জাপানের প্রথম নারী ঔপন্যাসিক এবং কবি মুরাসাকি সিকিবু। জন্ম আন্দাজ ৯৭৩ খ্রীস্টাব্দ। হেইয়ান আমলে রাজদরবারের কর্মচারী ছিলেন। মুরাসাকি শিকিবু তার ছদ্মনাম। তার আসল নাম এখনো অজ্ঞাতই রয়ে গিয়েছে, যদিও কোন কোন বিশেষজ্ঞের মতে তার নাম ছিল সম্ভবত তাকাকো। তার ডায়েরী থেকে জানা যায় যে 'মুরাসাকি' নামটি তাকে রাজদরবারে ডাকনাম হিসেবে দেয়া হয়। 'মুরাসাকি' ছিল তারই লেখা গেঞ্জির উপাখ্যান-এর একটি চরিত্রের নাম। 'মুরাসাকি' শব্দটির মানে 'বেগুনী। আর 'শিকিবু' সরকারী আমলাতন্ত্রে তার বাবার পদস্থলের নাম।মুরাসাকি শৈশবে তার মাকে হারান। হেইয়ান আমলে জাপানের প্রথা ছিল যে স্বামী-স্ত্রী আলাদা বসবাস করবে এবং সন্তান-সন্ততিদের বড় করে তোলার দায়িত্ব বর্তাবে মা এবং মাতৃপরিবারের উপর। মুরাসাকির বাবা তামেতোকি ছিলেন রাজদরবারের পন্ডিত। তিনি প্রচলিত প্রথা ভঙ্গ করে তার কন্যাকে নিজের কাছে রেখেই বড় করেন। শুধু তাই নয়, তিনি মুরাসাকি-কে পুত্র সন্তানের শিক্ষা দেন। সে আমলে ছেলেরা চীনা ভাষায় শিক্ষা লাভ করতো, কারন চীনা ছিল রাজদরবাররের আনুষ্ঠানিক ভাষা। অন্যদিকে মেয়েরা শিখতো জাপানী কানা বর্ণমালা এবং কবিতা। তামেতোকি তার কন্যার মেধা ও বুদ্ধিমতা দেখে আক্ষেপ করেন কেন মুরাসাকি ছেলে হয়ে জন্মায়নি।
রাজদরবারে মুরাসাকি সম্রাজ্ঞী আকিকোর মহিলা সঙ্গিনী (lady-in-waiting) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আজ থেকে হাজার বছর আগে অর্থাৎ ১০০৭ সালে প্রথম পূর্ণাঙ্গ একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়, আর এটি লেখেন সেই(Murasaki Shikibu) নারী! সেই আমলের জাপানের এক আদালতে কর্মরতা নারীর হাতে এ গ্রন্থটি রচিত হয়, যা বিশ্বের প্রথম উপন্যাস হিসেবে ধরা হয়। এ গ্রন্থটিতে চরিত্র ছিল মোট ৩৫০টি আর ছিল অসংখ্য আবেগময় কবিতা। গেঞ্জির উপাখ্যান বা ‘টেল অব গেনজি’(The Tale of Genji)- নামে এ উপন্যাসটিতে এক রাজপুত্রের ভালোবাসার কাহিনী বিধৃত হয়েছে; এ রাজপুত্র অসংখ্য নারীর সঙ্গ পছন্দ করতেন। উপন্যাসটি রচনা। বিশেষজ্ঞদের মতে তিনটি গ্রন্থ মুরাসাকির লেখা - গেঞ্জির উপাখ্যান, মুরাসাকির ডায়েরী, এবং মুরাসাকির সংকলন। এর মধ্যে প্রথমোক্তটি নিঃসন্দেহে তার শ্রেষ্ঠ রচনা। শেষোক্তটি একটি কবিতার বই। মুরাসাকির লেখা ১২৮টি কবিতা তার মৃত্যুর পর এই বইতে সংকলিত আকারে প্রকাশ পায়।তার মৃত্যুর বছর সম্পর্কে আজও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয় এটি ১০১৪ বা ১০২৫ খ্রীস্টাব্দ।
মুরাসাকি সিকিবু
Info Post
0 comments:
Post a Comment