Breaking News
Loading...
Friday, October 25, 2013

বাংলার মহাবীর মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁ'র ১৫৩৬ মতান্তরে ১৫৩৭ সালের ১৮ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলায় রাজা কালিদাস গজদানী সিংহ নামান্তরে সোলায়মান খাঁর পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তিনি।

তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা উদারমনা শক্তিমান পুরুষ। মননশীল চেতনা ইতিহাস ও নীতিজ্ঞান সত্য ও সুন্দরের মহিমায় সমৃদ্ধ ছিল তাঁর জীবন। কখনও পরাশক্তির কাছে মাথানত করেননি।

বার ভূইয়াদের অন্যতম নেতা মহাবীর ঈশা খাঁ'র  দাম্পত্য জীবনে প্রথমে স্ত্রী সৈয়দা ফাতেমা খাতুন ও দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম স্বর্ণময়ী। সন্তানদের মধ্যে মুসা খাঁ ও মোহম্মদ খাঁ। যাদের নাম আজ বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। রাজা টোডরমল সমগ্র বাংলাদেশকে ১৯ সরকার ও ৬৮২ পরগণায় বিভক্ত করেছিলেন। সরকার বাজুহা ও সরকার সোনারগাঁওয়ে দু'টি সরকারের সৃষ্টি হয়েছিল তাতে সরকার বাজুহা ছিল ৩২ টি পরগনা ও সরকার সোনারগাঁয়ে ছিল ৫২ টি পরগণা। মসনদ ই আলা ঈশা খাঁ সরকার সোনারগাঁও ও সরকার বাজুহার ২২ টি পরগণার এবং ৬ টি দূর্গের আধিপত্য গ্রহণ করেছিলেন। যেগুলোর আয়তন ছিল সিলেট জেলার কতক অংশ পশ্চিমে রাজশাহী বগুড়া ও পাবনা জেলার অংশ, দক্ষিণে ঢাকা শহরের বুড়িগঙ্গা নদীর তীর পর্যন্ত পূর্বে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও ভাটি এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ড. আ. করিমের মতে ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার পূর্ব ভাগ ও ত্রিপুরা রাজ্যের পশ্চিম ভাগ ভাটি রাজ্যের সীমানা। তিনি রাজ্য পরিচালনার জন্য প্রথমে বিবাড়িয়া জেলার সরাইলে প্রাথমিক রাজ্যের বিস্তৃতি করেন। পরে বর্তমান রুপগঞ্জ উপজেলার মাসুমাবাদ গ্রামে কত্রাবো দুর্গের দখল নিয়ে রাজধানী স্থাপন করেন। মোঘল সুবাদার শাহবাজ খান এ দূর্গে আক্রমন চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করেন। এমনকি সেখানকার খিজিরপুর দূর্গটিকেও বিধ্বংস করে দেন তারা। এ জন্য ঈশা খাঁ মেঘনা নদীর তীরে সুবর্ণ গ্রামে (বর্তমান সোনারগাঁও) রাজধানী স্থাপন করে বিদেশীদের হঠাতে ও মুঘলদের নাস্তানুবাদ করতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। ১৫৯৯ সনের ১৬ ডিসেম্বর ঈশা খাঁ'র মৃত্যুর কথা উল্লেখ রয়েছে।

মোঘল বিদ্রোহী বঙ্গবীর মসনদ-ই-আলা ঈশা খা'র স্মৃতি বিজড়িত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শনগুলো কালের গর্বে হারিয়ে যাচ্ছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঈশা খা'র জঙ্গলবাড়ী, সোনারগাঁয়ের রাজধানী, একডালা, কত্রাবো, কদমরসূল, এসারসিন্ধুর ও খিজিরপুর দূর্গ। অজত্ন অবহেলায় লোকচক্ষুর অন্তড়ালে শায়িত রয়েছেন গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুরে মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁ'। তার কবরটিও রয়েছে অজপাড়া গায়ের নীরব স্থানে খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায়। শুধু তাই নয় তাঁর ছেলে বাংলার শাসক (১৫৯৯-১৬১২) মুসা খাঁ'র মাজারটিও ঢাকার কার্জন হলের পার্শ্বে পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। সুবে বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওয়ের অধিপতি বার ভূইয়াদের অন্যতম নেতা মহাবীর ঈশা খাঁ বিচক্ষণ ও দুরদর্শী রাজনীতিবীদ হলেও বর্তমান রাজনীতিবীদসহ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে কারও কোনো মাথা ব্যাথা নেই। ঈশা খার ইতিহাস ঐতিহ্য ও তাঁর স্মৃতি বিজড়িত স্থান গুলো সংরক্ষণের নেই কোনো উদ্যোগ। ফলে আগামী প্রজন্ম তাঁর বীরত্বগাঁথা ইতিহাস সম্পর্কে জানার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

0 comments:

Post a Comment