পূর্ণেন্দু দস্তিদার। কথাশিল্পী ও রাজনীতিবিদ। ১৯৩০ সালের মাস্টার দা সূর্যসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত যুব বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ কলকাতায় গ্রেফতার হন। জীবনের দীর্ঘ সময় তাকে কাটাতে হয় জেলে। আর এখানেই তিনি রচনা করেন তার বেশির ভাগ গ্রন্থ। একজন সমাজমনাস্ক লেখক হিসেবে তিনি বিশেষভাবে খ্যাত।
পূর্ণেন্দু দস্তিদারের জন্ম ১৯০৯ সালের ২০ জুন। চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে। তার পিতা চন্দ্রকুমার দস্তিদার ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের স্নাতক ও চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী আর মাতার নাম কুমুদিনী দস্তিদার, স্ত্রী শান্তি দস্তিদার। ১৯২৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ১৯২৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অত:পর যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হন। এ সময় যুব বিদ্রোহে (চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন) এ অংশ নিয়ে ১৯৩০ সালের ডিসেম্বরে গ্রেফতার হন। বন্দিজীবন দীর্ঘায়িত হতে শুরু করলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া পরিত্যাগ করেন। ১৯৩৪ সালে দেউলি জেল থেকে ডিস্টিংশনসহ বি.এ.পাস করেন। এরপর বি.এল. ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৪০ সালে জেল থেকে মুক্তি পান। অত:পর চট্টগ্রাম আদালতে আইন ব্যবসায় যোগদান ও কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ নবগঠিত পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ব পাকিস্তান শাখার সদস্য নিযুক্ত হন। একই বছর পুনরায় গ্রেফতার হন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আটক অবস্থাতেই চট্টগ্রাম জেলার হিন্দু আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস প্রার্থী বিনোদবিহারী দত্তকে পরাজিত করে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৫৫ সালের ৯ জুন জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। পূর্ববঙ্গ পরিষদে তৎকর্তৃক চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের (১৮ এপ্রিল ১৯৩০) স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি ব্যবস্থাপক সভায় গৃহীত হয় ১৯৫৬ সালে। ১৯৫৭ সালের ২৬ জুলাই মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হলে তাতে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর দেশে সামরিক আইন জারি করা হলে গ্রেফতার হন। ১৯৬২ সালে মুক্তি লাভ করেন। ঐ বছর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির চট্টগ্রাম শহর কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে আরেকবার গ্রেফতার হন। ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গণ-আন্দোলনের চাপে মুক্তি লাভ করেন। এবং মস্কোপন্থী ন্যাপের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে ন্যাপের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সুলতান আহমদের কাছে পরাজিত হন।
প্রকাশিত গ্রন্থ: কবিয়াল রমেশ শীল (১৯৬৩), স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম (১৩৭৪), বীরকন্যা প্রীতিলতা (১৩৭৭)। অনূদিত গ্রন্থ: শেকভের গল্প (১৯৭০), মোপাশাঁর গল্প।
১৯৭১ সালের ৯ মে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ভারত গমনের পথে ডিজিটলঙ-এ পথশ্রমে ক্লান্ত অবস্থায় পরলোক গমন করেন।
0 comments:
Post a Comment