Breaking News
Loading...
Monday, April 5, 2010

ভারতবর্ষে তখন ব্রিটিশদের রাজত্ব। তখনও আইন পাস হয়নি। ঠিক এমন এক সময় জন্ম হয় রমা দাশগুপ্তের। বাংলাদেশের পাবনাতে ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল জন্ম হয় করুণাময় দাশগুপ্তের ঘরে; মাতা ইন্দ্রানী দাশগুপ্তের তৃতীয় সন্তান রমা দাশগুপ্ত। এই রমা দাশগুপ্ত হলেন ভুবন জয়ী নায়িকা সুচিত্রা সেন। পরিবারের পাঁচ ভাইবোনের তৃতীয় ছিলেন। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন পাবনার স্থানীয় হাইস্কুলের হেড মাস্টার। মেয়েকে পড়ালেখা করাতে পারেননি। ইচ্ছা ছিল মেয়ে রমাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি একজন স্কুল শিক্ষকের। সে সময় সুচিত্রা সেন পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। ১৯৪৭-এর দশকে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় পরিবারের অন্য সবার সাথে সুচিত্রা সেনও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমান। পরে ভারতের একজন প্রখ্যাত শিল্পপতির সন্তান দিবানাথ সেনকে বিয়েও করেন সুচিত্রা। আর এখানেই ১৯৬০ সালে তার মেয়ে মুনমুন সেনের জন্ম হয়।
নায়িকা হিসেবে সুচিত্রা সেনের আত্মপ্রকাশ পঞ্চাশের দশক থেকে ১৯৫২ সালে। এ বছর ‘শেষ কোথায়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবনের শুরু হয়। যদিও পরবর্তীকালের সাড়া জাগানো এই অভিনেত্রীর শুরুটা কিন্তু মোটেও ভালো ছিল না। সফল কিংবা ব্যর্থ হওয়া তো দূরে থাক তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘শেষ কোথায়’ সে সময় আলোর মুখ দেখতেই ব্যর্থ হয়। ‘শেষ কোথায়’ (১৯৫২) নামে ছবিতে প্রথম অভিনয় করলেও ছবিটি মুক্তি পায়নি। একই সময়ে ‘সাত নম্বর কয়েদী’ (১৯৫৩) ও ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য’ (১৯৫৩) ছবিতে অভিনয় করলেও সুচিত্রা সেন তুমুল জনপ্রিয়তা পান ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ (১৯৫৩) ছবিতে। উত্তম কুমারের সঙ্গে প্রথম জুটিবদ্ধ হন এ ছবিতে। অভিনয়ের সিংহ ভাগ ছবিতে জুটিবদ্ধ হয়েছেন উত্তম কুমারের সঙ্গে। এ জুটির অভিনীত প্রত্যেকটি ছবি বক্স অফিসে হিট। উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে: সাদানন্দের মেলা (১৯৫৪), অগ্নি পরীক্ষা (১৯৫৪), ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪), গৃহে প্রবেশ (১৯৫৪), মরণের পরে (১৯৫৪), অন্নুপুরাণের মন্দির (১৯৫৪), শাপমোচন (১৯৫৫), সবার উপরে (১৯৫৫), সাঝের প্রদীপ (১৯৫৫), সাগরিকা (১৯৫৬), ত্রিজামা (১৯৫৬), শিল্পী (১৯৫৬), একটি রাত (১৯৫৬), হারানো সুর (১৯৫৭), পথে হলো দেখা (১৯৫৭), জীবন তৃষ্ণা (১৯৫৭), চন্দ্রনাথ (১৯৫৭), রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮), ইন্দ্রানী (১৯৫৮), চাওয়া পাওয়া (১৯৫৯), শপ্তপদী (১৯৬১), সাথী হারা (১৯৬১), গৃহদাহ (১৯৬৭), নবরাগ (১৯৭১), আলো আমার আলো (১৯৭২), প্রিয় বান্ধবী (১৯৭৫) ইত্যাদি। উত্তম ছাড়াও সুচিত্রা আরো অনেক নায়কের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়েছিলেন। এর মধ্যে দীলিপ কুমারের সঙ্গে দেবদাস (১৯৫৫) ছবিতে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এটিই ছিল সুচিত্রা অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি। তিনি ভারতীয় প্রথম নায়িকা যিনি প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার পান। ১৯৬৩ সালে মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার লাভ করেন। সুচিত্রা সেন সর্বশেষ অভিনীত ছবি ‘প্রণয়পাশা’। মঙ্গল চক্রবর্তী পরিচালিত ছবিটি ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায়। সুচিত্রা সেনের বিপরীতে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

স্বামী দীবানাথ সেন ১৯৭০ সালে মারা যান। সুচিত্রা সেন মানসিকভাবে ধাক্কা খান। স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর অভিনয় চালিয়ে গেলেও উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর তিনি স্বেচ্ছাবাসর নেন চলচ্চিত্র থেকে। সেই থেকে সুচিত্রা সেন লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান আর জনসম্মুখে আসেননি। এমনকি ভারতের অস্কার খ্যাত পুরস্কার ‘দাদা সাহেব ফালকে’ অ্যাওয়ার্ড সম্মানে ভূষিত করা হলেও সেই দুর্লভ পুরস্কারটিও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। জীবন সায়াহ্নে অবরুদ্ধ বাড়িতে একাকীত্ব সময় কাটাচ্ছেন। আমৃত্যু তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে কি কারণে তার এই অভিমান তা আজো জানা যায়নি। আর সকলের অন্তরালে থেকে দর্শকের স্মৃতির মণিকোঠায় বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালী যুগের প্রতিনিধি হয়েই বেঁচে আছেন সুচিত্রা সেন।
দীর্ঘ ২৫ বছরের অভিনয় জীবনে(১৯৫৩-১৯৭৩) সুচিত্রা অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ছিল ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪), অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪), শাপমোচন (১৯৫৫), সবার উপরে (১৯৫৫), সাগরিকা (১৯৫৬), পথে হল দেরী (১৯৫৭), হারানো সুর (১৯৫৭), দীপ জ্বেলে যাই (১৯৫৯), সপ্তপদী (১৯৬১), বিপাশা (১৯৬২), চাওয়া-পাওয়া, সাত-পাকে বাঁধা (১৯৬৩), হসপিটাল, শিল্পী (১৯৬৫), ইন্দ্রানী (১৯৫৮), রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮), সূর্য তোরন (১৯৫৮), উত্তর ফাল্গুনি (১৯৬৩), গৃহদাহ (১৯৬৭), ফরিয়াদ, দেবী চৌধুরানী (১৯৭৪), দত্তা (১৯৭৬), প্রিয়বান্ধবী প্রভৃতি।

1 comments:

  1. "১৯৬০-এর দশকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমান। পরে ভারতে দিবানাথ সেনকে বিয়ে করেন। আর ১৯৪৭ সালে তার মেয়ে মুনমুন সেনের জন্ম হয়।" এই তথ্যটি বিভ্রান্তিমূলক। অর্থাৎ ১৯৬০ এর পরে বিবাহ করলে ১৯৪৭ এ কি করে সন্তান জন্মগ্রহণ হয়?

    ReplyDelete