লোকসঙ্গীতের কিংবদন্তী শিল্পী পিট সিগার ১৯১৯ সালের ৩ মে জন্মগ্রহণ করেন। ‘উই শেল ওভার কাম’ খ্যাত এই শিল্পী ‘হোয়্যার হেভ অল দ্য ফ্লাওয়ার্স গন’ গানটিরও সহ-গীতিকার হিসেবে বিশেষ পরিচিত। ১৯৪৮ সালে সর্বপ্রথম সবার নজরে আসেন সিগার এবং তারপর টানা ছয় দশক ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ধরে রাখেন নিজেকে। পঞ্চাশের দশকে বহু ফোক সঙ্গীত পুনরুদ্ধার করেছিলেন সিগার। পুরনো পুঁথি ঘেঁটে গাওয়া গান উই শ্যাল ওভারকাম সামাজিক অধিকারের দাবিতে গাওয়া অ্যান্থেমের মর্যাদা পেয়েছে।
১৯৪০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে আমেরিকার শ্রমিক আন্দোলন, সামাজিক অধিকারের দাবিতে লড়াই উঠে এসেছে পিটের গানের ভাবনায়। ১৯৫০ সালে বামপন্থীদের পক্ষে লেবার র্যালিতে বিদ্রোহ সঙ্গীত গাওয়ার কারণে মার্কিন সরকার তাঁকে কালো তালিকাভুক্ত করে।
তখন টেলিভিশনের চাকরি ফিরিয়ে দিয়ে পিট সীগার সঙ্গীতকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় কর্ম ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে বেড়ান এবং তাঁর সঙ্গীত ছড়িয়ে দিতে থাকেন। কংগ্রেসকে ঘৃণার দায়ে সিগারকে অভিযুক্ত করা হলেও উচ্চ আদালতে আপিলের পর তাঁকে রেহাই দেয়া হয়।
১৯৬০ সালে অ্যান্টি-ভিয়েতনাম র্যালি, ১৯৭০ সালে যুদ্ধবিরোধী ও পরিবেশ সংক্রান্ত ক্যাম্পেনেও গানের মাধ্যমেই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন পিট।
১৯৬০ সালের শেষের দিকে তিনি আবার টিভিতে ফিরে আসেন কিন্তু ভিয়েতনাম যুদ্ধের ব্যাপারে একটি প্রতিবাদি গানের জন্য তিনি চাকরিচ্যূত হন। বায়ার্ডের গাওয়া সিগার রচিত ‘টার্ন টার্ন টার্ন’ গানটি ১৯৬৫ সালে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসে। গানটির সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন ডলি পার্টন এবং ক্রিস ডি বার্গ।
১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত তাঁর একটি পূণর্মিলনী কনসার্টের ওপর একটি ডকুমেন্টারি তৈরি হয়, যেখানে ১৯৪৬ সালে গাওয়া ‘মাই বানজো’গানটাও স্থান পায়।
২০০৯ সালে বারাক ওবামার’র প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর গালায় তিনি একটি কনসার্টে গান করেন। বারাক ওবামার পূর্বসূরী বিল ক্লিনটন সিগারকে ‘একজন শিল্পী যিনি এমনভাবে গাইতে পারেন, যেন তিনি সেসব দেখেছেন’ বলে সম্মান জানান।
সিগারের স্ত্রী চলচিত্র নির্মাতা তোসি তাদের সংসারে তিন সন্তান রেখে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে ৯১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
‘পিট’ শিরোনামের অ্যালবামটার জন্য তিনি ১৯৯৭ সালে গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জয় করেন। এই গায়ক-গীতিকার প্রথমদিকে উডি গুথরির সাথে গান করেন এবং পরবর্তীতে ব্রুস স্প্রিংস্টিন ও জন বিজের সাথেও কাজ করেন। ২০০৬ সালে স্প্রিংস্টিন সিগারের নিজের গাওয়া একটি গান রেকর্ড করেন।
বার্ধক্যজনিত রোগে ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি ৯৪ বছর বয়সে নিউইয়র্ক হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
0 comments:
Post a Comment