Breaking News
Loading...
Tuesday, April 9, 2013

ইরানের রাজ সিংহাসনের শেষ শাহ বা রাজা, মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি। প্রতাপশালী ও কঠিন শাসন ব্যবস্থার জন্য যে কয়জন রাজা বা রাষ্ট্রনেতা ইতিহাসের পাতায় আজো অম্লান তাদের মধ্যে রেজা শাহ পাহলভি অন্যতম। তার জন্ম ১৯১৯ সালের ২৬ অক্টোবর ইরানের রাজধানী তেহরানে। তিনি ১৯৪১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সিংহাসনে বসেন এবং ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানের অভ্যুত্থানের পূর্ব পর্যন্ত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। হাউস অব পাহলভি সিংহাসনের দ্বিতীয়তম উত্তরাধিকারী ছিলেন। মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি একজন রাজা হিসেবে অনেকগুলো উপাধি লাভ করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য_ হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্ট্রি, শাহানশাহ আরইয়ামেহের, বুজর্গ আরটেস্টারান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন তার পিতা রেজা শাহর হাত ধরে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। তার শাসনামলে ইরানি তেল কোম্পানিগুলো প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ মোসাদ্দেগের নেতৃত্বে জাতীয়করণ করা হয়। সাইরাস দ্য গ্রেটের পারস্য সিংহাসনের ক্ষমতা দখল থেকে ২৫০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তার নেতৃত্ব। শাসক হিসেবে তিনি হোয়াইট রেভ্যুলেশন বা সাদা আন্দোলনের পথিকৃত। এ আন্দোলন ইরানের অর্থনীতি, আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। আর জন্ম হয় বৈশ্বিক ক্ষমতাধর আধুনিক ইরানের। এ ছাড়া এ সময় পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও কাজ করার অধিকার দেওয়া হয়। দেশজুড়ে গড়ে ওঠে একাধিক শিল্প-কারখানা। একজন অসাম্প্রদায়িক মুসলিম শাসক হিসেবে পরিচিত পাওয়ার পর ধীরে ধীরে শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা কমতে থাকে। বিশেষত আধুনিক ইরান গড়ে তোলার মনোবাসনা তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়াও ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে মতের অমিল, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি প্রদান তার গ্রহণযোগ্যতার পথে বড় বাধা হয়ে আসে। অধিকন্তু নানাবিদ অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত, সমাজতান্ত্রিক কমিউনিস্ট তুদেহ পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ইত্যাদি কার্যক্রম তার সঙ্গে দেশের মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর দূরত্ব বাড়তে থাকে। অফিসিয়াল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৭৮ সালে রাজনীতি করার দায়ে ২২০০ জনকে বন্দী করা হয়। সব মিলিয়ে ইরানে তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। আর ১৯৭৯ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইরানে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। ইসলামিক রিপাবলিক হিসেবে ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি ইরানকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, ইরানে ফিরে এলে তার ফাঁসি কার্যকর হবে। এরপর ১৯৮০ সালের ২৭ জুলাই মিসরে অবস্থানকালে ৬০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদ'ত রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আধুনিক ইরানের এ রূপকারকে শেষ বিদায় জানান।



সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

0 comments:

Post a Comment