বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুভাষ দত্ত জন্মগ্রহন করেন ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরে। তার বাবা ছিলেন বগুড়ার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল ১৯৪৬ সালে। কিন্তু উপমহাদেশ ভাগাভাগির কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে ১৯৪৮ সালে দিনাজপুর মহারাজা স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৩ সালের দিকে তিনি দিনাজপুর ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। এসেই পোস্টার ডিজাইনারের কাজ শুরু করেন। দিনাজপুরে থাকাকালীন সুভাষ দত্ত বহু নাটকে অভিনয় করেন। সেই থেকে মাথায় শখ চেপে বসল কী করে অভিনেতা হওয়া যায়।
সুভাষ দত্ত এক সময় কমেডিয়ান হিসেবে নাম করেছিলেন। ‘এ দেশ তোমার আমার’ ছবিতে কানুলাল চরিত্র দিয়েই তার অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে। সুভাষ দত্ত কথায় কথায় জানিয়েছিলেন, আমার অভিনীত প্রথম ছবি ‘এ দেশ তোমার আমার’-এর শুটিং হয়েছিল ঢাকার কমলাপুর, বাড্ডা ছাড়াও করাচিতে। নর্তকি পান্না নাচবে। আমি ও রহমান মদ পান করব। মদ তো আর নয়, কোকাকোলা পান করতে হবে। আমি তো একটানেই পান করে বসলাম। এ জন্য সবার কাছে আমি হাসির পাত্র হলাম। ছবিটা রিলিজের দিন রূপমহলে ফেললাম। এখানে একটা মজার ঘটনা ঘটল। দর্শকরা আমাকে দেখে চিনে ফেলল। কী আর উপায়! সবার দৃষ্টি আমার দিকে। সবাই এক বাক্যে বলল, দাঁড়ান দাঁড়ান আপনাকে দেখি। এদিকে সেকেন্ড শো শুরু হলো। দর্শকরা যেতে চায় না। কী আর করা—এক দৌড়ে সটকে পড়লাম। কবরীর প্রথম নায়ক ছিলেন এই সুভাষ দত্ত। সুভাষ দত্ত অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে—হারানো দিন (১৯৬১, নায়িকা রেখা), সোনার কাজল (১৯৬২, নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তা), চান্দা (১৯৬২, নায়িকা নার্গিস মুর্শেদা), নতুন সুর (১৯৬২), তালাশ (১৯৬৩, নায়িকা নার্গিস মুর্শেদা), সুতরাং (১৯৬৪, নায়িকা কবরী), কাজল (১৯৬৫, নায়িকা আনোয়ারা জামাল), সাগর (১৯৬৫), নদী ও নারী (১৯৬৫), কাগজের নৌকা (১৯৬৬), ভাইয়া (১৯৬৬), আয়না ও অবশিষ্ট (১৯৬৭, নায়িকা আতিয়া), আবির্ভাব (১৯৬৮, নায়িকা জয়শ্রী), আলিঙ্গন (১৯৬৯, নায়িকা মন্দিরা), পালাবদল (১৯৬৯, নায়িকা পল্লবী) প্রভৃতি।
সুভাষ দত্তের প্রথম পরিচালিত ছবি ‘সুতরাং’। এরপর তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে আয়না ও অবশিষ্ট, আবির্ভাব, আলিঙ্গন, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, আকাঙ্ক্ষা, বিনিময়, কাগজের নৌকা, বলাকা মন, বসুন্ধরা, ডুমুরের ফুল, সোহাগ মিলন, সবুজ সাথী, নাজমা, সকাল সন্ধ্যা, ফুলশয্যা, স্বামী-স্ত্রী, আগমন ও আমার ছেলে প্রভৃতি।
কৌতুক অভিনেতা হিসেবেও সুভাষ দত্ত এক সময় নাম করেন। এর মধ্যে ‘আখেরী স্টেশন’ ছবিটির কথা এতদিনে হয়তো সেদিনের দর্শকরা মনে রেখেছেন। এ ছবিতে তিনি হাতে ক্যাটলি নিয়ে স্টেশনে স্টেশনে গরম চা বিক্রি করতেন। তখন বিকৃত সুরে বলতেন, ‘চা গরম, গরম চা...।’ এ সংলাপ ছিল দর্শকের মুখে মুখে। সেটা ছিল ১৯৬৫-৬৬ সালের কথা। তখন সুভাষ দত্ত কোথাও বের হলে দর্শক তাকে দেখে বলে উঠত—‘চা গরম, গরম চা’। কৌতুক অভিনয় গুণে ও সুস্থ ছবি নির্মাণ করে সুভাষ দত্ত জীবদ্দশায় হয়ে গেলেন কিংবদন্তি।
সুভাষ দত্ত
Info Post
0 comments:
Post a Comment