Breaking News
Loading...
Monday, May 24, 2010

শাহ আবদুল করিম বন্ধে মায়া লাগাইছে, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, আমার বন্ধুয়া বিহনে গো সয়েনা পরানে গো একেলা ঘরে থাকতে পারি না, বসন্ত বাতাসে সইগো বসন্ত বাতাসে, গাড়ি চলে না চলে না, কোন মিস্ত্রি নাও বানাইছে কেমন দেখা যায়, আইলা না আইলা নারে বন্ধু, মানুষ হয়ে তালাশ করলে মানুষও পাওয়া যায়? সখী কুঞ্জ সাজাওগো আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে, রঙের দুনিয়া তোরে চাই না, কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া আমি ফুল বন্ধু ফুলের ভ্রমরসহ অসংখ্য গানের জনক বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম ছিলেন অসাম্প্রদায়িকতার মূর্ত প্রতীক। গানে গানে সারা জীবন মানুষের কল্যাণের কথাই ভেবেছেন তিনি। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার কালনী নদীর তীরবর্তী উজানধল গ্রামে বাবা কৃষক ইব্রাহিম আলী ও মা নাইওরজান বিবির ঘরে বাউফল করিমের জন্ম। দরিদ্রতার কশাঘাতে দুর্বিষহ বাবা ইব্রাহিমের সংসার, তাই বিদ্যালয়ের বারান্দায় পা না রেখেই দুই টাকা মাসিক মাইনে গরু রাখালের চাকরি নেন গ্রামের গৃহস্থ ঘরে। যখন তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে বর্ণমালা শেখার কথা, সেই বয়সে এক অক্ষরজ্ঞানীহীন বালক হাতে একতারা নিয়ে ভরামের বিশাল হাওরে সবুজ মাঠে গরু চরানোর ফাঁকে হিজল গাছের নিচে বসে গানে গানে খোঁজ ছিল তার স ষ্টাকে। বয়স যখন ১২/১৩ তখন গ্রামে খোলা হয় নৈশ বিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হন অক্ষরজ্ঞান অর্জনের জন্য, কিন্তু ক'দিন পর বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়।রাখাল বালক শাহ আবদুল করিমের গোষ্ঠী সম্পর্কীয় এক দাদা তখন একতারা বাজিয়ে গান করতেন। করিম বিমুগ্ধ হতেন একতারার পাগল করা সুরে। আস্তে আস্তে একতারার সঙ্গে তার গড়ে উঠে নিবিড় মেলবন্ধন। বাড়ির পাশের কালনী নদীর সঙ্গে যেন গড়ে উঠে গভীর মিতালী। তারপর এক এক করে তিনি লিখেছেন_ আফতাবসংগীত (১৯৪৮), গণসংগীত (১৯৫৭), কালনীর ঢেউ (১৯৮১), ধলমেলা (১৯৯০), ভাটির চিঠি (১৯৯৮), কালনীর কূলে (২০০১)। তিনি পেয়েছেন রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার (২০০০), একুশে পদক (২০০১), লেবাক অ্যাওয়ার্ড (২০০৩), মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা (২০০৪), চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড আজীবন সম্মাননা (২০০৫), বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননা (২০০৬) সহ প্রায় আড়াই শতাধিক পদক।মানুষের খোঁজেই শাহ আবদুল করিম ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশ-বিদেশ। নিজের গানের বার্তা নিয়ে ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গেছেন তিনি। গান গাইতে লন্ডন সফরে গেছেন ৩ বার। এর মধ্যে ১৯৬৪ সালে প্রথমবার যান, দ্বিতীয় বার গেছেন ১৯৮৫ সালে আর ২০০৭ সালে ২৮ জুন তিনি তৃতীয় ও শেষবার লন্ডন যান ভক্তদের আমন্ত্রণে। কিন্তু সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ায় লন্ডন হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়। চিকিৎসা শেষে ২৮ জুলাই তিনি দেশে ফেরেন। শাহ আবদুল করিমের নিজের কণ্ঠে গাওয়া কোনো অ্যালবাম নেই বাজারে। তবে তার গান নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা অ্যালবাম বেরিয়েছে। এর মধ্যে আছে কৃষ্ণ, মায়া, রঙ্গিলা, মানব জনম, পাইলাম না ভালোবাসা, বন্ধু আই ও আইও, প্রভৃতি। এসব অ্যালবামে বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পীরা কণ্ঠ দিয়েছেন। বাংলাভাষী মানুষের কাছে সবিশেষ জনপ্রিয় এবং হৃদয়ের মর্মমূলে স্থান লাভ করা বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তার কাজে কথা ও সুরের সুধারসে রেখে গেছেন মৃত্যুহীন প্রাণ।

0 comments:

Post a Comment