কা খায় ইংল্যান্ডের আর্থিক কার্য্যক্রম নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অব ইংল্যান্ড।

এছাড়া ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অর্থনৈতিক সঙ্কটের জন্যও তাকে দায়ী করে ভুক্তভোগী দেশগুলো। যদিও তিনি এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন। যাই হোক সেসব অন্য কাহিনী আর একদিন আলোচনা করা যাবে।

জর্জ সোরোস ১৯৭৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে মানবাধিকার, জনস্বাস্থ্য এবং শিক্ষার উন্নয়ন বাবদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রায় আটশ’ কোটি ডলার দান করেছেন। এছাড়া হাঙ্গেরির কমিউনিজম থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে উত্তরণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। এখন পর্যন্ত ইউরোপের উচ্চ শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ চাঁদাদাতা হিসেবে তার নাম অগ্রগণ্য।

১৯৪৪ সালে যখন হিটলারের জার্মানি হাঙ্গেরি দখল করে নেয় তখন তিনি মাত্র তের বছরের বালক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে হিটলারের থাবা থেকে হাঙ্গেরি যখন সোভিয়েত ভাল্লুকের নখরে, তখন সোরোস চলে আসেন ইংল্যান্ডে। এখানেই শুরু হয় অভিবাসী এক নিঃসম্বল তরুণের জীবন সংগ্রাম।

গোড়া ইহুদি এক চাচার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন তিনি। ওই চাচা তার জন্য সামান্য কিছু মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন একটি ধর্মীয় সংগঠন থেকে।

তবে দারিদ্র্য দমাতে পারেনি সোরোসকে। তিনি ভর্তি হন লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকসে। ১৯৫২ সালে স্নাতক হন তিনি। পেট চালানোর ‍দ‍ায়ে ছাত্রাবস্থায় রেলওয়ের কুলিগিরি থেকে শুরু করে হোটেলের ওয়েটার, এরকম আরও অনেক কাজ করেছেন তিনি।

স্নাতক হওয়ার পর বহুকষ্টে ইংল্যান্ডের আর্থিক জগতে ঢোকার সুযোগ পান তিনি। কাজ শুরু করেন বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকে। ১৯৫৬ সালে তিনি নিউইয়র্কে চলে আসেন। এখানেও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

তবে জর্জ সোরোস খ্যাত তার দানশীলতার জন্য। সেই ১৯৭০ সাল থেকেই বিভিন্ন খাতে দান করে আসছেন তিনি। বর্ণবাদী শাসনাধীন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে কালো ছাত্রদের শিক্ষার ব্যবস্থার জন্য অনুদান দিতেন তিনি।

ন্যাশনাল সোরোস ফাউন্ডেশন এবং ওপেন সোসাইটি ইন্সটিটিউট স্থাপনের মাধ্যমে পূর্ব ও মধ্য ইউরোপেও বিপুল পরিমাণ অর্থ জনকল্যাণে ব্যয় করেন তিনি।

সোরোসের অধিকাংশ জনকল্যানমূলক কাজের দৃষ্টিভঙ্গি গণতন্ত্র ও সুশাসন । সোরোসের মতে বেশিরভাগ দারিদ্র্যের কারণ অদক্ষ শাসন ব্যবস্থা।

নিউইয়র্কের নিউ স্কুল ফর সোস্যাল রিসার্চ, ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড, ইয়েল ইউনিভার্সিটি এবং করভিনাস ইউনিভার্সিটি অব বুদাপেষ্ট থেকে অনারারি ডক্টরাল ডিগ্রি লাভ করেন সোরোস।

জর্জ বুশের ঘোর বিরোধী বলে পরিচিত এই লোক ২০০৩ সালে ওয়াশিংটন পোস্টকে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, জর্জ বুশকে তার অফিস (প্রেসিডেন্ট পদ) থেকে সরানো তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য, এমনকি এটি তার জন্য জীবন ও মৃত্যুর মত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার।

জর্জ বুশের পুনরায় প্রেসিডেন্ট হওয়া ঠেকাতে বিশাল পরিমাণ অর্থ দান করেন তিনি। এমনকি ঘোষণা দেন নিজের সব অর্থ খরচ করবেন তিনি, যদি তাকে কেউ আশ্বাস দেয় যে প্রেসিডেন্ট বুশ পরাজিত হবেন।

কিছুটা প্রথাবিরোধী এই ধনকুবের অক্যুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলনের অন্যতম ইন্ধনদাতা হিসেবেও প্রচার করেন নিন্দুকরা। এ ব্যাপারে রয়টার্সে ‘হুস বিহাইন্ড ওয়াল স্ট্রিট প্রটেস্ট?’ শিরোনামে একটি লেখাও প্রকাশিত হয়। তবে পরবর্তীতে অবশ্য ওই লেখা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়ে রয়টার্স ছাপায় ‘সোরোস: নট এ ফান্ডার অব ওয়াল স্ট্রিট প্রটেস্ট’।

লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে শিক্ষক কার্ল পপারই জর্জ সোরোসের মননকে প্রভাবিত করেছে বলে ধারণা করা হয়। কার্ল পপার ওপেন সোসাইটির অন্যতম প্রবক্তা।

সোরোস তার ওপেন সোসাইট ইন্সটিটিউটের নামকরণ করেন দুই খণ্ডে সমাপ্ত পপারের লেখা বিখ্যাত বই ‘দি ওপেন সোসাইটি অ্যান্ড ইটস এনিমিস’ থেকে।

মার্চ ১২, ২০১২ এর ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকা অনুযায়ী তিনি পৃথিবীর ২২ তম ধনী ব্যক্তি। এছাড়‍া যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের মধ্যে তার অবস্থান সপ্তম। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে তার সম্পদ ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

0 comments:

Post a Comment